এক ভদ্রলোক অনেক ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসে ঘুমিয়েছেন৷ মধ্যরাতে ট্রেনের শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল৷
বিজ্ঞাপন
তীব্র শব্দ না, কিন্তু কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিনি দেখলেন, ট্রেনটা যাচ্ছে তো যাচ্ছেই৷ আরো কিছুক্ষণ পর তাঁর মনে পড়ল, আরে, এখানে তো ট্রেনের লাইনই নেই! ট্রেন এলো কোত্থেকে!
অনেক কষ্টে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে জানালা খুলে দেখেন, দুই লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে৷ একজন একবার আরেকজনকে ‘ডাঙ্কে শ্যোন' বলছে, অন্যজন উত্তর দিচ্ছে ‘বিটে শ্যোন'৷ এইই চলছে দীর্ঘক্ষণ ধরে৷
নিচে গিয়ে তাঁদের থামিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘ভাই, হচ্ছেটা কী!''
শুনে যা বুঝলেন, তা হলো, রাস্তায় একজনের পকেট থেকে মানিব্যাগ পড়ে গিয়েছিল, অন্যজন তা তুলে ফেরত দিয়েছেন৷ এরপর থেকে একজন ধন্যবাদ, আরেকজন ধন্যবাদের উত্তর দিয়েই যাচ্ছেন৷
জার্মানদের ভদ্রতা নিয়ে এমন কিছু কৌতুক থাকলেও, তার কিছুটা আসলেই সত্যি৷ পরিচিত হোক বা অপরিচিত, দেখা হলে আপনার সম্ভাষণ করতেই হবে, বিদায় নেয়ার সময়ও৷
যে কারণে তাঁরা জার্মানির সমর্থক
02:36
ফলে, যখন বারটেন্ডারকে ‘ডাঙ্কে শ্যোন' বলার পর কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না, হঠাৎ খুব অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম৷
অধিকাংশ জার্মান স্বভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভদ্র৷ ট্রামে পাশে বসলে যদি কারও অসুবিধা হয়, এজন্য চার জনের আসনে দুটো আসন খালি থাকলেও লোকজন দাঁড়িয়ে থাকে৷
কিন্তু সেই জার্মানরাই ফুটবল খেলার দিন পাগল হয়ে যায়৷ সেটা জাতীয় দলের খেলাই হোক, বা লিগের খেলা৷ সেদিন এরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেনে সিগারেট খায়, চিৎকার চেঁচামেচি করে, নানা সাজে সেজে ঘুরতে বের হয়৷
সেই ফুটবল-পাগল জাতি কেন জার্মানির পরাজয়ে এত মুষড়ে পরলো, তা না বুঝতে পারার কথা নয়৷
২০১৪ সালে ব্রাজিলকে জার্মানি ৭ গোল দিয়েছিলো, তাই জার্মানি হারায় বেশ খুশিই হয়েছিলাম৷ কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর রাস্তায় বের হয়ে সে সুখ বেশিক্ষণ টেকেনি৷
তার আগে বলে নেই, ঊনিশ শতকের শেষ দিকের কথা৷ এই ধরুন ১৮৭০-৭২ সালেও জার্মানির সব মাঠ ছিল জিমন্যাস্টদের দখলে, জার্মানিতে তখন রাগবিও বেশ জনপ্রিয়৷ নানা দলে রীতিমতো প্রতিযোগিতাও হতো৷ ডিম্বাকার বল নিয়ে মাঠে দৌঁড়াদৌঁড়িতে তাঁরা ছিল পারদর্শী৷
কিন্তু ফুটবল কি জিনিস তা জার্মানরা জানতো না৷ অন্যদিকে, ব্রিটিশরা তখন নিজেদের মাঠে ফুটবল খেলায় বেশ পারদর্শী৷ ব্রিটিশরাই তখন উদ্যোগ নেয় ইউরোপে ফুটবল ছড়িয়ে দেয়ার৷
জার্মানির বিদায়ে কান্নার রোল
বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল জার্মানি বিদায় নিয়েছে প্রথম রাউন্ডেই৷ ভাবা যায় ! গত দুই দশকে মোট চারটি বিশ্বকাপে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন দল গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিলো৷ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নশিপ কি তবে অপয়া?
ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একটুখানি আশা নিয়ে ছলছল চোখে স্ক্রীণে তাকিয়ে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. MacDougall
হলো না
শেষ রক্ষা হলো না৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ভেজা চোখের ভালোবাসা
এমন তো হবার কথা ছিল না৷
ছবি: Getty Images/AFP/MacDougall
বিদায়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছে জার্মানি৷ বিশ্বকাপের আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরের আসরে বিদায় নেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়৷ ২০১০ সালে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে তার আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন ইটালি এবং ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছিল তার আগের বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন৷ ১৯৯৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সেরও পরের আসরে একই পরিণতি হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/D. Martinez
ভাঙ্গা হৃদয়
প্রিয় দলের এমন ভরাডুবি মেনে নেয়া কঠিন৷
ছবি: Reuters/P. Olivares
হতাশায় জর্জরিত
বিশ্বকাপের আনন্দটাই বুঝি মাটি হয়ে গেল৷
ছবি: Reuters/J. Sibley
যারা দুঃস্বপ্ন দেখালো জার্মানদের
জার্মানি-কোরিয়া ম্যাচের প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধ ছিল গোলশূন্য৷ দুটি গোলই হয়েছে অতিরিক্ত সময়ে৷ ৯৩ মিনিটে গোল করেন কিম ইয়ং গুয়ান এবং ৯৬ মিনিটে স্ট্রাইকার সং৷
ছবি: Reuters/J. Sibley
জার্মান ফুটবল ঐতিহ্য
১৯৩৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডর আগেই এবং ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই বিদায় নিলো জার্মানি৷ চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি চারবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে৷ একবার চতুর্থ স্থান পেয়েছে৷ ২০ টি বিশ্বকাপের দুটি বাদে সবকয়টিতে অংশ নেওয়া জার্মানি এবারের আসরের আগে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল ছিল৷
ছবি: DW/A. Islam
পারলেন না ক্রুস
আগের ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে টনি ক্রুসের শেষ মুহূর্তের গোলে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জার্মানি৷ সেই সুইডেনই অবিশ্বাস্যভাবে মেক্সিকোকে তিন গোল দিয়ে দেয়৷ অন্য ম্যাচে জার্মানিও ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে বিশ্বকাপে হারে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
নয়ার
নয়ারের কান্না রুখবে কে?
ছবি: Reuters/D. Martinez
লাভ হলো না ল্যোভের
খেলোয়াড়দের কী সান্তনা দেবেন কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ?
ছবি: Reuters/M. Dalder
বিমর্ষ জার্মান দল
পরাজয়ের পর বিমর্ষ ইয়োখিম কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ ও জার্মান দলের খেলোয়াড়রা
ছবি: Reuters/M. Dalder
15 ছবি1 | 15
জার্মানরা ফুটবলারদের ‘ব্রিটিশ দালাল' বলে মনে করতো৷ এজন্য ফুটবলারদের প্রতি কারো সহানুভূতি তো ছিলই না, বরং তাঁদের মাঝেমধ্যেই জনসমক্ষে নানা ধরনের অপমান ও অপদস্থও হতে হতো৷ স্কুলগুলোতেও ফুটবলকে ‘কুৎসিত', ‘ইংরেজদের অসুখ' ‘বিকৃত', এমন নানা উপাধি দিয়ে তা খেলতে নিরুৎসাহিত করা হতো৷
১৯৭৪ সালে জার্মানিতে প্রথম ডিম্বাকার বলের পরিবর্তে গোল বলে খেলা শুরু হয়৷ তবে সেটাকে ফুটবল বলাটা হয়তো ঠিক হবে না৷ কারণ, সেই বল নিয়ে মাঠে দৌঁড়াদৌঁড়ি ছাড়া আর কী করতে হবে, সে বিষয়ে কারো কোনো ধারণাই ছিল না৷
১৮৭৮ সালে হানোফার ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয়৷ তবে তখনও তারা রাগবিই খেলতো৷ ফুটবল বুট তো দূরের কথা, ফুটবলও পাওয়া যেতো না৷ খালি পায়ে বাইসাইকেলের টিউব দিয়ে বানানো ফুটবল নিয়েও খেলতে হয়েছে অনেক দলকে৷
খেলার জায়গা ছিল আরেক বিপদের নাম৷ বেশিরভাগ মাঠ আর পার্ক ছিল জিমন্যাস্টিক্সের দলগুলোর দখলে৷ তারা কেউই ফুটবলের মতো ‘জঘন্য' খেলার জন্য নিজেদের মাঠ দিতে চাইতো না৷ ১৮৯৯ সালে ভেরডার ব্রেমেন দলকে একটি গরু চড়ানোর মাঠে খেলতে হয়৷ এবং বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, মাঠে তখন গরুও চড়ে বেড়াচ্ছিলো৷
