সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিচার এবং বিচারবিভাগের দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ কথা বলেছেন সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এ এবারের আলোচনার বিষয় ছিল বিচারপতি এসকে সিনহার বিচার ও এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন থাকার আশঙ্কা৷
এই অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন৷
অনুষ্ঠানে আলোচিত হয় বাংলাদেশে বিচারবিভাগেরস্বাধীনতার সীমা ও বিচারকার্যের নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে সরকারের বিভিন্ন পক্ষের প্রভাব বিস্তারের প্রসঙ্গ৷ এক পর্যায়ে সঞ্চালক প্রশ্ন রাখেন দেশের জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা কতটুকু৷
উত্তরে সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘‘দেশের নিম্ন আদালতে থাকা দুর্নীতির কথা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারবো না৷ কিন্তু হাইকোর্টের পবিত্রতাকে কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না৷ সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা আগাগোড়া দুর্নীতিবাজ ছিলেন, তাই তার সাজা হয়েছে৷ এখন এই কথা কেউ অন্য কারো ব্যাপারে বলতে পারবে না৷ তিনিই একমাত্র দুর্নীতিবাজ ছিলেন, বাকি সবাই ভালো৷''
একই প্রশ্নের উত্তরে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘‘দেশের বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে যা যা দরকার, তা কি কেউ করতে পেরেছে? অর্থনৈতিক ক্ষমতাও নেই এই বিভাগের৷ বিভাগ স্বাধীন যদি বা হয়েও যায়, তা-ও কোনো ক্ষমতা নেই৷ এসকে সিনহার মামলায় এই রায় বিচারবিভাগের জন্য বা জনগণের জন্য কোনো সুখকর বার্তা বয়ে আনবে না৷''
এসএস/এসিবি
জামিন নাই, বিচার নাই
নিম্ন আদালত থেকে আপিল বিভাগ। অধিকাংশ মামলায় কেটে যায় দীর্ঘ সময়। একপ্রকার বিনা বিচারের কারা অভ্যন্তরে কাটে অভিযুক্তদের জীবন। রাষ্ট্রের কারণে কারো কারাজীবন দীর্ঘ হলে তিনি কি ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন? ছবিঘরে বিস্তারিত৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
১৭ বছরের কারাবাস, এরপর নির্দোষ শিপন
১৯৯৪ সালে ঢাকার সূত্রাপুরের একটি হত্যা মামলায় টানা ১৭ বছর বিনা বিচারে কারাগারে ছিলেন মো. শিপন। তিনি জামিনও পাননি, বিচারও হয়নি। তার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা আইনজীবী কুমার দেবুল দে বলেন, হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয় এবং ছয় মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে বলে। সেই বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হন শিপন। মাঝখানে হারিয়ে গেছে ১৭টি বছর।
ছবি: Privat
‘অসহায়দের তথ্য উপাত্ত নিশ্চিতে কাজ করা জরুরি’
বিনা বিচারে গ্রেপ্তারদের জামিন নিয়ে কাজ করে লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সন্স (এলএএইচপি) নামে একটি সংস্থা। এর চেয়ারম্যান ও মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের মতে, অনেকক্ষেত্রে তদবিরকারক না থাকায় অল্প অপরাধে অনেকে দীর্ঘমেয়াদে কারাগারে থাকেন। এদের অসহায়ত্বে অনেকাংশে ন্যায় বিচার ব্যাহত হয়। এই অসহায়দের তথ্য উপাত্ত নিশ্চিতে কাজ করা জরুরি।
ছবি: Privat
‘জামিনে ফ্যাক্ট কতটুকু দেখে ডাউট আছে’
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ফাউজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘‘নীচের কোর্টে এত এত ক্রাউড, সেখানে জামিনের আবেদন কতটুকু ফ্যাক্ট দেখে করে, সেটা আমার কাছে অনেক সময় সন্দেহ হয়। হাইকোর্ট একটা জামিনে আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টাও শোনে। সেখানে আমরা তথ্য প্রমাণ সাইটেশন দিতে পারি। নীচের কোর্টে এই সুযোগ কম। এটা কেবল বাংলাদেশেই না। নিউ ইয়র্কের নাইট কোর্টেও আমি একই অবস্থা দেখেছি।’’
ছবি: Privat
আইনজীবীরা বললেও আদালত শোনে না
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন দেয়া ডিসক্রিয়েশন অব দ্য কোর্ট। ডিসক্রিয়েশন মানেই পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার। আমার সাবমিশন অপছন্দ। তিনি বলেন, রিমান্ডের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের কিছু নির্দেশনা (বাইরে আইনজীবীকে রেখে কাঁচে ঘেরা কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ) আছে। এটা কেবলমাত্র (আংশিক) ফলো করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বেলায়। অন্যদের ক্ষেত্রেও আইনজীবীরা আদালতে এগুলো বলে, কিন্তু শোনে না।’’
ছবি: Privat
কেউ শোনেনি জাহালমের কথা
বিনাদোষে কারাভোগ করা বহুল আলোচিত একটি নাম জাহালম। আসামির সাথে চেহারার মিল থাকায় সালেকের পরিবর্তে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় এই পাটকল শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারিক আদালতে তিনি বলেছিলেন, তিনি সালেক নন। কিন্তু কেউ শোনেনি তার কথা। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা চেম্বারের আইনজীবী সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয় এবং ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেয়।
ছবি: Privat
‘কতদিনে নিষ্পত্তি করতেই হবে-সেই নিয়ম নাই’
বাগেরহাটের একটি আদালতে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার দায়ে ২০০০ সালে মৃত্যুদণ্ড হয় শেখ জাহিদের। ২০০৪ সালে হাইকোর্টের রায়ের ১৬ বছর পর আপিল বিভাগে তিনি খালাস পান। তার আইনজীবী সরোয়ার আহমেদ বলেন, যদি আইন হতো, এতদিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতেই হবে, না করতে পারলে সেটার বেনিফিট আসামি পাবে। তাহলে এগুলো কমতো। নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ মামলার সংখ্যা অনেক। বিপরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নেই।
ছবি: Privat
‘বিচার না করে বৈষম্য করছে রাষ্ট্র’
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, প্রতিটা আইনেই তদন্ত ও বিচার শেষ করার সময় বলা আছে। অনেকক্ষেত্রে হয়ত ১৮০দিনের তদন্ত বহু বছরেও শেষ হয় না। আবার বিচারক নেই, কোর্ট নেই-এ রকম নানা কিছুও হয়। কিন্তু অভিযুক্ত জেলে। অথচ সংবিধান বলছে, কাউকে বিনা বিচারে আটক রাখা যাবে না। কোর্ট না থাকার জন্য আসামি কেন সাফার করবে? এটা অবশ্যই বৈষম্য। রাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে এই বৈষম্য করে যাচ্ছে। এর জন্য কোন ক্ষতিপূরণও দেয়া হয় না।
ছবি: Privat
‘ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে আসামি’
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, জামিন বৈষম্যের সুযোগ নেই। কারণ জামিন শুরু হয় জেলা আদালতে। সেখানে উপযুক্ত হওয়ার পরও কেউ জামিন না পেলে তিনি উপরের কোর্টে আসতে পারেন। বিনা বিচারে কারাগারে থাকলে তাকে আদালতেই যেতে হবে, সেখানে বলতে হবে। আদালত সেটা তখন দেখবেন। কেউ বিনা বিচারে দীর্ঘ সময়ে কারাগারে থাকলে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করতে পারেন।