নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় একটি অফার! কোনো কাজ না করে জার্মানিতে কিছু মানুষ টানা তিন বছর প্রতি মাসে সোয়া লাখ টাকা (১,২০০ ইউরো) করে হাতে পাবেন৷ বিনিময়ে গবেষকদের জানাতে হবে এই ৪৫ লাখ টাকা পেয়ে তাদের অনুভূতির কথা৷
বিজ্ঞাপন
পরীক্ষামূলক এই গবেষণায় অংশ নিতে আগ্রহীদের কাছ দারুণ সাড়া পাওয়া গেছে৷ মাত্র এক সপ্তাহে ১৫ লাখের বেশি স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে শর্তহীন অর্থ আয়ের জন্য৷ আয়োজকেরা মোট এক হাজার পাঁচশো অংশগ্রহণকারী খুঁজছেন যাদের মধ্যে কমপক্ষে ১২০ জন তিন বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে ১২০০ ইউরো করে পাবেন৷ পরীক্ষামূলক তিন বছরের এই প্রজেক্টের জন্য অংশগ্রহণকারীদের অনলাইনে শুধু সাতটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দিতে হবে পরীক্ষামূলক এই প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে৷
করোনা-কালে বেহাল জার্মান অর্থনীতি
করোনা-কালে জার্মান অর্থনীতির অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার আভাস মিলেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
টোল সংগ্রহ কমছে
রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাকের পরিমাণ বুঝিয়ে দেয় দেশের অর্থনীতি কোন পথে চলছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কম মানে, জিনিসের চাহিদা কমছে। প্রতি বছর পণ্যবাহী ট্রাকের থেকে টোল আদায় করে সরকার। এর থেকে সরকার ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করে। করোনা কালে জার্মানিতে টোল সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো কমেছে।
ছবি: Imago Images/M. Stein
উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
মার্চ মাসের শেষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জার্মানিতে লকডাউন ছিল। ফলে ওই সময় জার্মান কারখানাগুলিতেও কাজ কম হয়েছে। করোনাকালে জার্মানিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জার্মানিতে ২০২০ সালের শেষে বিদ্যুতের চাহিদা ২০১৯ এর তুলনায় ১০ শতাংশ কম হবে। তবে শিল্প উত্পাদন আস্তে আস্তে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
ছবি: MEHR
ম্যাপ অ্যাপের ব্যবহার কমেছে
অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলি গুগল ম্যাপের মতো অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা দেয়। এই অ্যাপগুলি থেকে মানুষের জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সংগ্রহ করা হয়। এ বছরের ডেটা বলছে, মার্চে লকডাউন হওয়ার পর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি জার্মান ম্যাপ অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁরা বাড়ির বাইরে খুব বেশি বেরচ্ছেন না। এর থেকে প্রমাণ হয়, করোনার কারণে জার্মানদের গতিশীলতা আগের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েছে।
ছবি: picture alliance/dpa/U.Zucchi
রেস্তোঁরা বুকিং
মার্চ মাসে অনলাইন সার্ভিস সংস্থা 'ওপেন টেবিল' একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের গোড়ায় অনলাইনে রেস্তোরাঁ বুকিং চোখে পড়ার মতো কমেনি। কিন্তু করোনার প্রকোপ বাড়ার পরে এবং লকডাউন হওয়ার পরে বুকিং কার্যত শূন্যে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রায় সমস্ত রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জুলাই থেকে অবশ্য রেস্তোরাঁ আবার খুলতে শুরু করেছে। তবে এখনও বুকিং আগের মতো হচ্ছে না।
ছবি: Reuters/A. Gebert
বিমান চলাচলে সমস্যা
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানি থেকে প্রায় দেড় কোটি যাত্রী দেশে এবং বিদেশে যাতায়াত করেছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যত শূন্য হয়ে যায়। ফ্লাইট ট্র্যাকার ফ্লাইটারাডার ২৪ নামক একটি সংস্থা সমীক্ষা করে দেখিয়েছে, বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার পরে বিশ্বজুড়ে কী পরিমাণ বিমান হ্যাঙারে ঢুকে গিয়েছে। তাদের সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় করোনাকালে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭৫ হাজার বিমান কম উড়েছে।
ছবি: picture-alliance/M. Mainka
বেকারত্বের সমস্যা
অর্থনৈতিক সংকটের আরও বড় একটি সূচক হলো বেকারত্ব। জার্মানিতে বেকারের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১৫ হাজার। এপ্রিলে তা এক লাফে ২৫ লাখে পৌঁছে যায়। কারণ, বহু ছোট সংস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে জার্মান সরকার বেকার ভাতা দিয়ে এই সমস্যাকে অনেকটাই হাতের মধ্যে রাখতে পেরেছে। অন্য বহু দেশের মতো জার্মান বেকারদের সমস্যায় পড়তে হয়নি।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Woitas
নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন
করোনাকালে গাড়ি কেনা বেচাও চোখে পড়ার মতো কমেছে জার্মানিতে। মার্চ মাসে গাড়ি বিক্রি ৩৭ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এপ্রিলের তুলনায় এ বছর ৬১ শতাংশ গাড়ি কম বিক্রি হয়েছে। মনে রাখা দরকার, গাড়ি শিল্পে জার্মানি পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এসজি/জিএইচ (ডিডাব্লিউ)
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Welz
7 ছবি1 | 7
প্রায় দেড় লাখ দাতা সংস্থা অংশগ্রহণকারীদের জন্য করহীন এই অর্থের যোগান দেবে৷ সবশেষে প্রতি অংশগ্রহণকারী ৪৩,২০০ ইউরো পাবে৷ এই প্রজেক্টটির উদ্যোক্তা বার্লিনভিত্তিক একটি পাবলিক চ্যারিটি৷
শর্তহীন অর্থ পাওয়ার ফলে জীবনের অনেক সমস্যারই সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করেন ‘মাই বেসিক ইনকাম’ চ্যারিটির কর্মকর্তারা৷ তারা মনে করেন, বেচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রোজগারের চাপ সরিয়ে নিলে মানুষ আরো স্বাধীন, সৃজনশীল এবং সামগ্রিকভাবে আরো সুখী হবে বলে মনে করেন তাঁরা৷
জার্মান অর্থনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান ইয়্যুর্গেন শুপ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর নিশ্চয়তা থাকায় তখন তারা শর্তহীন অর্থ দিয়ে কি করেন তা নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করবো৷ আমরা জানতে চাই শর্তহীন অর্থের সবটুকু তারা ব্যয় করে, না কিছু পরিমাণ সঞ্চয় করে বা কম কাজ করে কিংবা অর্থ থেকে অন্যকে কিছু দান করে ৷ জানতে চাই, অর্থ কীভাবে মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে? এটা বিজ্ঞানসম্মত একটি কঠিন প্রশ্ন এবং এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিরিয়াস গবেষণা করা হয়নি৷’’
শর্তহীন মৌলিক আয় বহুদিন ধরে একটি বিতর্কিত বিষয়, যা প্রায়ই মানুষের আদর্শ নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করা হয়ে থাকে৷ মানুষের কাজ না থাকলে কী করে, এটাই থেকে যায় এ বিষয়ের মূল প্রশ্ন ৷ তবে বিরোধীরা মনে করেন, এতে মানুষকে আরো বেশি অলস হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়৷
জার্মানিতে এধরনের বেসিক আয়ের প্রকল্পগুলোর জন্য রাজনৈতিক বড় দলগুলোর পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি৷