1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিউনিশিয়ার ভবিষ্যৎ

উটে শেফার/এসি২৯ এপ্রিল ২০১৩

তিউনিশিয়ার আন্দোলনকারীরা আরব বিপ্লব শুরু হওয়ার সময় গণতন্ত্র দাবি করেননি৷ তারা চেয়েছিলেন ‘‘রুটি’’, ‘‘মর্যাদা’’, ‘‘ন্যায়বিচার’’৷ স্বৈরাচারীর অপসারণের পর দেশের রাজনৈতিক পথ ও পন্থা নিয়ে বিরোধ চলেছে সজোরে৷

ছবি: Fethi Belaid/AFP/Getty Images

আদেল আর কোনো পথ খুঁজে পায়নি৷ ২০১৩ সালের ১৩ই মার্চ দিনের শুরুতেই এই ২৭ বছর বয়সের যুবক রাজধানী তিউনিসের বিপণীসমৃদ্ধ রাজপথে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে মৃত্যুবরণ করেন৷ অগ্নিদগ্ধ অবস্থাতেই সে নাকি চিৎকার করে বলেছিল: ‘‘এই দেখো! এই হলো তিউনিশিয়ার যুবসমাজ, যারা রাস্তায় সিগারেট বেচে৷ এই হলো বেকারত্ব৷''

বেকারত্ব, দারিদ্র্য, আশাহীনতার বিরুদ্ধে চিৎকার৷ দু'বছর আগে বিপ্লব শুরু হওয়া যাবৎ যা কিছু করা হয়নি, যা কিছু অকৃত থেকে গেছে, তারই পরিচয় বহন করছে আদেলের এই মরিয়া, আত্মবিনাশী পদক্ষেপ৷ সেই পদক্ষেপও যেন ইতিহাসের প্রতিধ্বনি, কেননা ২০১১ সালের আরব বিপ্লব শুরু হয়েছিল আরেক তিউনিশীয়'র অগ্নিতে আত্মাহুতির ফলে৷ তার নাম ছিল মোহামেদ বুয়াজিজি, গ্রাম থেকে আসা এক সবজি বিক্রেতা৷ বুয়াজিজির মতোই আদেল খেদ্রিও ছিল গাঁয়ের মানুষ৷

মোহামেদ বুয়াজিজি্’র অগ্নি আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে আরব বসন্তের শুরু হয়ছবি: APImages

সোনার ফসলের প্রতীক্ষায়

আদেলের বাড়ি ছিল উত্তর তিউনিশিয়ার সুক জেমা গ্রামে৷ সেখানে তিউনিসের নতুন সরকার কিংবা সাংবিধানিক সম্মেলনের কোনোরকম সিদ্ধান্ত থেকে কিছুমাত্র ফললাভ হয়নি৷ বলতে কি, সারা দেশ জুড়ে একই চিত্র৷ আদেল খেদ্রির পরিবারের মতো মোট ত্রিশ লাখ তিউনিশীয় – দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ – দিন আনে, দিন খায়৷ ঘুপসি, অন্ধকার ঝুপড়িগুলোতে শীতে ঘর গরম রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ রাষ্ট্র-রাজনীতিতে তাদের কিছু আসে যায় না৷ কিন্তু আদেলের মৃত্যুর পর এই দীন-হীন-বঞ্চিতদের রোষ যেন ফুটে বেরোয়: সমাধি অনুষ্ঠান পরিণত হয় গণপ্রতিবাদে৷ এমনকি সরকারের পদত্যাগের দাবিও ধ্বনিত হয়৷

কদিন আগে এই আদেল খেদ্রি রাজপথে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে মৃত্যুবরণ করেনছবি: picture-alliance/dpa

সাবেক শাসক বেন আলির আমলেই দেশের রাজনীতি এই দরিদ্র জনতার দিকে ফিরেও তাকায়নি৷ বিদ্রোহের পর দু'বছর কেটে গেছে, এখনও তাদের দাবি পূরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ আদেলের চাচাতো ভাই আহমেদ খাজরির সহজ ব্যাখ্যা হলো: ‘‘রাজনীতিতে চলে শুধু বিতর্ক আর ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি৷'' গোড়ায় যারা বিদ্রোহের জন্য পথে নেমেছিল, তারাই আজ বলে: ‘‘ওরা আমাদের বিপ্লবকে চুরি করেছে৷''

বিদেশ থেকে আসছে অর্থ, ধর্মাদর্শ

তিউনিশিয়ায় ক্ষমতার লড়াই চলেছে৷ কিন্তু সমাজ চলেছে কোথায়? ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন কি সম্ভব হবে? নাকি তিউনিশিয়াও কোনো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের মতো শরিয়া আইনের দিকে এগোচ্ছে?

