ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে আচরণবিধি ভাঙার দায়ে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ শনিবার সন্ধ্যায় বিবৃতি দিয়ে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস এই তথ্য জানিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
স্টাম্পে লাথি, আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক, স্ট্যাম্প তুলো আছাড় দেয়া, মাঠ ছাড়ার পর প্রতিপক্ষের ড্রেসিংরুমের কাছে গিয়ে অশালীন আচরণ - এক ম্যাচেই এতগুলো ঘটনা৷ আর যিনি ঘটিয়েছেন তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷ অবিশ্বাস্য হলেও শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ম্যাচে এতগুলো ঘটনার জন্ম দিয়েছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের এই অধিনায়ক৷
ক্রিকেট ইতিহাসে বোর্ড ও ক্রিকেটারের বিবাদ
ক্রিকেটের বোর্ড বা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের দ্বন্দ্বে জড়ানোর অনেক উদাহরণ আছে৷ এমনকি ডন ব্র্যাডম্যানও বাদ যান না সেই তালিকা থেকে৷ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো ছবিঘরে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
ব্র্যাডম্যানের হুমকি
ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরাকেও বোর্ডের সঙ্গে বিবাদে জড়াতে হয়েছিল৷ সময়টা ১৯৩১ সাল৷ লেখালেখির জন্য অ্যাসোসিয়েট নিউজপেপারের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেন ডন ব্র্যাডম্যান৷ অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড অব কন্ট্রোল তাতে বাধ সাধে৷ ব্র্যাডম্যানও সাফ জানিয়ে দেন প্রয়োজনে ক্রিকেট ছাড়বেন তবু চুক্তির অসম্মান করবেন না৷ বিষয়টির সুরাহা হয়েছিল অ্যাসোসিয়েট নিউজপেপারের সম্পাদকীয় প্রধানের মধ্যস্থতায় চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে৷
ছবি: Getty Images/Allsport Hulton
অসিদের টালমাটাল দশক
১৯৭০-এর দশকে খেলোয়াড়াদের সঙ্গে বোর্ডের টানাপোড়েনে অচলাবস্থা তৈরি হয় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে৷ বেতন বাড়ানোর দাবিতে ১৯৭৫ সালে এক পর্যায়ে ক্রিকেটাররা ধর্মঘটেরও হুমকি দেন৷ জবাবে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তখনকার ক্রিকেট বোর্ডের সেক্রেটারি অ্যালান বার্নার বলেছিলেন, পাঁচ লাখ ক্রিকেটার আছেন, যারা বিনা পয়সায় অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে চাইবেন৷ ছবিতে, ১৯৬৩ সালের অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা৷
ছবি: Albert McCabe/Daily Express/Hulton Archive/Getty Images
ক্যারি প্যাকারের ‘বিদ্রোহী লিগ’
অস্ট্রেলিয়ার ‘মিডিয়া টাইকুন’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ক্যারি প্যাকার৷ ১৯৭৬ সালে নিজের মালিকানার চ্যানেল নাইনকে টেস্ট ম্যাচ সম্প্রচারের স্বত্ত্ব না দেয়ায় বোর্ডের উপর ক্ষুব্ধ হন৷ প্রতিশোধ হিসেবে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট নামে আলাদা লিগ চালু করেন৷ ব্যক্তি মালিকানার সেই টুর্নামেন্টের ছিল তিন দল, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর বিশ্ব একাদশ৷ বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডে বড় ধাক্কা লাগে এই টুর্নামেন্টের জেরে৷
ছবি: John Minihan/Hulton Archive/Getty Images
গ্রেগ চ্যাপেল থেকে টনি ক্রেগ
বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা নাম লেখান প্যাকারের টুর্নামেন্টে৷ এমনকি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক টনি ক্রেগ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ইমরান খান, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি পর্যন্ত যোগ দিয়েছিলেন বিতর্কিত এই সিরিজে৷ মাত্র তিন বছর চললেও দিবারাত্রি ম্যাচ, সাদা বল থেকে শুরু করে আধুনিক ক্রিকেটের অনেক কিছুরই অবদান এই টুর্নামেন্টের৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
