তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ বলে ঘোষণা করে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে কেন্দ্র৷ কিন্তু বিতর্ক থামেনি৷ বরং এর বিরোধীতা করে আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেসসহ অ-বিজেপি দলগুলি৷
বিজ্ঞাপন
তিন তালাক প্রথাকে আগেই অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ এবার সেটারই আইনি রূপ দিতে এই অর্ডিন্যান্স আনলো মোদী সরকার৷ এরপর রাষ্ট্রপতি তাতে শিলমোহর দিয়েছেন এবং তা আইনে পরিণত হয়েছে৷ অর্থাৎ তিন তালাক এবার থেকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ শাস্তি সর্বাধিক তিন বছরর জেল ও জরিমানা, দিতে হবে ভরণপোষণও৷ আর সেজন্য তালাকপ্রাপ্ত মহিলা বা তাঁর নিকটতম আত্মীয়পরিজনকে আবেদন করতে হবে৷ জামিনের সংস্থান আছে৷ কিন্তু জামিন পুলিশ দিতে পারবে না, দেবে ম্যাজিস্ট্রেট৷
‘‘বিকল্প রাস্তা বের করা হচ্ছে’’
বিজেপি সরকারের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের পরই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়৷ কংগ্রেস আঙুল তোলে বিজেপির দিকে৷ ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও মিজোরাম – এই চারটি রাজ্যে আর কয়েক মাসের মধ্যেই বিধানসভা ভোট৷ পরের বছর সংসদীয় নির্বাচন৷ সেই দিকে তাকিয়েই নাকি তড়িঘড়ি এই অর্ডিন্যান্স, মুসলিম মহিলাদের ভোট টানার ফন্দি৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, উত্তর প্রদেশের গত নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টে তিন তালাকের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নেয় বিজেপি৷ তার ফলেই মুসলিম মহিলাদের ভোট পায় বিজেপি৷ এতে রাজ্যে বিজেপির জয়লাভের পথ প্রশস্ত হয়.
মোদী ইন্দোরে দাউদি ভোরা মুসলিম সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কি মুসলিমদের একাংশের ভোট টানতে? প্রশ্ন উঠেছে৷ হালে মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন আরএসএস-এর শীর্ষকর্তা মোহন ভাগবতও বলেছেন, মুসলিমদেরও ভারতে থাকার অধিকার আছে৷ পালটা তোপ দেগেছে কংগ্রেসও৷ বলেছে মোদী সরকার মুসলিম সংসার ভাঙার রাস্তা তৈরি করছে৷ বৌকে তালাক দেবার পর স্বামীকে যদি জেলে পোরা হয়, তাহলে তালাকপ্রাপ্ত মহিলা এবং তাঁর সন্তানের ভরণপোষণ কে দেবে?
এআইএমআইএম-এর সুপ্রিমো আসাউদ্দিন ওয়েইসি মনে করেন, এই অর্ডিন্যান্স মুসলিম মহিলাদের স্বার্থের পরিপন্থি৷ বিয়ে একটি সামাজিক সম্পর্ক৷ এতে আইনের নাক গলানো অনুচিত৷ তাঁর মতে, এই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রয়োজন৷
ডিভোর্স – কেন? বিয়ে টিকিয়ে রাখার উপায়ই বা কী?
