সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ মুহূর্তে জার্মানিতে প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার গৃহহীন মানুষ রয়েছেন যাঁদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি হলেন শরণার্থী৷ আর ২০১৮ সাল নাগাদ গৃহহীন মানুষের এ সংখ্যা আরো ৪০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১২ লাখে৷
ছবি: FERENC ISZA/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
গৃহহীনদের সহায়তাকল্পে জার্মানির ফেডারেল ওয়ার্কিং গ্রুপ বা বিএজি-এর মতে, ২০১৫ সালে জার্মানিতে ১০ লাখ শরণার্থী প্রবেশের সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে সামাজিক গৃহায়নের সুবিধা সংকুচিত হয়েছে৷ এতে করে দেশে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা৷
২০১৬ সালের ফেডারেল পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, ২০১৪ সালের তুলনায় জার্মানিতে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৫০ ভাগ৷ মোট ৮ লাখ ৬০ হাজার গৃহহীনের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি৷ অবশ্য রিপোর্টে এ কথা উল্লেখ করা হয় যে, শরণার্থী মাত্রই থাকার জায়গা পাচ্ছেন না, এমন নয়৷ অসংখ্য শরণার্থী জার্মানিতে ‘কমিউনাল হাউজিং' ও আশ্রয়কেন্দ্রেও অবস্থান করছেন৷ তাদের মতে, পরিসংখ্যানের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের আবাসনের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে৷
গৃহহীন থেকে তাঁরা এখন সম্পদশালী তারকা
একসময় মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ছিল না তাঁদের৷ অথচ এখন তাঁরা সফল তারকা এবং সেই সুবাদে অঢেল সম্পদের মালিক৷ জেনে নিন শূন্য থেকে মিলিয়নেয়ার হয়ে যাওয়া কয়েকজন সুপারস্টারের কথা৷
ছবি: AP
এক সময় পার্কের বেঞ্চেও শুয়েছেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ
জেমস বন্ড তারকা ড্যানিয়েল ক্রেইগ এখন কমপক্ষে ৬০ মিলিয়ন ডলারের মালিক৷ বাড়ি-গাড়ির অভাবের তো প্রশ্নই ওঠে না৷ অথচ একসময় তাঁকেও রাত কাটাতে হয়েছে লন্ডনের হাইড পার্কের বেঞ্চে৷ তাঁর স্মৃতিচারণাতেও নানা সময় উঠে এসেছে সে কথা৷ এখন সুসময়৷ জেমস বন্ড সিরিজের ‘স্কাইফল’-এ অভিনয় করেই ১৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Gindl
গৃহহীন থেকে আজকের সুপারস্টার হেলি বেরি
২১ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে জীবনযুদ্ধ শুরুর সময়টায় শহরের গৃহহীনদের আশ্রয় শিবিরেই থাকতে হয়েছিল তাঁকে৷ মারিয়া হেলি বেরিও এখন হলিউড সুপারস্টার৷ ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রাসাদোপম অট্টালিকায় তাঁর বাস৷ ১৯৯১ সালে ‘স্পাইক লি’ ছবির মাধ্যমে তারকারাজ্যে প্রবেশের পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি৷ জেমস বন্ড সিরিজে অভিনয় করেছেন৷ অস্কার জিতেছেন৷ এক সময়ের গৃহহীন হেলি বেরির আয় ইতিমধ্যে ৭০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে৷
ছবি: picture alliance/kpa
এক সময় বাসের সিটে রাত কাটিয়েছেন স্ট্যালোন
সিলভেস্টার স্ট্যালোনও একসময় বাসের সিটে রাত কাটিয়েছেন৷ নিউ ইয়র্কে তখন তাঁরও থাকার জায়গা নেই৷ বাসের সিটে শুয়ে শুয়েই পত্রিকার বিজ্ঞাপন পড়লেন৷ সেই বিজ্ঞাপনে একটি পর্নো ছবিতে অভিনয়ে আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে৷ একদিন কাজ করলে ১০০ ডলার পাওয়া যাবে৷ স্ট্যালোন পরের দিনই চলে যান অভিনয় করতে৷ বাকিটা ইতিহাস৷ ‘ব়্যাম্বো’ ছবির স্ট্যালোন এখন ৩৪০ মিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের সম্পত্তির মালিক!
