বছর দুই আগে ‘থ্রি পেরেন্ট' পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের অনুমোদন দেয় ব্রিটেন৷ কিন্তু তিন বাবা-মায়ের ঔরসে বিশ্বের প্রথম শিশুটির জন্ম হলো এক মার্কিন ডাক্তারের হাতে, তাও আবার মেক্সিকোতে৷ বাচ্চার ৫ মাস বয়স হলেও, খবর এলো এতদিনে৷
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছর ধরেই এ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছিল৷ কিন্তু আইনি বিধিনিষেধ থাকায় জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে এখনও কোনো মানব শিশুর জন্ম হয়নি সেখানে৷ তাই ডা. জন ঝাং নিউ ইয়র্কে নিজের নিউ হোপ ফার্টিলিটি সেন্টার নয়, বেছে নিয়েছিলেন মেক্সিকোর একটা হাসপাতালকে, যেখানে এ নিয়ে আইনের কোনো মারপ্যাঁচ নেই৷
দু'জন মা এবং একজন বাবার দেহ থেকে একটি বাচ্চার জন্ম দেওয়া – এতে নৈতিকতার কোনো টানাপোড়েন ছিল না আপনার মধ্যে? এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. ঝাং-এর সোজা উত্তর, ‘‘যে গবেষণা মানুষের জীবন বাঁচায়, সেটা করাই আমার কাছে নৈতিক৷''
ডা. ঝাং-এর গবেষণা জীবন বাঁচিয়েছে বৈকি৷ জন্ম দিয়েছে একটি সুস্থ সন্তানের, যার শরীরে মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত কোনো ত্রুটি নেই৷ আসলে ভ্রুণের মাইটোকন্ড্রিয়ায় ত্রুটি থাকলে হৃৎপিণ্ড, যকৃত, চোখ, পেশিতন্ত্র বা মস্তিষ্কে বড় ধরনের জটিলতা বা অসুস্থতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে একটি শিশু৷ আর এই ‘থ্রি পেরেন্ট ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন' বা ‘থ্রি পেরেন্ট আইভিএফ' পদ্ধতিতে সেই মাইটোকন্ড্রিয়া সরিয়ে ফেলে অন্য একটি সুস্থ ভ্রুণের মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করা যায়৷ ঠিক তেমনটাই করেছেন ডা. ঝাং৷
মায়ের ক্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়াটি তিনি প্রথমে প্রতিস্থাপন করেছেন একজন সুস্থ নারীর ডিম্বাণু দিয়ে৷ তারপর দাতার ডিম্বাণু থেকে নেওয়া নিউক্লিয়াসটি নষ্ট করে ফেলে সেখানে উনি বসিয়েছেন মায়ের ডিম্বাণু থেকে নেওয়া নিউক্লিয়াসটি৷ এতে ডিম্বাণুটির জিন মায়ের বৈশিষ্ট ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটিটি থাকেনি৷ এরপর বাবার শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করে ভ্রুণটা মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হয়েছে৷
ডা. ঝাং-এর কথায়, ‘‘এই পদ্ধতির কোনো ঝুঁকি আমি দেখতে পাইনি৷ বরং জিনগত সমস্যায় ভুগছেন এমন দম্পতির জন্য এটি একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে৷'' তাই নিজেদের জিনগত ত্রুটির কারণে যে সব দম্পতি সন্তান জন্ম দিতে ভয় পাচ্ছেন, এ পদ্ধতিটি তাঁদের জন্য খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দ্বার৷
প্রতি বছর বিশ্বের প্রতি ৬ হাজার শিশুর মধ্যে একজন এ ধরনের জটিলতা বা ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে৷
ডিজি/এসিবি
বন্ধুরা, আপনি কি এভাবে তিনজনের মিলিত সন্তানকে জন্ম দেওয়া সমর্থন করেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
হবু মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
‘মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই৷ কিন্তু মা হতে যে দশ মাসের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়! এই পথকে সহজ করা এবং সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কিছু সহজ উপায় নিয়েই এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW
হবু মায়ের অনুভূতি
‘মা’ – এটি একটি মাত্র শব্দ, যার সাথে মিশে আছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা৷ সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা না করেই সন্তানকে মা পরম যত্নে বড় করে তোলেন, সেই গর্ভাবস্থা থেকেই৷ পৃথিবীতে একমাত্র মা-ই জানেন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করার কষ্ট, ধৈর্য আর আনন্দের অনুভূতিটুকু৷
ছবি: imago/CTK Photo
স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা
গর্ভবতী মায়েদের শরীরে হরমন পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে তাঁদের অনেকেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে৷ আর এ কথাটি স্বামীসহ পরিবারের সকলকেই মনে রাখতে হবে৷ তাঁকে খুশি রাখার চেষ্টা করতে হবে, কারণ এতে পরিবারের অনাগত সদস্যটিরই মঙ্গল৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে মা সুস্থ থাকলে তার প্রভাব যে পড়ে শিশুটির ওপরও৷
ছবি: fotolia/diegoa8024
হবু মায়ের দিনের শুরু
‘‘সকালে উঠেই কুসুম গরম পানিতে গোসল সেরে নিন৷ তারপর পুরো শরীরে আস্তে আস্তে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন৷ অন্য তেলও অবশ্য মালিশ করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েলে সন্তান জন্মের পর সাধারণত পেটে আর কোনো দাগ থকে না৷’’ এমনটাই বলেন জার্মান ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: Fotolia/Subbotina Anna