অনেকের কাছে ‘বিয়ের’ দিনটি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও স্মরণীয় দিন হলেও ডিভোর্সের হার দিনদিন বেড়ে চলেছে, প্রায় সর্বত্রই৷ কিন্তু কী কারণে? ডিভোর্সের হার কমানোর কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: Fotolia/Jens Klingebiel
ডিভোর্সের কারণ
সুখে, দুঃখে সারাজীবন একে-অপরের সঙ্গী থাকা – সেকথা ভেবেই তো বিয়ে! কিন্তু বিয়ের পর যতদিন যায়, বেরিয়ে আসে দু’জনের মধ্যকার নানা অমিল৷ এগুলোই এক সময় ডিভোর্সের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বোঝাবুঝির অভাব, পরকীয়া প্রেম, অতৃপ্ত যৌনজীবন, নির্যাতন, অহংকার, সন্তান মানুষ করা নিয়ে মতভেদ, সংসারের কাজে অনীহা ইত্যাদি কারণে তালাক হয় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/Marco Scisetti
কমিউনিকেশন গ্যাপ
২০১৪ সালে জার্মানিতে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ডিভোর্স হয়েছে৷ ডিভোর্সের কারণগুলোর মধ্যে প্রথমেই রাখা হয়েছে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’, অর্থাৎ বিবাহের বন্ধনকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ করতে যতটা কথাবার্তা ও আবেগ অনুভূতি বা ভালোবাসার প্রকাশ বা আলোচনা দরকার, তা না হওয়াকে৷ এর ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়, দূরত্ব বাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরকীয়া প্রেম
দাম্পত্যজীবনের প্রথম শর্তই হলো ‘বিশ্বাস’ আর সেটা যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই তা তালাকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ দাম্পত্যজীবনকে ছেলেখেলা ভেবে অনেকেই অন্য নারী বা পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় কিংবা পুরনো প্রেমের সম্পর্ককে আবার জিইয়ে তোলে৷ এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই অপরজনের পক্ষে তা মনে নেওয়া সম্ভব হয় না, ফলে বিয়েটা ডিভোর্সে গিয়ে শেষ হয়৷
ছবি: picture-alliance /dpa/Armin Weigel
যৌনজীবন অতৃপ্ত হলে
শারীরিক ভালোবাসা বা যৌনসুখের দাম্পত্যজীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ এই সুখের কমতি বা ভাটা পড়লে অনেকক্ষেত্রেই দেখা দেয় সমস্যা৷ আমাদের দেশে দম্পতিদের শোবার ঘরের এই সমস্যার কথা নিয়ে বাইরে আলোচনা করা না হলেও, জার্মানি বা পশ্চিমা বিশ্বে সরাসরি তা আলোচনায় আসে৷ অতৃপ্ত যৌনসুখের কারণে অনেক সংসারই ভেঙে যায় জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/drubig-photo
কাজ ভাগাভাগি না করা
চাকরি বা নিজস্ব একটা পেশা এখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই রয়েছে৷ পাশাপাশি বাজার, রান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, বাগান করা, আতিথেয়তা, সন্তানদের দেখাশোনা – সংসারের কাজ তো আর কম নয়! এ সব কাজ দু’জনে মিলেমিশে করলে যত সহজে করা সম্ভব, একজনের পক্ষে তা সম্ভব নয়৷ যদি এ সব কাজ শুধুমাত্র একজনকে করতে হয়, তাহলেই দেখা দেয় সমস্যা৷ অর্থাৎ এটাও বিবাহবিচ্ছেদের একটা কারণ৷
ছবি: Konstantin Yuganov - Fotolia.com
আমিই সব
অনেক স্বামী বা স্ত্রী নিজের মতামত বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর হবি, আনন্দ, সুখের জন্য যা যা দরকার সবই করেন৷ কিন্তু উল্টোদিকে তাঁর সঙ্গীর সখ বা ইচ্ছার কোনো মূল্যই দিতে চান না৷ ফলে অন্যজনের পক্ষে এই স্বার্থপরতা বা একগুঁয়েভাব বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয় না৷ ফলাফল – ডিভোর্স! অর্থাৎ একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধবোধ না থাকলে সম্পর্ক বেশি দিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়!