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের সঙ্গে রাগ করে ঘর ছাড়া জেনিফার লোপেজ
অভিনেত্রী, গায়িকা জেনিফার লোপেজের গল্পটা একটু অন্যরকম৷ লেখাপড়া আর ভবিষ্যৎ নিয়ে মায়ের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হওয়ায় রেগেমেগে ঘর ছাড়েন জেনিফার৷ কিন্তু চলবেন কী করে? ড্যান্স স্টুডিয়োতে কাজ করার সুযোগ এলো৷ লুফে নিলেন সেই সুযোগ৷ হলিউডের এই সেক্সি তারকার আয় এখন ১১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Senna
শৈশবেই সংসারের হাল ধরেছিলেন জিম ক্যারি
বাবার চাকরি যাওয়ায় জিম ক্যারিকে সংসারের হাল ধরার কথা ভাবতে হয়েছিল মাত্র ১২ বছর বয়সে৷ তাঁকেও তখন বাসের সিটে রাত কাটাতে হয়েছে৷ হলিউডের সাড়া জাগানো এই কৌতুক অভিনেতার সহায়-সম্পত্তির মোট আনুমানিক মূল্য এ মুহূর্তে ১৫০ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: Getty Images
মায়ের একট টেলিফোন এবং হিলারি সোয়াঙ্ক
অভিনেত্রী হিলারি সোয়াঙ্ক লস এঞ্জেলেসে চলে যান ১৫ বছর বয়সে৷ অবশ্য সঙ্গে মা ছিলেন৷ মা-মেয়ের কাছে ছিল মাত্র ৭৫ ডলার৷ বাস নয়, থাকার জায়গা ছিল না বলে তখন নিজেদের গাড়িতেই রাত কাটিয়েছেন হিলারি সোয়াঙ্ক আর তাঁর মা৷ রাস্তার পাশের এক টেলিফোন বুথ থেকেই মা একদিন এক পরিচালককে ফোন করে মেয়েকে একটা সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করলেন৷ তাঁর সেই মেয়ে এখন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী এবং কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উইলিয়াম শ্যাটনারের তখন দুঃসময়
‘স্টারট্রেক’ ছবিতে ক্যাপ্টেন কার্ক চরিত্রে অভিনয় করে প্রায় অমরত্ব পেয়ে যাওয়া উইলিয়াম শ্যাটনারকেও একটা সময় পিকআপ ভ্যানে রাত কাটাতে হয়েছে৷ ১৯৬৯ সালে স্টারট্রেকের শুটিং বন্ধ করা হয়৷ স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়িও হয় তখন৷ দুঃসময় বেশি দিন থাকেনি৷ কারণ কিছুদিন পর আবারো স্টারট্রেকের শুটিং শুরু হয়৷ শুটিং শেষে প্রচার শুরুর পরই রাতারাতি তারকা হয়ে যান শ্যাটনার৷ এখন তাঁর মোট আয়ের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন ডলারের মতো৷
ছবি: Paramount
শানিয়া টোয়াইনকেও আশ্রয় শিবিরে থাকতে হয়েছে
সংগীত শিল্পী শানিয়া টোয়াইনও জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা শুরুর সময় কিছু দিন গৃহহীনদের আশ্রয় শিবিরে থেকেছেন, কখনো আবার বাসের সিটে শুয়েও তাঁকে কাটাতে হয়েছে রাত৷ ক্যারিয়ারে তাঁর মোট আয় এখন ২৪৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি৷
ছবি: Getty Images/E. Miller
তখন জঁ ক্লদ ভ্যান ডামও গৃহহীন
‘ব্লাডস্পোর্ট’, ‘ইউনিভারসাল সোলজার’ এবং ‘সাডেন ডেথ’-এর মতো অ্যাকশন ছবির জনপ্রিয় নায়ক ভ্যান ডামও জীবিকার সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেস শহরে গিয়ে প্রথমদিকে রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য হয়েছেন৷ সে সময় খাবারও জুটত না তাঁর প্রতিদিন৷ ‘মি. বেলজিয়াম’ খেতাব জেতা সাবেক এই বডি বিল্ডার এখন ৩০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সম্পদের মালিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KPA
গৃহহীন মেয়েটিকে ধর্ষণের শিকারও হতে হয়
যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ওপ্রা উইনফ্রের শৈশবের প্রায় পুরোটা সময়ই কেটেছে অর্ধাহারে-অনাহারে৷ পরিত্যক্ত শিশুদের আশ্রয় শিবিরে থেকেছেন কিছুদিন৷ তখন ধর্ষিতাও হয়েছেন ‘ওপ্রা উইনফ্রে শো’ উপস্থাপনার কারণে সারা বিশ্বে পরিচিতি পাওয়া এই কৃষ্ণকলি৷ সেই অপরাহ উইনফ্রে এখন ৩ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের সম্পদের মালিক৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
বিএজি-এর নির্বাহি পরিচালক টোমাস স্পেশ্ট অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, ‘‘শরণার্থীদের কারণে সমস্যা তীব্র হলেও, তাঁরাই আবাসন সংকট তৈরির একমাত্র কারণ নয়৷'' বরং তাঁর মতে, সরকারের ভুল আবাসন নীতির কারণেই পরিস্থিতি এমন হয়েছে৷ ১৯৯০ সাল থেকে ক্রমাগত ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছে আবাসন প্রকল্প বিক্রির ফলে সোশ্যাল হাউজিং ইউনিট ক্রমাগত কমেছে৷ তাই স্পেশ্টের কথায়, ‘‘এ সব নীতির কারণে অনেকের পক্ষেই সাশ্রয়ী খরচে বাড়ি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷''
অর্থাৎ জার্মানিতে আবাসন সংকটের ফলে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে আকাশচুম্বী হারে৷ আর এর মধ্যে এক বা দু'কামরার বাসার ভাড়া বেড়েছে সবচেয়ে বেশি৷ আবাসন সংকট কাটাতে সরকার ও পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত – এ কথা উল্লেখ করে বিএজি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভেরেনা রোসেঙ্কে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, ভর্তুকি মূল্যে গৃহহীনদের আবাসন সুবিধা দেয়া উচিত৷ সেই সাথে ব্যবসায়ী ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পড়ে থাকা আবাসনপ্রকল্প অধিগ্রহণ করার কাজও বিবেচনা করা উচিত সরকারের৷''
শরণার্থী ছাড়াও ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি জার্মান নাগরিক গৃহহীন, যার মধ্যে অন্তত ৮ শতাংশ নাবালক৷ এছাড়াও, প্রায় ৫২ হাজার মানুষ বাস করেন রাস্তায়৷
আরএন/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)
জার্মানিতেও যে এত গৃহহীন মানুষ থাকতে পারে, সেটা কি ভাবা যায়? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