উহানের ল্যাব থেকে করোনা ছড়ায়নি। দাবি গবেষণাগারের ভাইরোলজিস্টের। টিকাকরণে জোর ভারতের। জাপান টিকা পাঠাচ্ছে ভিয়েতনামকে।
বিজ্ঞাপন
গোটা পৃথিবী তার দিকে আঙুল তুলে রেখেছে। এবার মুখ খুললেন তিনি। উহানের গবেষণাগারের বিজ্ঞানী জানালেন, তার ল্যাবরেটরি থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি। এ কথা প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও সকলে তার দিকে আঙুল তুলছেন। একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভাইরোলজিস্ট বলেছেন, তিনি নিরপরাধ।
করোনা ভাইরাস প্রথম ছড়িয়ে পড়েছিল চীনের উহানে। কয়েকমাসের মধ্যে তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। প্রথম থেকেই কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছিলেন, উহানের একটি ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছে। কারণ সেখানে সার্স জাতীয় ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও একাধিকবার এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন।
চীনের সিনোফার্মের টিকাদান কার্যক্রম শুরু
দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকাদান শুরু হয়েছে। এ পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাবেন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ, মেডিকেল টেকনোলজি কলেজের শিক্ষার্থী এবং চীনের নাগরিকরা।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
প্রাথমিকভাবে চারটি মেডিকেলে টিকাদান
চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভির টিকাদান কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং মুগদা মেডিকেল কলেজে চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদান
দেশে স্বাস্থ্যসেবায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য টিকা দেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্টদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপহারের মোট পাঁচ লাখ ডোজের মধ্যে দুই লাখের মতো ডোজ দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। বাকি টিকা চীনের অনুরোধের ভিত্তিতে পাবেন চীনা নাগরিকেরা।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন
মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেকের উপস্থিতিতে ৩ জন শিক্ষার্থীকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ঢাকা মেডিকেলের ২৫৭ জন শিক্ষার্থীসহ মোট এক হাজার জনকে প্রথম দিনে টিকা দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘টিকা নিয়ে শুরুতে যে ভয়টা ছিল, সেটি কেটে গেছে‘
প্রথম স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে টিকা নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা সালাম সমতা জানান, “আমরা অনেকদিন যাবত ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছি না। তাছাড়া ফেব্রুয়ারিতে টিকাদানের শুরুতে যে ভয়টা ছিল, এখন সেটা আর নেই। আমি মনে করি, করোনা প্রতিরোধে টিকার কোনো বিকল্প নেই৷”
ছবি: Rashed Mortuza/DW
নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা
ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য মেডিকেলে টিকাদান কার্যক্রমের প্রথমদিনে জরুরি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টিকাদান বুথের পাশাপাশি টিকা পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষ এবং টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে যেন সঙ্গে সঙ্গে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সবখানেই।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
চলছে অক্সফোর্ডের টিকাদান কার্যক্রমও
চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভির টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের পাশাপাশি পৃথক টিকাবুথে দেখা গেল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কর্তৃক উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্তব্যরত একজন নার্স বলেন, ‘‘যতদিন আমাদের এ টিকার মজুত আছে, ততদিন এ কার্যক্রম চলবে।’’
ছবি: Rashed Mortuza/DW
টিকাটি প্রায় ৮০% কার্যকর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি ভিত্তিতে চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর পাকিস্তান, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এ টিকার অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ টিকার কার্যকারিতা ৮৬ শতাংশের মতো পাওয়া গেছে। তবে গবেষণা বলছে, স্বাভাবিকভাবে এ টিকা গড়ে ৮০ ভাগ কার্যকর।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
