ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, ২৫ বছরের বেশি বয়সিরা এক ঘণ্টা টিভি, ডিভিডি বা ভিডিও দেখলে তাঁদের জীবনের আয়ু প্রায় ২২ মিনিট কমে যেতে পারে৷ সে হিসেবে কেউ যদি ধারাবাহিকভাবে দিনে গড়ে ছয় ঘণ্টা করে টিভি দেখেন, তাহলে তাঁর জীবন থেকে পাঁচটি বছর চলে যেতে পারে৷

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের একটি গবেষণায় জানা যায়, যেসব পুরুষ মাসে কমপক্ষে একবারও যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হননি তাঁদের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা, যাঁরা সপ্তাহে অন্তত একদিন যৌনসম্পর্ক করেছেন, তাঁদের চেয়ে দ্বিগুন৷ এদিকে, ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, যেসব নারীর আনন্দময় যৌনজীবন রয়েছে তাঁরা অন্যদের চেয়ে প্রায় আট বছর বেশি বাঁচেন৷ কাজেই সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য নিয়মিত যৌনসম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বৈকি!

অনেকেই একা থাকতে পছন্দ করেন৷ মনে করেন এতে করে চাপ এড়ানো যায়৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা৷ তাঁদের কথা, একা থাকা মানে জীবনের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া – যা আয়ু কমাতে পারে৷ দিনে ১৫টি সিগারেট খেলে স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়, পর্যাপ্ত সামাজিক যোগাযোগ না করলেও সেরকম ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জুলিয়ান হোল্ট-লুনস্টাড৷

অ্যামেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এর জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, দিনে গড়ে ১১ ঘণ্টার বেশি সময় বসে থাকা মানে পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যাওয়া৷ কাজেই আর বসে থাকা নয়, শারীরিক পরিশ্রম করুন, সুস্থ থাকুন!

ক্যানাডার গবেষকরা বলছেন, একজন মানুষ বেকার থাকা মানে তার অকালমৃত্যুর সম্ভাবনা ৬৩ শতাংশ বেড়ে যাওয়া৷ ১৫টি দেশের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের ৪০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা৷

দিনে আট ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঘুমানো ঠিক নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁরা বলেন, ধারাবাহিকভাবে এত সময় ধরে ঘুমানো স্বাস্থ্যকর নয়৷ দিনে সর্বোচ্চ সাত ঘণ্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷

ব্যায়াম করা শরীরের জন্য উপকারী৷ কিন্তু সেটা বেশি হয়ে গেলেই বিপদ৷ তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ব্যায়াম করা উচিত৷

একজন স্বামী বা জীবনসঙ্গী বাড়ি ফিরেই সোফায় গা এলিয়ে দিলেন, কিংবা ধূমপান শুরু করলেন৷ তাঁর রান্না বা অন্য কোনো কাজে কোনো আগ্রহ নেই৷ মন খারাপ নিয়ে নিজের মতো করে থাকেন৷ এক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, তিনি সুখী নন৷ তাঁর পেশা, বন্ধু-বান্ধব, অর্থাৎ তাঁর কাছে জীবনের সবকিছুই অর্থহীন মনে হয়৷

কারো কারো আবার সবই ভালো লাগে৷ হোক তা চাকরি, ঘোরাফেরা বা নতুন কিছু করা– সবকিছুই তাঁদের ভালো লাগে, সব কিছুতেই আনন্দ পায়৷ আসলে একজন মানুষ যদি এরকম সুখী এবং ইতিবাচক চিন্তার হয়, তাহলে তাঁর জীবনসঙ্গীও ভালো বোধ করে, সুখে থাকে৷

একজন সুখী মানুষ নিজে যেমন ভালো থাকেন, তেমনি তাঁর পার্টনারকেও ভালো রাখার চেষ্টা করেন এবং স্বাভাবিকভাবে তিনিও শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে ভালো থাকেন৷ অর্থাৎ, সুখী মানুষের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রভাব তার জীবনসঙ্গীর ওপর পড়ে৷ ফলে তিনিও ভালো থাকেন৷ আর তার মধ্য দিয়ে তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করতে পারেন৷

আর সে-কথাই জানা যায় নেদারল্যান্ডসের টিলবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে৷গবেষণায় জানা যায়, সুখ এবং মানসিক শান্তির এতটাই প্রভাব যে, একজন সুখী মানুষ তাঁর জীবনসঙ্গীর আয়ু বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে পারে৷

‘‘আমি আমার মতো আর তুমি তোমার মতো থাকো’’ অনেক দম্পতির মধ্যে এমন সম্পর্কও আছে৷ অর্থাৎ, যে যার ইচ্ছেমতো চলে এবং মনোকষ্টে ভোগে৷ তবে এর সমাধান আছে ৷

‘‘প্রথমেই ‘তুমি’ আর ‘আমি’ বাদ দিতে হবে’’, বলেন মনোবিজ্ঞানী ও দম্পতি-থেরাপিস্ট হ্যান্স-জর্জ লাউয়ার৷বিষয়টি যদিও খুব সহজ নয়৷ তারপরও প্রেমের সম্পর্কগুলিতে একে-অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে, একে অন্যকে অনুভব করবে, এমনটাই আশা করা হয়ে থাকে৷ একজনের যখন মন খারাপ থাকে আরেকজন যদি তা বোঝে এবং মেনে চলে, তাহলে সম্পর্ক অনেকটাই সহজ হতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞ লাউরার৷

গতকাল সবকিছু ঠিক ছিল, আজ সব উলটপালট মনে হচ্ছে কেন? এমনটাও হয়ে থাকে৷ তবে এসব পরিস্থিতে খোলাখুলি কথা বলা উচিত৷ তাছাড়া ভালোবাসার দু’জন মানুষ কে কেমন পরিবার বা মা-বাবার কাছ থেকে কি দেখেছে বা শুনেছে, সেটাও ভাববার বিষয় বৈকি!

জার্মানিতে ১৮ থেকে ৭৯ বছর বয়সিদের মধ্যে বছরে দুই থেকে তিনবার ৫ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে৷ এদের মধ্যে শতকরা ৮৪ জন খুব তাড়াতাড়িই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে৷ তবে শতকরা ৪৫ জন তাঁদের পার্টনারের কাছ থেকে দূরে সরে যায়৷ আর শতকরা ৭২ জন নিজেদের বন্ধনমুক্ত মনে করেন৷ ডিপ্রেশনের এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে জার্মানির ডিপ্রেশন এইড ফাউন্ডেশন৷

যাঁদের ভালোবাসার সম্পর্কে সবসময়ই একটা অসন্তুষ্টি কাজ করে, সেখানে সুখী হওয়া খুব কঠিন৷ তবে এসব ক্ষেত্রে পরিবার বিষয়ক এক্সপার্টদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন লাউরার৷ সুখের জন্য চেষ্টা করা যায় এবং একে অপরকে সুখী করে দীর্ঘজীবন লাভ করাও সম্ভব৷ আর সেটা কে-ই বা না চায়?