সুন্দর ত্বক
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে হরমনের পরিবর্তনের কারণে হবু মায়ের ত্বকেও দেখা দেয় নানা সমস্যা, বিশেষকরে মুখমণ্ডলে৷ তাই সপ্তাহে একবার ‘মাস্ক’ ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন একটি পাকা অ্যাভোকাডোর সাথে দু’চামচ ছানা মিশিয়ে চোখ ছাড়া পুরো মুখে লাগিয়ে দশ মিনিট পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন৷ তারপর ভালো কোনো ‘সানস্ক্রিন’ লাগিয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/studiovespa
গর্ভকালীন হালকা ব্যায়াম
ঘরের মেঝেতে পা মুড়ে বসুন এবং হতের তালু সামনে নিয়ে বুকের কাছে রাখুন৷ খুবই মনোযোগ দিয়ে আস্তে আস্তে গভীরভাবে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন এবং পেটে থেকে নিঃশ্বাস ছাড়ুন আর ভাবুন – ‘‘এই নিঃশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমার সন্তানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে৷’’ ব্যায়াম কোনো গ্রুপের সাথে করতে পারলে আরো ভালো লাগবে৷
ছবি: Fotolia/Robert Kneschke
হালকা খাবার
এই সময়টাতে অনেকেরই সকালে বেশ খারাপ লাগে বা বমিভাব হয়৷ তাই এক কাপ ভেষজ চা পান করতে পারেন সাথে একটা টোস্ট বা বিস্কুট৷ ধাত্রী হাইকে বলেন, ‘‘এ সময় অনেকেই সকালে গরম নাস্তা পছন্দ করেন৷ আসলে নিজের যা ভালো লাগে সেটাই খাবেন৷ তবে লক্ষ্য রাখবেন যে, সেই খাবার যেন ফাইবার বা আঁশযুক্ত হয়৷ এছাড়া তার সঙ্গে অবশ্যই ফল খেতে ভুলবেন না৷’’
পানি
একজন সুস্থ গর্ভবতীর দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তাই মাঝে মাঝেই অল্প অল্প পানি পান করে নেবেন৷ এতে শরীরটা সারা দিন ঝরঝরে লাগবে এবং রক্ত ঘনও হয়ে যাবে না৷
ছবি: Fotolia/photo 5000
চুলের যত্ন
সাধাণত গর্ভবতী মায়েদের মাথার চুল তেমনভাবে ঝরে না৷ তবে কারো কারো চুলের আগা শুকিয়ে যায়৷ তাই তাঁরা বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন, এতে চুল নরম থাকে৷ তাছাড়া চুলকে সুন্দর ও ঝরঝরে রাখতে সপ্তাহে একদিন রান্নাঘর থেকে দুই টেবল চামচ অলিভ অয়েল, দুই চামচ সাদা দই এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে মাথায় দিয়ে দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন৷
ছবি: Fotolia/Masson
মুক্ত বাতাস সেবন
‘‘শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখতে এবং দুটোর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে এই বিশেষ সময়টিতে মুক্ত বাতাস সেবন খুবই জরুরি৷ হাঁটাহাঁটি খুব ভালো, তবে গায়ে জোড় দিয়ে কোনোরকম ব্যায়াম করা উচিত নয়৷ এতে হিতে বিপরিত হতে পারে৷ অন্য ব্যায়াম, অর্থাৎ যাঁরা সাঁতার জানেন তাঁদের জন্য কিছুক্ষণ পানিতে থাকা কোমর এবং পিঠে বেশ আরাম দেয়৷’’ বলেন ধাত্রী হাইকে শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/emil umdorf
দাঁত ব্রাশ
গর্ভবতী মাকে যেন সব সময় আকর্ষণীয় লাগে, সেজন্য দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে, তবে নরম ব্রাশ দিয়ে৷ এ সময় অনেকের মাড়ি নরম হয়ে রক্ত ঝরতে পারে৷ তাই দাঁতের মাড়ি শক্ত রাখতে ক্যামেলিয়া চা দিয়ে কুলি করতে পারেন৷ এছাড়া প্রথম ছয় মাস নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত বলে জানান ধাত্রী শোয়ার্ৎস৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
হোম স্পা
‘‘সন্ধ্যায় বাথটবে কুসুম কুসুম গরম পানি ভর্তি করে তাতে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দিন, যা ত্বককে মসৃণ করবে৷ কিছুক্ষণ টবে থাকার পর উঠে গায়ে তেল মালিশও করতে পারেন৷ চাইলে বাথটবে হবু মায়ের সঙ্গী বা কোচ হতে পারেন হবু বাবা৷’’ বলেন হাইকে৷
ছবি: Fotolia/Ariwasabi
পায়ের যত্ন
গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ভারী বোধ হয় তাঁর পা দুটো৷ তাই সকালে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেই দুই পা খানিকটা উঁচু করে একটু একটু করে ঘোরাবেন৷ এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়৷ রাতে যদি পা দুটোকে ভারী মনে হয়, তাহলে একটি বাটিতে ঠান্ডা পানি দিয়ে সামান্য লেবুর রস দিন৷ এতে ছোট টাওয়েল ভিজিয়ে পানিটা চিপে উঁচু করা পায়ে দুই মিনিট পেচিয়ে রাখুন৷
ছবি: superfood - Fotolia.com
ডাক্তারি ‘চেকআপ’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেটের সন্তানটি যেন ভালোভাবে বড় হতে পারে সেজন্য চাই যথেষ্ট সবুজ শাক-সবজি এবং আয়োডিন৷ আরো দরকার আয়রন এবং ক্যালসিয়াম৷ তাই এ সবের কোনোটারই যেন ঘাটতি না থাকে৷ সুতরাং শারীর আর মনের যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি ‘চেকআপ’-ও৷