ভারতের বৃহৎ ছয়
সময়টা ১৯৮৮৷ অধিনায়ক দিলীপ ভেংসরকারের (ছবিতে) সাথে বিসিসিআই-এর সম্পর্ক আগে থেকেই খারাপ যাচ্ছিল৷ সঙ্গে যোগ দেন কপিল দেব, কিরণ মোরে, অরুন লাল, আজহারউদ্দিন ও রবি শাস্ত্রী৷ ম্যানেজমেন্টকে শর্ত মানাতে বাধ্য করে চুক্তি সই করেন তারা৷ এক বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে ক্যানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেয়ায় ছয়জনকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে বোর্ড৷ আদালতের মধ্যস্থতায় পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়৷
ছবি: Simon Bruty/Getty Images
বিতর্কিত কপিল
ভারতের ক্রিকেট গ্রেটদের তালিকায় কপিল দেবের নামটি চোখ বন্ধ করেই আসবে৷ তার হাতেই উঠেছিল দেশটির প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপাও৷ কিন্তু বিতর্কের পাল্লাটাও কম ভারি নয় কপিলের জন্য৷ খেলোয়াড়ী জীবনে সতীর্থ সুনিল গাভাস্কারের সঙ্গে ‘কথিত’ দ্বন্দ্ব আর খেলা ছাড়ার পরে বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ হিসেবে পরিচিত আইসিএল দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চক্ষুশূল হয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার৷
ছবি: AP
নির্বাচকরা জোকারের দল!
ভারতের আরেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার মহিন্দর অমরনাথ৷ সুনীল গাভাস্কার যাকে ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সাহসী ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিহিত করেছিলেন৷ তবে টেস্ট দলে তার জায়গাটা তেমন পাকাপোক্ত ছিল না৷ সব সময়ই থাকতেন আসা-যাওয়ার মধ্যে৷ এমন পরিস্থিতিতে ১৯৮৮ সালে তিনি ভারতীয় নির্বাচকদের অভিহিত করেছিলেন ‘একগুচ্ছ জোকার’ বলে৷ পরে নিজেও অবশ্য নির্বাচক হয়েছেন৷ বোর্ডের সঙ্গে সেসময় দ্বন্দে জড়িয়ে খবরের শিরোনামও হয়েছেন৷
ছবি: Adrian Murrell/Getty Images
হিথ স্ট্রিক ও সতীর্থরা
দল নির্বাচন নিয়ে প্রতিবাদ ও নির্বাচকদের সমালোচনার জেরে ২০০৪ সালে বরখাস্ত হন জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক৷ মাত্র ৩০ বছর বয়সেই খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানতে বাধ্য হন দেশটির বিশ্বমানের এই বোলার৷ তবে স্ট্রিকের বিদায়ের প্রতিবাদ, ন্যুনতম মজুরি ও খোলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন গঠনের দাবিতে দরখাস্ত দেন তার ১৫ সতীর্থ৷ পরে তারাও দেশের হয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানান৷
ছবি: Graham Chadwick/Getty Images
গেইলদের বিদ্রোহ
২০০৫ সালের স্পন্সর চুক্তির পর থেকেই খেলোয়াড়দের নিয়ে সংকটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড৷ সবচেয়ে বড় তিক্ততাটি তৈরি হয় ২০০৯ সালের বার্ষিক চুক্তির সময়ে৷ ক্রিস গেইল, শিবনারায়ন চন্দরপাল, ডোয়াইন ব্রাভোসহ আরো দশ খেলোয়াড় চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়৷ ফলাফল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আনকোরা দল নিয়ে ভরাডুবির শিকার হয় ক্যারিবীয়রা৷ খেলোয়াড়-বোর্ডের এই দ্বন্দ্বে এখনও ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট৷
ছবি: AP
সাম্প্রতিক উদাহরণ
বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কেভিন পিটারসনের৷ পাওনা নিয়ে খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন আর বোর্ডের দ্বন্দ্বে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে অচলাবস্থা তৈরি হয় ২০১৭ সালেও৷ পাকিস্তানেও বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দূরত্ব আছে৷ সবশেষ পেসার আমীর নিজের ক্যারিয়ারের জন্য দুষেছেন বোর্ডকে৷ ১১ দফা দাবিতে সাকিবের নেতৃত্বে ২০১৯ সালে নজিরবিহীন ধর্মঘটের ডাক দেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা৷
ছবি: bdnews24.com
10 ছবি1 | 10
