বিশ্বের নামকরা ও বড় ৩০টি কোম্পানির শেয়ারমূল্যের খবর দেয়া সূচক ‘ডাও জোন্স’ মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ৩০,০০০ পয়েন্ট ছুঁয়েছে৷ এদিকে, বুধবার বিশ্বের অন্যান্য শেয়ারবাজারেও ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Nicole Pereira/New York Stock Exchange/AP/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অ্যাপল, মাইক্রোসফট, বোয়িংয়ের মতো নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও নাসদাক স্টক মার্কেটে লেনদেন করা ৩০টি নামকরা ও বড় কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের সূচক হচ্ছে ‘ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ’৷
বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের যে তিনটি সূচকের খবর বেশি রাখেন তার মধ্যে ডাও জোন্স একটি৷ মঙ্গলবার লেনদেন শেষে এর পয়েন্ট দাঁড়ায় ৩০,০৪৬.২৪-তে৷ অর্থাৎ এই প্রথমবারের মতো ডাও ৩০ হাজারের ফলক পেরলো৷
করোনা মহামারি শুরুর দিকে ২৩ মার্চ ডাও জোন্স সূচক ছিল ১৮,৬০০৷
এদিকে, বুধবার জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে৷ জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায়ও সূচক বেড়েছে৷
পুঁজিবাজারে এমন ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য তিনটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বাজার বিশ্লেষকরা৷ প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ট্রাম্প প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি৷ সোমবার এই স্বীকৃতি দেয় ট্রাম্প প্রশাসন৷ ফলে নতুন প্রশাসন গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় তহবিল পাবেন বাইডেন৷ এছাড়া তাকে নিয়মিত গোয়েন্দা ব্রিফিংও দেয়া হবে৷
এছাড়া নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক প্রধান জ্যানেট ইয়েলেনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাইডেন৷ তিনি আয় বৈষম্য কমাতে কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
সিঙ্গাপুরের আইজি-র সিনিয়র মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট জিংয়ি পান বলছেন, শুরুর অনিশ্চয়তা শেষে বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি এখন নিশ্চিত হয়েছে৷ এছাড়া অর্থমন্ত্রী হিসেবে ইয়েলেনের নির্বাচন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করেছে৷
‘মিতসুবিশি ইউএফজে মর্গান স্ট্যানলি সিকিউরিটিজ’এর চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট নরিহিরো ফুজিত বলছেন, ‘‘এখন প্রধান বিষয় হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন কাজ শুরু করবে৷’’ জানুয়ারিতে বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত পুঁজিবাজারের ইতিবাচক অবস্থা চলতে পারে বলে আশা করছেন তিনি৷ এরপর বাইডের শপথ গ্রহণের পর বাস্তবতা সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন নরিহিরো ফুজিত৷
করোনার টিকা নিয়ে অগ্রগতি হওয়ায় বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ এই খবরও বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আশান্বিত করছে বলে জানান মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট জিংয়ি পান৷
জেডএইচ/কেএম (রয়টার্স, এপি)
২৫ আগস্টের ছবিঘরটি দেখুন...
করোনা-কালে বেহাল জার্মান অর্থনীতি
করোনা-কালে জার্মান অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আভাস মিলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
টোল সংগ্রহ কমছে
রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের পরিমাণ বুঝিয়ে দেয় দেশের অর্থনীতি কোন পথে চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কম মানে, জিনিসের চাহিদা কমছে। প্রতি বছর পণ্যবাহী ট্রাকের থেকে টোল আদায় করে সরকার। এর থেকে সরকার ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করে। করোনা কালে জার্মানিতে টোল সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো কমেছে।
ছবি: Imago Images/M. Stein
উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন ছিল। ফলে ওই সময় জার্মান কারখানাগুলিতেও কাজ কম হয়েছে। করোনাকালে জার্মানিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জার্মানিতে ২০২০ সালের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ এর তুলনায় ১০ শতাংশ কম হবে। তবে শিল্প উত্পাদন আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ছবি: MEHR
ম্যাপ অ্যাপের ব্যবহার কমেছে
অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলি গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এই অ্যাপগুলি থেকে মানুষের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এ বছরের ডেটা বলছে, মার্চে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি জার্মান ম্যাপ অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা বাড়ির বাইরে খুব বেশি বেরচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণ হয়, করোনার কারণে জার্মানদের গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে।
ছবি: picture alliance/dpa/U.Zucchi
রেস্তোঁরা বুকিং
মার্চ মাসে অনলাইন সার্ভিস সংস্থা 'ওপেন টেবিল' একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের গোড়ায় অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং চোখে পড়ার মতো কমেনি। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে এবং লকডাউন হওয়ার পরে বুকিং কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই থেকে অবশ্য রেস্তোরাঁ আবার খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও বুকিং আগের মতো হচ্ছে না।
ছবি: Reuters/A. Gebert
বিমান চলাচলে সমস্যা
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানি থেকে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী দেশে এবং বিদেশে যাতায়াত করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যত শূন্য হয়ে যায়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ফ্লাইটারাডার ২৪ নামক একটি সংস্থা সমীক্ষা করে দেখিয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে কী পরিমাণ বিমান হ্যাঙারে ঢুকে গিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় করোনাকালে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭৫ হাজার বিমান কম উড়েছে।
ছবি: picture-alliance/M. Mainka
বেকারত্বের সমস্যা
অর্থনৈতিক সংকটের আরও বড় একটি সূচক হলো বেকারত্ব। জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিলে তা এক লাফে ২৫ লাখে পৌঁছে যায়। কারণ, বহু ছোট সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে জার্মান সরকার বেকার ভাতা দিয়ে এই সমস্যাকে অনেকটাই হাতের মধ্যে রাখতে পেরেছে। অন্য বহু দেশের মতো জার্মান বেকারদের সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন
করোনাকালে গাড়ি কেনা বেচাও চোখে পড়ার মতো কমেছে জার্মানিতে। মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি ৩৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর ৬১ শতাংশ গাড়ি কম বিক্রি হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গাড়ি শিল্পে জার্মানি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)