উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠকের আগ দিয়ে পিয়ংইয়ং তিন মার্কিন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এর সাথে তারা অ্যামেরিকায় ফিরছেন৷
বিজ্ঞাপন
উত্তর কোরিয়া তিন মার্কিন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
বুধবার ট্রাম্প এক টুইটে এই ঘোষণা দিয়ে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তিনজন ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরে আসছেন, যাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য সবাই অপেক্ষায় আছে৷
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নেতা কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠকের আগে দিয়ে পিয়ংইয়ং এ পদক্ষেপ নিল৷
ইনস্টাগ্রামের ছবিতে উত্তর কোরিয়া
প্রায়ই সংবাদপত্রের শিরোনামে থাকলেও উত্তর কোরিয়া দেশটি বিচ্ছিন্ন ও প্রায় অজানা৷ ব্রিটিশ ইনস্টাগ্রামার পিয়ের ডেপন্ট নিয়মিতভাবে উত্তর কোরিয়ায় গিয়ে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলার চেষ্টা করেন৷
ছবি: DW/P.Depont
অজানার আকর্ষণ
উত্তর কোরিয়া গোপনে থাকতেই পছন্দ করে, বলা হয়ে থাকে৷ দেশটি কিন্তু বিদেশি পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে৷ উত্তর কোরিয়ায় পর্যটক হওয়ার অর্থ, বিশেষ ‘গাইড’-রা প্রতিপদে সঙ্গে থাকবে ও নজর রাখবে৷ এ সব সত্ত্বেও পিয়ের ডেপন্ট সাত বার উত্তর কোরিয়া যাত্রা করেছেন ও সেখানকার সাধারণ মানুষদের ছবি তুলেছেন৷
ছবি: DW/P. Depont
পুঁজিবাদের ভূত?
ডেপন্ট প্রথম উত্তর কোরিয়ায় যান ২০১৩ সালে৷ সেযাবৎ কর্তৃত্ববাদী দেশটিতে পরিবর্তন এসেছে, বলে তিনি লক্ষ্য করেছেন৷ বিগত দু’তিন বছরের মধ্যে ‘‘পিয়ংইয়াংয়ে নিজের সম্পদ প্রদর্শন করাটা গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷’’ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সত্ত্বেও পিয়ংইয়াংয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে ও প্রচুর বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে৷
ছবি: Pierre Depont
আলাপ করা সহজ নয়
ডেপন্ট দেখেছেন, পিয়ংইয়াংয়ের রাস্তায় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলা সহজ নয়৷ প্রথমত, গাইডদের একজন সবসময় কান খাড়া করে শোনে৷ দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ফটো তুলতে দিতে বিশেষ পছন্দ করেন না৷ রাস্তাঘাটে মহিলারা ক্রমেই আরো ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে উঠছেন বটে, তবে সেটা প্রধানত বড় শহরগুলোয়৷
ছবি: DW/P. Depont
শহর বনাম গ্রাম
পিয়ংইয়াংয়ের মেট্রো স্টেশনটি দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়: মনে হবে যেন কারুকার্য করা শ্বেতপাথরের দেওয়ালের ওপর সুবিশাল ঝাড়বাতি ঝুলছে৷ ডেপন্টের কাছে উত্তর কোরিয়া ‘‘ফটো তোলার একটা আশ্চর্য জায়গা,’’ কেননা এখানে রাস্তাঘাটে কোনো বিজ্ঞাপন নেই৷ অপরদিকে শহরে স্বাচ্ছল্যের নানা চিহ্ন চোখে পড়লেও, গ্রামাঞ্চলে এখনও চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে৷
ছবি: Pierre Depont
টুরিস্টরা যা দেখতে পান না...
...তা হলো উত্তর কোরিয়ার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের বাস্তবিক পরিস্থিতি৷ সামরিক খাতে বিপুল বিনিয়োগ করলেও, দেশটি কৃষিপ্রধানই রয়ে গিয়েছে৷ ‘‘প্রত্যেকটি ছোট ক্ষেতে চাষ করা হয়, প্রতি বর্গমিটার জমি ব্যবহার করা হয়,’’ বলেছেন ডেপন্ট৷
ছবি: Pierre Depont
মেকি প্রাচুর্য?
