1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিনটি পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতল তৃণমূল

১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

তিনটি পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেল তৃণমূল। বোলপুরে ১২ জন বিজেপি প্রার্থীকে আটকে রাখার অভিযোগ।

ছবি: Mani Tewari Prabhakar

ভোট হবে ২৭ তারিখ, তার অনেক আগেই রাজ্যের তিনটি পুরসভা সাইঁথিয়া, বজবজ ও দিনহাটায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ, অধিকাংশ আসনে কোনো বিরোধী প্রার্থী ভোটে দাঁড়ালেন না বা দাঁড়াতে পারলেন না। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল গায়ের জোরে এই কাজ করলো। তারা ভয় দেখিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের দাঁড়াতে দেয়নি।

বোলপুরে তো ১২ জন বিরোধী প্রার্থী যাতে মনোনয়ন পেশ করতে না পারেন, তাই তাদের ধরে আটকে রাখারও অভিযোগ উঠল। বিজেপি জানিয়েছে, পুলিশের কাছে নালিশ জানানোর পর ১২ জনকে উদ্ধার করার জন্য একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে পাঠানো হয়। এই সিভিক ভলান্টিয়ারকে কোনো জায়গায় কেউই বিশেষ মানে না। এরকম উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পুলিশ কর্মীদের না পাঠিয়ে মাত্র একজন সিভিক ভলান্টিয়ার কেন পাঠানো হলো, তার যুক্তিগ্রাহ্য জবাবও পুলিশ-প্রশাসন দেয়নি।

ফলে প্রতিবার পশ্চিমবঙ্গে যে কোনো ভোটের আগে যে ধরনের অভিযোগ ওঠে, এবারও তাই উঠেছে।  সেটা হলো, জোর করে, ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের ভোটের ময়দান থেকেই সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা। প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বিরোধীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ধাপে ব্যবস্থা নেয় শাসক দল। প্রথম হলো, তারা যাতে প্রার্থী না হয়, তার ব্যবস্থা করা। প্রার্থী হলে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা। এরপর ভোটের দিন বিরোধীরা যাতে এজেন্ট দিতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করা। আর শেষ ধাপ হলো, ভোটগ্রহণের সময় বোমাবাজি, মারামারি, বুথ জ্যাম ইত্যাদি। সেই সহিংসতার ট্রাডিশন সমানে চলছে।''

তৃণমূলের বক্তব্য

রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন,'' বিধানসভা ভোটের পর সাত-আট মাস ধরে বিজেপি নেতারা দলের ভিতরে কোন্দল ছাড়া আর কিছু করেনি। বিজেপি তো অন্য দল ভেঙে নিজেদের দল গড়তে গেছিল। এরপর ওদের দল ভেঙেছে। তাই এখন প্রার্থী পাচ্ছে না।'' বিরোধীদের প্রশ্ন, তাই বলে তিনটি পুরসভার সিংহভাগ আসলে একজন বিরোধী প্রার্থীও পাওয়া যাবে না?

তৃণমূলের অন্দরের ক্ষোভ

তৃণমূলে এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার অনুগামী নেতাদের সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতাদের ঝামেলা তীব্র আকার নিয়েছে। এখানেও সেই বিরোধের ছায়া পড়েছে। অভিষেকের কাছের নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য ফেসবুকে লিখেছেন,''প্রয়োজন হলে বিধানসভা ভোটের থেকেও দ্বিগুণ কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হোক।'' রাজ্যের তিনটি পুরবোর্ড বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নেয়ার পর ফেসবুক পস্টে দেবাংশু লিখেছেন, ''আরো একবার ২০১৮ হলে, ২০১৯- হওয়াও সময়ের অপেক্ষা। বারবার ২০২১ হবে না।''

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জোর করে বিরোধীদের প্রার্থী হতে দেয়নি তৃণমূল। তারপর ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়েছিল। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল জয় পেয়েছে। কিন্তু এবারের পুরভোটে আবার গায়ের জোরে জিততে গেলে যে পরে ২০২৪ সালে তার প্রভাব পড়তে পারে, তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন দেবাংশু। তিনি লিখেছেন, ''কিছু স্বার্থান্বেষী বদমায়েশের জন্য দলের গায়ে কালি লাগাতে দেবেন না।''

বিজেপি-র দাবি

বিজেপি দাবি করেছে, সাইঁথিয়া, বজবজ, দিনহাটা ও বোলপুর পুরসভায় ভোট বাতিল করতে হবে। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, বিজেপি প্রার্থীরা মনোননপত্র জমা দিতে পারেননি। তৃণমূল তাদের বাধা দিয়েছে। এই চার পুরসভা ছাড়াও টাকিতে চার জন, গুসকড়ায় একজন এবং বসিরহাটে একজন মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। বজবজে ২০টি ওয়ার্ডের মধ্য়ে ১২টিতে কোনো বিরোধী দলের প্রার্থীই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে ভোট বাতিলের দাবি জানিয়ে এসেছেন।

শনিবার বিধাননগর, চন্দননগর, শিলিগুড়ি ও আসানসোলের পুরভোট হবে। বাকি সব পুরসভায় ভোট হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি।

কেন এই অবস্থা?

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা ছাড়া বাকি কোনো রাজ্যে এই ধরনের অভিযোগের কথা শোনা যায়না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কেন ভোট হলেই সহিংসতা, বিরোধীদের প্রার্থী হতে না দেয়া, ভোটের দিনে সন্ত্রাসের অভিয়োগ উঠবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিরোধী-মুখ হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় বিরোধীদের এইভাবে লড়তে বাধা দেয়াটা তার ভাবমূর্তির ক্ষতি করতে বাধ্য।''

শরদের মতে, ''রাজ্যের শাসকদল প্রতিটি ভোটেই সিংহভাগ আসনে জিততে চায়। সব পুরসভা নিজেদের দখলে রাখতে চায়। তাই সম্ভবত তারা বেশ কিছু জায়গায় বিরোধী প্রার্থীদের লড়তেই দেয় না। এটা হলো পুরসভায় ক্ষমতা দখলের সবচেয়ে সহজ পথ।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র এর আগে ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন,''রাজ্যে নতুন শিল্প আসছে না। কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ভালো নয়। বরং পঞ্চায়েত ও পুরসভায় এখন প্রচুর অর্থ আসে। তাই এখানে জেতার মরিয়া চেষ্টা হয়। আর তাতে স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে থাকে শাসকদল। সেজন্যই বারবার এরকম পরিস্থিতির মুখে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