গতকাল সারাদিনই ঘটনাটি আলোচনায় ছিল বাংলাদেশের গণমাধ্যমে৷ খবর হয়েছে বিভিন্ন বিদেশি সংবাদমাধ্যমেও৷ একদিন পর এই ঘটনার জন্য সাকিবের শাস্তি নির্ধারণ করেছে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, আচরণবিধি ভাঙায় মোহামেডান অধিনায়ককে প্রতিযোগিতার পরবর্তী তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাও গুণতে হবে সাকিবকে৷
অবশ্য আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায়ই ফেইসবুক পোস্টে, ‘মেজাজ হারানোর জন্য ও ম্যাচ নষ্ট করার জন্য' দুঃখপ্রকাশ করেন সাকিব৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার মতো একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের উচিত হয়নি এভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো, কিন্তু কখনও কখনও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সবকিছুর বিরুদ্ধে এরকম হয়ে যায়৷’’
বিষয়টিকে ‘মানবিক ভুল' উল্লেখ করে সাকিব বলেন, ‘‘এজন্য আমি দলগুলির কাছে, ম্যানেজমেন্ট, টুর্নামেন্ট অফিসিয়ালস ও আয়োজক কমিটির কাছে ক্ষমা চাইছি৷ আশা করি, ভবিষ্যতে আমি আর এরকম করব না৷’’
এফএস/এআই (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
দেখুন ২০১৯ সালে ছবিঘর...
২০১৯: নিষিদ্ধ সাকিব, প্রসিদ্ধ সাকিব
জুয়াড়ির সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি প্রকাশ না করার অপরাধে এ বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ তবে তার আগে-পরে এত অর্জন আর স্বীকৃতি জুটেছে যে এমন কলঙ্কের পরও ক্রিকেট তারকাদের মাঝে আরো উজ্বল হয়েছে তাঁর নাম৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Getty Images/AFP/W. West
বিশ্বকাপে সবচেয়ে উজ্জ্বল
২০১৯ বিশ্বকাপে আট ম্যাচ খেলে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন সাকিব৷ বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক আসরেই করেছেন ৬০০-র বেশি (৬০৬) রান এবং বাঁ হাতি স্পিনে নিয়েছেন ১০টির বেশি (১১) উইকেট৷ অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকায় প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কার তার হাতে উঠবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই৷ তবে শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটা জিতে নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ
গত অক্টোবরে হঠাৎ করেই আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুব হতাশার, খুব লজ্জার এক খবর৷ জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার তথ্য গোপন করায় সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে দু বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি৷ তবে দোষ স্বীকার করায় এক বছর পর, অর্থাৎ ২০২০ সালের অক্টোবরেই ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন তিনি৷
ছবি: bdnews24.com
উইজডেন অ্যালমানাকের স্বীকৃতি
উইজডেন অ্যালমানাকের গত এক দশকের সেরা ওয়ানডে একাদশে স্থান পেয়েছেন সাকিব৷ এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার দশকসেরা একাদশে সুযোগ পেলেন৷
ছবি: Getty Images/M. Melville
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার একাদশে
উইজডেনের পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও দশকসেরা ওয়ানডে একাদশে রেখেছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
ফক্স স্পোর্টসের তালিকাতেও সাকিব
দশক শেষের আগে ফক্স স্পোর্টস এশিয়াও সেরা ওয়ানডে একদাশ নির্বাচন করেছে৷ সেখানেও আছেন এক দশকে ১৩১ টি ওয়ানডেতে ৩০.১৫ গড়ে ১৭৭টি উইকেট নেয়া এবং ৩৮.৮৭ গড়ে ৪ হাজার ২৭৬ রান করা সাকিব৷
ছবি: Getty Images/H. Trump
সবাই খোঁজে তাকে
সম্প্রতি বার্ষিক সার্চ ট্রেন্ড প্রকাশ করেছে গুগল৷ তাতে দেখা গেছে, সারা বছর সাকিবকেই সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে৷ সেখানে ‘পিপল’ বিভাগে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই বিজ্ঞাপন৷