টুরিস্টদের শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় বৈকি, তবে বড় বড় কৃষি সমবায়ের গাইডেড টুরে৷ ডেপন্ট দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হামহুং-এর কাছে একটি কৃষি সমবায়ে যাওয়ার সুযোগ পান; সেখানকার ছোট্ট বাজারটিতে সুন্দর করে পণ্য সাজানো ছিল ও অনটনের কোনো চিহ্নই ছিল না – খুব সম্ভবত ‘‘শুধু লোক-দেখানো,’’ বলে ডেপন্ট মন্তব্য করেছেন৷
ছবি: DW/P.Depont
হালফ্যাশনের স্কুল, তবে সবার জন্য নয়
উত্তর কোরিয়ায় টুরিস্ট হিসেবে সেখানকার একটি এলিট স্কুল বা মডার্ন স্কুল না দেখে ছাড় নেই৷ সংডোওয়ান ইন্টারন্যাশনাল সামার ক্যাম্পটি পূর্ণ সংস্কারের পর আবার খোলা হয় ২০১৪ সালে৷ সেখানে ছেলেমেয়েরা সর্বাধুনিক আর্কেড গেম্স নিয়ে খেলছে আর তাদের ব্যবহারের জন্য গোটা বিশেক কম্পিউটার রাখা আছে দেখে ডেপন্টের মনে হয়, দৃশ্যটা ‘‘কিছুটা অবাস্তব৷’’
ছবি: DW/P.Depont
সর্বত্র মিলিটারি
দেশটির সত্তা ও সমাজের প্রাণকেন্দ্র হল মিলিটারি৷ দেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মিলিটারিতে কাজ করে৷ দেশের অর্থনৈতিক ক্ষমতার তুলনায় সামরিক খাতে পিয়ংইয়াংয়ের ব্যয় বিশ্বের বৃহত্তম মিলিটারি বাজেটগুলির মধ্যে পড়ে৷ উত্তর কোরিয়ার কচিকাঁচারা মিলিটারি প্রতীকে অভ্যস্ত – এমনকি খেলার জায়গাতেও৷
ছবি: Pierre Depont
কর্তাভজা
মিলিটারি, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং কিম জং-উন ও তাঁর পূর্বপুরুষদের ঘিরে ‘ব্যক্তি উপাসনা’ – এই হলো উত্তর কোরিয়ার কাহিনি৷ মহান নেতাদের কিংবদন্তিকে বাঁচিয়ে রাখতে ও তাঁদের সুবিশাল মূর্তিগুলোর পরিচর্যায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়, তা দেখে ডেপন্ট চমৎকৃত৷
ছবি: DW/P.Depont
9 ছবি1 | 9
ট্রাম্প তার টুইটে আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওই তিন নাগরিক সুস্থ আছেন এবং কিমের সঙ্গে আলোচনায় দুই নেতার বৈঠকের সময় এবং স্থান ঠিক হয়েছে৷
মুক্তি পাওয়া ওই তিন নাগরিক হচ্ছেন, কিম হ্যাক সং, কিম সাঙ ডাক এবং কিম ডং চুলিস৷
কিম হ্যাক সং উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন৷ তাকে উত্তর কোরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রে'র অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়৷ চীনা বংশোদ্ভূত হ্যাক সং-এর জন্ম চীনে৷ তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন এবং ১০ বছর অ্যামেরিকায় থেকেছেন৷ এরপর কিম কোরিয়ায় যান পড়াতে৷ সেখান থেকে তার নিজের জন্মভূমি চীনে ফেরার কথা ছিল৷
কিম স্যাং-ডাক এর আরেক নাম টনি কিম৷ তিনি চীনের ইয়ানবিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক ছিলেন, যেটি কোরিয়ার সীমান্তের খুব কাছাকাছি৷ তিনি পিয়ংইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াতেন বলে জানা গেছে৷ পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ পীড়িত উত্তর কোরিয়ার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের ত্রাণ দিতেন৷ অ্যাকাউন্টিং বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপককে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তা পরিষ্কার নয়৷
অপরজন দক্ষিণ কোরিয়ার জন্ম হওয়া অ্যামেরিকান কিম ডং চুলিস ২০১৫ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে৷ তার বিরদ্ধে একটি ইউএসভি ডিভাইসে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও সামরিক গোপন তথ্য পাচারের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷
এইচআই/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)
পাঠক, এই লেখাটি পড়ে আপনার কেমন লাগল? নীচের ঘরে আমাদের জানান৷
উত্তর কোরিয়া ও কিম জং উনের বিশেষ কিছু জিনিস
উত্তর কোরিয়ায় যেখানে সাধারণ মানুষ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে, সেখানে নেতা কিম জং উনের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতার কোনো কমতি নেই৷ দেখে নিন তার কিছু নমুনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
অপূর্ব প্রাসাদ