তালাকের কারণ টাকা
সংসারে প্রয়োজনীয় টাকা অভাবে যেমন তালাক হয়, আবার প্রচুর টাকা থাকলেও বিবাহবিচ্ছেদ হতে পারে৷ দু’টি স্বতন্ত্র মানুষের আলাদা জগত থাকতে পারে, কিন্তু সেই জগত দু’টির একটা মেলবন্ধন জরুরি৷ অতিরিক্ত অর্থ অনেকসময় এটা হতে দেয় না৷ কারণ অতিরিক্ত টাকা-পয়সা কিভাবে সংসার, সন্তান বা অন্য কিছুতে খরচ করা হবে, তা নিয়েও শুরু হতে পারে ঝগড়া৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/McPHOTO
‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’
বাড়িতে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতন করাকে ‘ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ বলা হয়৷ মানসিক নির্যাতন সেভাবে প্রমাণ করা না গেলেও, শারীরিক নির্যাতন তার প্রমাণ রেখে যায়৷ এই নির্যাতনের স্বীকার হয় সাধারণত নারীরাই৷ এই যন্ত্রণা ও অত্যাচার বেশি দিন সহ্য করা সম্ভব হয় না৷ তাই এ থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই ডিভোর্সের আবেদন করে থাকেন জার্মানিতে৷
ছবি: Fotolia/detailblick
বাংলাদেশে ডিভোর্সের কারণ
২০১৪ সালে শুধুমাত্র ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেই ডিভোর্সের সংখ্যা ছিল ৫,৪১৮টি৷ বাংলাদেশে ডিভোর্সের হার দ্রুতগতিতে বাড়ার অন্যান্য কারণের পাশাপাশি জি বাংলা, স্টার প্লাসের মতো টিভি চ্যানেল, অতি আধুনিকতা, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবকে দায়ী করছেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু মোহাম্মদ নূরসহ বেশ কয়েকজন৷
সন্তান না হওয়া, বড় কোনো অসুখ, যৌন সমস্যা, অন্য দেশে থাকতে চাওয়ার মতো বিশেষ কারণ হলে হয়ত বিবাহবিচ্ছেদ রোধ করা সম্ভব নয়৷ তবে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ যদি, ভালোবাসা, আবেগ, ভুল বোঝাবুঝি, সন্তান মানুষ করা ইত্যাদি কারণ হয়, তাহলে দু’জন কিছুটা সচেতন ও আগ্রহী হলে বিবাহবিচ্ছেদ আটকানো যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance / Markus C. Hurek
সংসার টিকিয়ে রাখতে ভালোবাসার যত্ন
একে-অপরকে নিয়ে খানিকটা ভাবুন, কাজের স্বীকৃতি দিন, সমালোচনা না করে মাঝে-মধ্যে একে-অপরের প্রশংসা করুন, কাজ ভাগাভাগি করে নিন৷ সবচেয়ে বড় কথা দু’জনে মিলে সব কিছু প্ল্যান করুন, আলোচনা করুন আর সে আলোচনায় মাঝে মাঝে সন্তানদেরও সাথে নিন৷ ভালোবাসা গাছের মতো৷ যত্নে ভালোবাসায় তা ফুলে-ফলে ভরে উঠবে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/G. Fischer
ঝগড়া এড়িয়ে চলুন
ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন, যাঁরা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ ঝগড়া অবশ্য শুধু ডিভোর্সের কারণই হয় না, মৃত্যুকেও এগিয়ে আনে৷ আর সন্তানের সামনে তো ঝগড়া নয়ই৷ এতে সন্তানের মধ্যে যেমন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তেমনই কমে যেতে পারে মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধও৷
ছবি: goodluz - Fotolia
প্রয়োজনে ক্ষমা চেয়ে নিন
ভুল মানুষ করতেই পারে৷ তাই স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনো ভুল বা অন্যায় করে থাকে, তাহলে সেটা একে-অপরকে জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন৷ দু’জনে দু’জনের প্রতি বিশ্বাস রাখুন৷ অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনোরকম গোপনীয়তা যেন না থাকে৷ তবে তার মানে অন্যের ওপর নজর রাখা কিন্তু একেবারেই নয়৷ অন্যের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিন৷ ভুলে যাবেন না যে, বিশ্বাসই দাম্পত্যজীবনের মূল ‘চাবিকাঠি’৷
ছবি: Colourbox/Kzenon
13 ছবি1 | 13
ওদিকে তিন তালাক নিয়ে যিনি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন, সেই ইশরাত জাহান এই অর্ডিন্যান্সকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এবার মুসলিম পুরুষদের গাত্রদাহ হচ্ছে কেন, সেটা সহজেই অনুমেয়৷