‘আমাদের এ সুযোগ লুফে নেওয়া উচিত’
চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকাদানের প্রথমদিনে টিকা নিতে আসা ঢাকা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী নিয়ামুল হক বলেন, “সরকার আমাদের জন্য বিনামূল্যে এ টিকার ব্যবস্থা করেছেন, আমার মনে হয় এ সুযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের তা লুফে নেওয়া উচিত। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির অনুমোদন দিয়েছে, এর পরে এ টিকা নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।”
ছবি: Rashed Mortuza/DW
এক সপ্তাহের বিরতি
চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকাদান কার্যক্রম চালুর প্রথমদিনে হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে ১ সপ্তাহ বিরতি দেওয়া হবে। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দিলে পরবর্তীতে বাকিদেরও এই টিকাদানে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
টিকা আনার সর্বোচ্চ চেষ্টার দাবি
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেন, “ভারত তিন কোটি টিকার ডোজ দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের নিজেদের দেশের সংকটের কারণে আমরা মাত্র এক কোটি ডোজ টিকা পেয়েছি। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় চীন এবং রাশিয়া থেকে টিকা আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। খুব শীঘ্রই আমরা কাঙ্খিত ফল পাবো বলে আশা করছি।“
ছবি: Rashed Mortuza/DW
চীনের টিকা সর্বসাধারণের জন্য নয়
চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকার উপহারের যে পাঁচ লাখ ডোজের চালান চীন সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছে, আপাতত সাধারণ মানুষ এ টিকাদান কার্যক্রমের বাইরে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। চীনের সাথে চুক্তি হয়ে যাওয়ার পর যখন নিয়মিতভাবে টিকার চালান আসবে, তখন সর্বসাধারণকে এই টিকা প্রয়োগের আওতায় আনা হবে বলে জানান দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা।
ছবি: Rashed Mortuza/DW
11 ছবি1 | 11
যে ভাইরোলজিস্টের গবেষণা নিয়ে এত অভিযোগ, তার নাম শি জেংলি। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ''প্রমাণ হয়ে গেছে, উহানের ল্যাবরেটরি থেকে করোনা ছড়ায়নি। তারপরেও সকলে আমার দিকে আঙুল তুলছেন। এটা ঠিক নয়। আমি নিরপরাধ।''
ভাইরোলজিস্ট বললেও, গবেষণাগার থেকে করোনা ছড়ানোর তত্ত্বটি এখনো সম্পূর্ণ ভাবে ভুল প্রমাণিত হয়নি। বহু গবেষক এখনো ওই মতের পক্ষে প্রমাণ দিচ্ছেন। বাইডেন প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। চীন অবশ্য প্রথম থেকেই এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছিল। কিছুদিন আগেও তত্ত্বটিকে অবাস্তব বলে দাবি করেছে তারা। তবে ভাইরোলজিস্ট বহুদিন মুখ খোলেননি। সম্প্রতি তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন।
ভিয়েতনাম এবং জাপান
এ দিকে ভিয়েতনামে নতুন করে করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছে। জাপান ভিয়েতনামকে ১০ লাখ ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছে। জাপানেও দ্রুত ভ্যাকসিনেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত ৪০ হাজার কর্মীকে এর মধ্যেই টিকা দেওয়া হয়েছে। আর ৩০ হাজার কর্মীকে কয়েকদিনের মধ্যেই টিকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও এখনো দেশের ভিতর অলিম্পিকের বিরোধিতা করছেন বহু মানুষ।
ভারতের পরিস্থিতি
ভারতে করোনা পরিস্থিতি সামান্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। দৈনিক সংক্রমণ ৬০ হাজারে নেমে এসেছে। তবে ভ্যাকসিন যে ভাবে দেওয়া হচ্ছে, তাতে সকলের টিকা পেতে কয়েক বছর লেগে যাবে। বিষয়টি বুঝতে পেরেছে সরকারও। আগামী কিছুদিন টিকাকরণের বিশেষ ড্রাইভ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। টিকাকরণে গতি আনতে চাইছে প্রশাসন।
এরই মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে তাজমহল, লালকেল্লা, অজন্তার গুহা। তবে দর্শনার্থীদের নিয়ম মেনে প্রবেশ করতে হবে। দৈনিক দর্শকের সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।