সালাফিরা ভয় দেখাতেও ভয় পায় নাছবি: Reuters

বিপ্লবই সোফিয়ানে চৌরাবিকে ব্লগার করে তোলে৷ দেশের অধিকাংশ মানুষ রক্ষণশীল ইসলামের অনুসারী একটি রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা কামনা করে, বলে তাঁর ধারণা৷ এমন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা বিদেশ থেকে প্রচুর অর্থসাহায্য পাবে – যেমন সৌদি আরব ও কাতারের মতো রক্ষণশীল সুন্নি ইসলামের দেশ থেকে৷

সাংবাদিক, লেখক সালাহিদীন আল-জুর্শি বলেন, ‘‘বিপ্লবের পর তিউনিশিয়ায় রাষ্ট্র খুব দুর্বল ছিল – আজও রয়েছে৷ বাইরের শক্তিরা এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দেশে চরমপন্থিদের আস্কারা দিচ্ছে ও মধ্যমপন্থিদের দাবানোর চেষ্টা করছে৷'' বিপ্লবের পরই উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে অর্থ ও ইমামদের আসা শুরু হয়ে যায়৷

সালাফিরা ভয় দেখাতেও ভয় পায় না

‘‘আগে সাংবাদিকদের স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের খামখেয়ালিপনা সহ্য করতে হতো৷ আজ আমরা সমাজের তরফ থেকে নতুন এক ধরনের জুলুম দেখতে পাচ্ছি,'' বলেছেন সোফিয়ানে চৌরাবি৷ তিউনিসের বিভিন্ন এলাকায় মহিলারা ইসলাম-সম্মত জামাকাপড় না পরলে, অথবা তরুণ কি যুবকরা মদ্যপান করলে, ইসলামপন্থিদের দল তাদের ভীতিপ্রদর্শন করে৷

ব্লগার সোফিয়ানে চৌরাবি মনে করেন বেন আলির পতনের পর থেকেই সালাফিরা প্রকাশ্যে বেরতে শুরু করছেছবি: DW

তিউনিস বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী-পুরুষের সমানাধিকার ও আন্তঃ-সংস্কৃতি গবেষণার অধ্যাপিকা আমেল গ্রামি নিজেই তা অভিজ্ঞতা করেছেন৷ টেলিফোনে তাঁকে প্রায়ই হত্যার গুমকি দেওয়া হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় চলেছে তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটনা৷ গ্রামি ইসলামের আধুনিক ব্যাখ্যা করেন, তিনি একটি উদারপন্থি সমাজব্যবস্থার সপক্ষে৷ ‘‘দাড়িওয়ালাদের তা-তেই আপত্তি৷ তারা আমাকে জিওনিস্ট বলে, খ্রিষ্টান মিশনারী বলে৷'' ইতিমধ্যে তিনি শহরের অনেক এলাকা বর্জন করে চলেন, কেননা তিনি সেখানে নিজেকে নিরাপদ বলে মনে করেন না৷

বেন আলির পতনের পর থেকেই সালাফিরা প্রকাশ্যে বেরতে শুরু করছে, বলে সোফিয়ানে মনে করেন৷ বিভিন্ন গোষ্ঠী মিলিয়ে এখন হয়তো তারা দশ কি বিশ হাজার৷ তাদের মধ্যে সবাই-এর মনোভাব হিংসাত্মক না হলেও, আল-কায়েদা ঘেঁষা কিছু উপাদান আছে, বলেন সোফিয়ানে৷ ‘‘এদের সবার পন্থা হল, অন্য সবাইকে নাস্তিক, অবিশ্বাসী বলে কুৎসা রটানো৷''

অধ্যাপিকা আমেল গ্রামি একটি উদারপন্থি সমাজব্যবস্থার পক্ষেছবি: presse

সহিংস, সশস্ত্র গোষ্ঠী

‘‘বিপ্লব সুরক্ষা লিগ'' নাম দিয়ে বিপ্লবের সময় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এই সব গোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছিল৷ শাসকদল এন্নাহদা এদের উপর নির্ভর করে থাকে৷ ইসলামপন্থি এন্নাহদা তিউনিশিয়ার বহু শহরে ও গ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে ঠিক সেই ধরনের তরুণ-যুবাদের নিয়ে, যাদের জন্য অর্থোপার্জনের, জীবনধারণের, সবচেয়ে বড় কথা, সমাজে মর্যাদা পাবার আর কোনো পথ খোলা ছিল না৷ গোষ্ঠী তাদের দিয়েছে অর্থ, মর্যাদা এবং সংগ্রামের লক্ষ্য৷ এই সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ইতিমধ্যে বেসরকারিভাবে নথিভুক্তও করা হচ্ছে, যদিও তাদের পন্থা সর্বক্ষেত্রে আইনসম্মত নয়৷ বিগত কয়েক মাসে সারা দেশে বিভিন্ন অস্ত্রভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে৷

ফলে তিউনিশিয়া এখন একটি বারুদের স্তূপ হয়ে আছে৷ এই ঠান্ডা গৃহযুদ্ধ যে কোনো সময় একটি প্রকৃত গৃহযুদ্ধের রূপ ধারণ করতে পারে বলে আমেল গ্রামির ধারণা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