হাজি সাহেব নজরুল হাফেজের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে উনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, মানছি তিন তালাক প্রথার অপব্যবহার হচ্ছে একশ'বার৷ তালাকের অপব্যবহার রুখতে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেন, আমরা সেটা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি৷ কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে প্রত্যেকটি ধর্মের স্বাধীনতা দেওয়া আছে৷ বিশেষ করে মুসলিম পার্সোনাল আইনে সেই অধিকার দেওয়া আছে৷ সেখানে অর্ডিন্যান্স জারি করা ঠিক নয়৷ কোরা- হাদিসে বৈধ তালাক দেওয়া একটা প্রেক্ষিতে হয়৷ বিনা প্রেক্ষিতে হয় না৷ বৈধ তালাক একটা ফৌজদারি মামলায় নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত দুঃখের বিষয়৷ এটা তো কোরানের ওপর হস্তক্ষেপ৷ মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরোধী৷ তাহলে এর বিকল্প কী হতে পারে? উত্তরে হাজি সাহেব ডয়চে ভেলেকে বললেন, বিকল্প রাস্তা বের করা হচ্ছে৷ মুরুব্বিরা বসেছেন, সুপ্রিম কোর্ট বসেছেন৷ আমরা তাঁদের সঙ্গে একমত৷ শীর্ষ আদালত তো বলেই দিয়েছেন তাত্ক্ষণিক তিল তালাক প্রথা অসাংবিধানিক৷''
তিন তালাক একটা প্রেক্ষিতে হয়৷ অন্য ধর্মে কি ডিভোর্স হয় না? অবশ্যই হয়. সেইরকম শরিয়াত অনুযায়ী মুসলিম নারী পুরুষের মধ্যে বিয়ে হয়৷ বিশেষ কোনো কারণে যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হয়, জ্বলে পুড়ে ছাই হবার আগে তিন তালাক কি শ্রেয় নয়? কোরান হাদিশে তালাকের একটা পদ্ধতি আছে৷ সেই পদ্ধতি যাতে পালিত হয়, তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি৷ বিজেপি সরকার তড়িঘড়ি যে অর্ডিন্যান্স এনেছে, সেটা কোরানের ওপর ইস্তক্ষেপ এরজন্য বিজেপিকে মূল্য দিতে হবে৷
ডয়চে ভেলের প্রশ্ন ছিল ধর্মের চেয়ে মানবিকতা কি বড় নয়? হাজি সাহেবের উত্তর, ‘‘সেটা কি স্রেফ মুসলিম নারীদের জন্য? লক্ষ লক্ষ অ-মুসলিম বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলাদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে না কেন? হালালা সম্পর্কে কথাটা সত্যি নয়৷ তালাকপ্রাপ্ত মহিলাকে অন্য পুরুষের সংগে বিয়ে করে ঘর করার পর আবার পুরানো স্বামীর সংসারে ফিরে আসতে পারবে৷ এটা আমরা বিশ্বাস করি না৷ কোনো মা-বাবাই সেটা চাইবে না৷ কোরানও তা বলে না৷ আমরা চাই মুসলিম মহিলাদের লেখাপড়া, কর্মসংস্থান ও আর্থিক স্বনির্ভরতা৷ সরকার সেটা না করে ভোটের দিকে তাকিয়ে রুটি সেঁকছে৷''
বিবাহবিচ্ছেদ আইন
বাংলাদেশে দিন দিন বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে৷ বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের নাগরিকরা আইন অনুযায়ী কীভাবে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন, সেই তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: privat
ইসলাম
১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী, কাজীর মাধ্যমে তালাক দিতে হবে এবং তালাকের নোটিশ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে অথবা স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা কিংবা সিটি কর্পোরেশনকে পাঠাতে হবে৷ মুখে তালাক দিলে সেটি কার্যকর হবে না৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সমান নয়
স্বামী কোনো কারণ ছাড়া স্ত্রীকে তালাক দিতে পারলেও, স্ত্রী সেটা করতে পারেন না৷ এর জন্য আইনে কতগুলো কারণ উল্লেখ আছে৷ শুধুমাত্র সেসব কারণেই স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কয়েকটি কারণ
স্বামী চার বছর ধরে নিরুদ্দেশ থাকলে, দুই বছর স্ত্রীর ভরণপোষণ না দিলে বা ব্যর্থ হলে, একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে, সাত বছরের বেশি কারাদণ্ড পেলে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তিন বছর ধরে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, বিয়ের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন থাকলে, দুই বছর ধরে অপ্রকৃতিস্থ থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ বা মারাত্মক যৌনরোগে আক্রান্ত থাকলে৷ বাকি কারণগুলো জানতে উপরে (+) বাটনে চাপ দিন৷