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ এই বিশাল প্রাসাদ রয়েছে৷ কুমসুসান প্রাসাদটি কিম ইল সুং এর সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশ্বে আর কোন কমিউনিস্ট নেতার এমন বিশাল প্রাসাদ নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Guttenfelder
হোটেল
রিউগইয়ং বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেলগুলোর একটি৷ পিরামিড আকারের ১০৫ তলা এ হোটেলের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালে৷ সেই সময় দেশে কিম ইল সুং এর শাসন ছিল৷ কিম ইল সুং ছিলেন কিম জং উনের দাদা৷ এখনও হোটেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap
আকাশে শাসন
উত্তর কোরিয়ার কাছে বিভিন্ন ধরণের এক হাজারটি বিমান আছে, যেগুলোর বেশিরভাগ সোভিয়েত ইউনিয়ন অথবা চীনে তৈরি৷ এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় এমন হেলিকপ্টার, যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং ড্রোন৷ কিম জং উনের কাছে এএএম এবং ট্রিপল এ সিস্টেমের মতো কিছু বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আছে৷
ছবি: Reuters/Kcna
স্কি রিসোর্ট
কিম জং উনের নির্দেশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১,৩৬০ মিটার উঁচুতে মাসিকরিয়ং নামে এক জায়গায় একই নামে একটি স্কি রিসোর্ট বানানো হয়েছে৷ এই স্থানটি উত্তর কোরিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মার্কিন ডলার৷ পর্যটকদের জন্য এখানে ১২০ কক্ষ বিশিষ্ট হোটেল রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
জং উনের মোবাইল নেটওয়ার্ক
শোনা যায়, উত্তর কোরিয়ায় কেবল কিম জং উন এবং তাঁর কাছের মানুষদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ কোরীয় লিংক নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি পরিচালক আহমাদ আল নোয়ামিনি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ এই মোবাইল পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/KCNA via KNS
ব্যক্তিগত দ্বীপ
দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটি গোপন দ্বীপ রয়েছে৷ কিম জং উনের অতিথি হয়ে উত্তর কোরিয়া গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক তারকা৷ এই দ্বীপে রাখা হয়েছিল তাঁকে৷ শোনা যায়, এখানে আনন্দ বিনোদনের সবধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷ কিম জং উনের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার অবতরণের জায়গাও রয়েছে সেখানে৷
ছবি: Tourism DPRK
গল্ফ কোর্স
কিম জং উনের উত্তর কোরিয়ায় অসাধারণ কিছু গল্ফ ক্লাব রয়েছে৷ সরকারি কর্মচারীরা গল্ফ ক্লাবগুলোকে সবসময় ঝকঝকে করে রাখে৷ গল্ফ ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় ফুটবল, বাস্কেটবল, আইস হকি আর কুস্তি জনপ্রিয় খেলা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Kyodo
সেনা ঘাঁটি
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে অনেক যুদ্ধ জাহাজ, টহল নৌকা এবং বড় বড় সামরিক জাহাজ রয়েছে৷ নিজেদের সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করা উত্তর কোরিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য৷ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক শক্তিশালী দেশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দেশটি৷
ছবি: REUTERS/KCNA
বিলাসবহুল গাড়ি
শোনা যায়, ২০১৪ সালে কিম জং উন ১ দশমিক ৬ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন৷ এর মধ্যে মার্সিডিজ বেনৎস, লিমোজিন আর আছে লাক্সারি স্পোর্টস কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
পিয়ানো ভীষণ পছন্দ
শোনা যায়, কিম জং উনের কাছে ২০টিরও বেশি পিয়ানো আছে৷ এমন গুজবও রয়েছে যে, তিনি প্রতিদিনই পিয়ানো বাজান, আর যদি সুরের কোনো গণ্ডগোল হয়, সেটাকে তিনি পিয়ানোর দোষ হিসেবে মনে করেন, নিজের নয়৷
ছবি: Reuters/KCNA
সাবমেরিন
কিম জং উনের কাছে সোভিয়েত আমলের কিছু পুরানো সাবমেরিন রয়েছে৷ এছাড়া দেশটির কাছে আরো বেশ কয়েকটি চীনের সাবমেরিন রয়েছে৷ আর কিছু সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার সেনারা নিজেরাই তৈরি করেছে৷