তিনি আছেন, আবার নেইও!
২৬ জুন ২০১৯শুরুটা করতে চাইছেন নিজেকে দিয়ে৷ কিন্তু, নারাজ দল৷ শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদ থেকে সরে আসার কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী৷ এ-ও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর জায়গায় গান্ধী পরিবারের কাউকে বসানো চলবে না৷ নতুন সভাপতি হতে হবে গান্ধী পরিবারের বাইরের কাউকে৷ দলের ওয়ার্কিং কমিটিকে ভার দিয়েছেন নতুন সভাপতি খোঁজার৷
কিন্তু, এই ঘটনা ২৫ মে-র৷ তারপর থেকে কংগ্রেসের নেতারা কেউই রাহুলের বিকল্প হিসেবে কাউকে খুঁজতে নারাজ৷ বরং তাঁরা নানা ভাবে, সে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে হোক বা আন্দোলনের ভঙ্গিতে রাহুলকেই সভাপতি পদে থেকে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন৷ওদিকে, রাহুলও গোঁ-ধরে বসে রয়েছেন৷ পদ তিনি ছাড়বেনই৷ পরিস্থিতি এমন, সভাপতি পদে রাহুল আছেন, আবার নেইও৷ এমন অবস্থায় দেশের প্রধান বিরোধী দল কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে৷ কারও জানা নেই, সভাপতি পদে রাহুল আছেন কি নেই, তিনি আর কতদিন দায়িত্ব সামলাবেন বা তাঁর উত্তরসূরী কে?
তবে, রাহুল অনড়৷ তিনি আর পদে থাকবেন না৷ বুধবার নতুন দিল্লিতে যুব কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন শাখা, সংগঠন সভাপতি পদেরাহুলকে রেখেদেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক দাবি জানিয়েছে৷ দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত একাধিকবার রাহুলের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছন৷ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মা সোনিয়া গান্ধী, বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রও৷ তবে, বরফ গলেনি৷ তাঁর গোঁ তিনি তো পদ ছাড়বেনই, সেইসঙ্গে গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতি হবেন৷
এরইমধ্যে রাহুল-পরবর্তী সভাপতি হিসেবে উঠে আসছে অশোক গেহলটের নাম৷ এছাড়াও শোনা যাচ্ছে মুকুল ওয়াসনিকের নাম৷ দুজনেই পোড় খাওয়া নেতা৷
এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক গৌতম লাহিড়ি ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, ‘‘২০১৯-এর নির্বাচনে ভরাডুবির পর রাহুল গান্ধী সভাপতির পদ ছাড়তে চেয়েছেন৷ তারপর থেকেই কংগ্রেস দোলাচলে পড়েছে৷ গান্ধী পরিবারের কাউকে শীর্ষ পদে আনা হলে অন্য কাউকে দলকে সংঘবদ্ধ রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ রাহুল নিজে বলেছেন তিনি নতুন সভাপতি নির্বাচনে তিনি নাক গলাচ্ছেন না৷ তারপর থেকে এখন পর্যন্ত রাহুল যতগুলি মন্তব্য করেছেন, সবগুলিই দলের সভাপতি হিসেবে৷ অর্থাৎ তিনি এখনও সভাপতি পদে রয়েছেন৷ পাশাপাশি বিধানসভা নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠক শুরু করেছেন৷ দলের মধ্যেও তাঁকে সভাপতি চেয়ে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে৷ নতুন নাম নিয়ে জল্পনা চলছে৷ তাঁদের মধ্যে অন্যতম নামটি হল দলের প্রবীন নেতা তথা রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির দলিত নেতা মুকুল ওয়াসনিক৷ তবে, এখনও কোনও নাম চূড়ান্ত হয়নি৷''
রাজনৈতিক দক্ষতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং উভয় ক্ষেত্রে সফলতার নিরিখে কংগ্রেসের অন্য নেতাদের তুলনায় ঢের বেশি এগিয়ে রয়েছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী৷ দল মনে করছে, রাজস্থানে এবারের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হল, গেটলট ও শচীন পাইলটের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব৷ সেক্ষেত্রে গেহলটকে দলের সর্বোচ্চ পদে বসানো হলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হবে৷ একদিকে যেমন দল পরিচালনার ভার অভিজ্ঞ সংগঠকের হাতে থাকবে, ঠিক তেমনই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে শচীন পাইলটকে বসানো হলে রাজ্যে দুই নেতার দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্বও মিটবে৷
গত ২৫ মে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি একগুচ্ছ শর্ত রেখেছিলেন তিনি৷ যারমধ্যে অন্যতম হল, তাঁর(রাহুল) উত্তরসূরি হিসেবে গান্ধী পরিবারের কাউকে সভাপতির পদে বসানো চলবে না৷ সরাসরি ইঙ্গিত ছিল বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর দিকে৷ এমনকী লোকসভায় দলীয় নেতার পদটিও নিতে চাননি তিনি৷ সোনিয়া গান্ধী বেছে নিয়েছেন বাংলার নেতা অধীর চৌধুরিকে৷
রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বাঙালি কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার অবশ্য এখনই রাহুলের বিকল্প নিয়ে চিন্তিত নন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‘কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়৷ এই কমিটির কাছে রাহুল পদত্যাগ করতে চেয়েছেন৷ কমিটি তা গ্রহণ করেননি৷ রাহুল কখনও নিজের অবস্থান বদল করেন না৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মনে রাখতে হবে, কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবার একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে৷ নতুন সভাপতি পদে যাঁর নাম আসুক না কেন, ওয়ার্কিং কমিটি বিচক্ষণভাবে বিচার করবে৷ ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এখনই কোনও নাম নিয়ে আলোচনা করা উচিত হবে না৷ অশোক গেহলট অবশ্যই যোগ্য নেতা৷ কিন্তু, কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে রাহুলকে অনেক বেশি প্রয়োজন৷'' সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাহুল জানিয়েছেন, তাঁর উত্তরসূরি খোঁজার দায়িত্ব দলের৷ তিনি এ বিষয়ে নাক গলাবেন না৷
কংগ্রেস সূত্রের খবর, সভাপতি হিসেবে অশোক গেহলটকে পছন্দ গান্ধী পরিবারেরও৷ তাছাড়া একসঙ্গে দলের সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে এদেশে৷ যেমন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তামিলনাড়ুর প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতা৷