ছবি: LIB
হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ
একটা সময় ছিল যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা আবার বিয়ে করতে চাইলে, স্ত্রীকে আগে হিল্লা বিয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হত৷ এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ের ব্যক্তি (স্বামী) স্ত্রীকে তালাক দিলে বা মারা গেলে স্ত্রী পুনরায় প্রথম স্বামীকে বিয়ে করতে পারতেন৷ মধ্যবর্তীকালীন এই বিয়ের নামই হচ্ছে ‘হিল্লা’ বিয়ে৷ তবে বর্তমানে এটি নিষিদ্ধ৷
ছবি: infokosh.gov.bd
হিন্দু ধর্ম
সনাতন হিন্দু আইনে সরাসরি বিবাহবিচ্ছেদের কোনো বিধান নেই৷ তবে ভারতে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনে কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে আনা অভিযোগ প্রমাণ হলে বিবাহবিচ্ছেদ সম্ভব৷ এছাড়া ‘স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’ অনুযায়ীও ডিভোর্স সম্ভব৷ তবে বাংলাদেশে এ সব আইন প্রযোজ্য নয়৷ স্ত্রী যদি একান্তই স্বামীর সঙ্গে থাকতে না চান তাহলে তিনি অন্য কোথাও আলাদা থাকতে পারেন৷ এক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে খোরপোশ পাওয়ার অধিকারী৷
ছবি: AFP/Getty Images/P. Singh
খ্রিষ্টান ধর্ম
বাংলাদেশে এক্ষেত্রে ১৮৬৯ সালের ‘ক্রিশ্চিয়ান ডিভোর্স অ্যাক্ট’ মানা হয়৷ তবে ক্যাথলিকরা এই আইনের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন না, কারণ ক্যাথলিকরা বিবাহবিচ্ছেদ মানেন না৷ তবে প্রোটেস্ট্যান্টরা এই আইনের আওচায় বিবাহবিচ্ছেদ করে থাকেন৷ এই আইনে অবশ্য বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে স্বামীর মতো সমতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: privat
6 ছবি1 | 6
সিপিআই (এম-এল) নেত্রী কবিতা কৃষ্ণানের মতে, তাত্ক্ষণিক তিন তালাক দিলে যদি মুসলিম পুরুষের শাস্তি হয়, তাহলে হিন্দু পুরুষের শাস্তি হবে না কেন? তাঁরাও তো কারণে অকারণে বৌ সন্তান ছেড়ে পালিয়ে যায়৷
ভারতীয় মুসলিম মহিলা সংগঠনের নেত্রী জাকিয়া সোমান মনে করেন, সর্বসম্মতিতে সংসদে পাশ হলেই ভালো হতো৷ তবে এবার সব দলের উচিত হবে এটাকে সমর্থন করা৷
কাঠগোড়ায় তোলা হলো কংগ্রেসকেও৷ কারণ তিন তালাক সংক্রান্ত বিলটি (মুসলিম মহিলাদের বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার সুরক্ষা বিল) বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাশ হলেও কংগ্রেসের দোনামনার জন্য উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ঝুলে থাকে৷ একাধিক অধিনিয়মে আপত্তি ছিল কংগ্রেসের৷ বিশেষ করে তালাক-ই-বিদ্দতের কয়েকটি অধিনিয়ম নিয়ে৷ তাই বিরোধী দলগুলি বিলটিতে সংশোধনী এনে নতুন করে পেশ করার আর্জি জানিয়ে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে বলে৷ সংশোধনী আনলেও বিলটি নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত পেশ করা হয়নি৷
নাগরিক সমাজের একাংশের মতে, অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বিলটির আইনি রূপ দেবার জন্য এত তাড়াহুড়া করার কি খুব দরকার ছিল? সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই তো রাজ্যসভায় পেশ করা যেত৷ মোদী সরকারের আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, কংগ্রেসকে রাজি করিয়েই বিল পাশ করাবার বহু চেষ্টা করা হয়, কিন্তু কংগ্রেস তাতে কান দেয়নি৷ নিজেদের মুসলিম ভোট ধরে রাখতেই কংগ্রেস আমাদের সমর্থন করেনি৷ সবথেকে বড় কথা কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রী একজন মহিলা৷ তিন তালাকের মতো এমন অমানবিক প্রথাকে কীভাবে তিনি সমর্থন করে এসেছেন?