এমএসভি ডুইসবুর্গকে একটি গোরস্থানের পাশে খেলতে হতো৷ তবে যখনই কোনো কফিন সে রাস্তা দিয়ে আসতো, খেলা থামিয়ে শোকযাত্রার জন্য জায়গা করে দিতে হতো৷
১৯০০ সালে এসে পরিবর্তন হয় পরিস্থিতির৷ ২৮ জানুয়ারি, জার্মানির ৮৬টি দল লাইপসিশ শহরে একত্রিত হয়ে গঠন করে ডয়েচার ফুসবাল বুন্ড৷ এরপর থেকে শুরু হয় জার্মানিতে ফুটবল, তথা ফুসবালের উত্থান৷
জার্মানির মতোই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বেশিরভাগ ফুটবল দলকেই৷ একসময় এই খেলায় না ছিল গ্ল্যামার, না ছিল টাকা, না সম্মান৷ কিন্তু ফুটবল অনেকটাই ঘুঁচিয়েছে ধনী-গরীবের ব্যবধান৷
বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকুকে ছোটবেলায় তাঁর মা দুধে পানি মিশিয়ে খাওয়াতেন শুনলে আমাদের মনে দুঃখ হয়৷ আমরা ভাবি, আহারে, কত লড়াই করে ছেলেটা আজ এই জায়গায় এসেছে৷
উত্তর অ্যামেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়ার অনেক দেশ দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে টিকিয়ে রেখেছে ফুটবল৷ শুধু তাই নয়, ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী দেশগুলোর সাথে টুর্নামেন্টে লড়াই করে সম্মান আদায় করেছে৷
বাংলাদেশ এই বিষয়টা বুঝতে পারবে ক্রিকেট খেলার সাথে তুলনা করলে৷ একময় ‘মিনোজ', ‘একদিনেই টেস্ট হারানো সম্ভব' জাতীয় বক্তব্য হজম করেও মাঠের লড়াইয়ে আজ বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে৷ পুরুষ দলের সাথে পাল্লা দিয়ে নারী দলও এ বছর খেলছে বিশ্বকাপ৷
এত বড় কথার অবতারণার একটিই কারণ৷ বাংলাদেশ নিজে ফুটবলে খুব অগ্রসর না হওয়ায় প্রতিবারই বিশ্বকাপ এলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ অন্যান্য দলের সমর্থনে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা বিভক্ত হন৷ শুরু হয় কথার লড়াই৷
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত ভেবে দেখার সময় এসেছে, নিজের দলের সমর্থন ছাড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ছোট করার প্রবণতা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কিনা৷ নিজের দল হারলে সবারই খারাপ লাগে৷ ইন্টারনেটের যুগে কোনোকিছুই আর শুধু একটা দেশের সীমান্তে আবদ্ধ থাকে না৷
একবার মনে করে দেখুন, গত বছরের ফুটবল বিশ্বকাপে হন্ডুরাসকে সমর্থন দিয়ে মজা করে ফেসবুক ইভেন্ট খোলার পরিণতি কী হয়েছিল! একসময় সেটা মজা থেকে সিরিয়াস হয়ে যায়৷ মজাটাকে সত্যি মনে করে হন্ডুরাসের নাগরিকেরাও ধন্যবাদ দিতে থাকেন৷ হন্ডুরাসের জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ নিয়ে প্রতিবেদন হয়৷ এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল বাংলাদেশকে উৎসর্গ করে বসে হন্ডুরাস৷
আবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের সাথে ম্যাচের কথা মনে আছে? সেই ‘মওকা মওকা' বিজ্ঞাপনের কথা মনে আছে? এটাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অপমান মনে করে আমরা কম ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম?তাহলে ভাবুন, ভালোবাসা-ঘৃণা সবই অনলাইনের কল্যাণে কিভাবে এত দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে! সিদ্ধান্ত এখন আমাদের, ফুটবলের স্পিরিটের সাথে, খেলার স্পিরিটের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও ভালোবাসা ছড়াবো, নাকি নিজের সম্মানের চেয়ে অন্যের অপমানকে বেশি সুখের বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগবো৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
ছবি: Mir Farid
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ছবি: Noman Mohammad
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
ছবি: Mir Farid
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
ছবি: Khandakar Tarek
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
ছবি: Khandakar Tarek
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’