সুইং স্টেটে প্রচারে হ্যারিস, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নতুন মামলা
২২ অক্টোবর ২০২৪
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। হ্যারিস ও ট্রাম্প প্রচারে ব্যস্ত। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নতুন মামলা।
বিজ্ঞাপন
কমলা হ্যারিস প্রচার করলেন পেনসিলভানিয়া, উইসকন এবং মিশিগানে। তার সঙ্গে ছিলেন লিজ চেনি। লিজ হলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে। বাবা, মেয়ে দুজনেই রিপাবলিকান নেতা, কিন্তু তারা প্রকাশ্যে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন। রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে থাকা ভোট যাতে তার দিকে আসে, লিজকে নিয়ে সেই চেষ্টা করলেন হ্যারিস।
২০১৬ সালে তিনটি রাজ্যেই ট্রাম্প সেই সময়ের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের থেকে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে বাইডেন এই তিনটি রাজ্যে জিতেছিলেন। সেজন্যই হ্যারিস এই তিন সুইং স্টেটকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই তিন রাজ্যে এগিয়ে থাকতে পারলে প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে যাবেন হ্যারিস।
অ্যামেরিকায় কিছু রাজ্য আছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটরা সাধারণত জেতে, কিছু রাজ্যে রিপাবলিকানরা। কিছু রাজ্য আছে, যা কখনো ডেমোক্র্যাট, কখনো রিপাবলিকান প্রার্থীরা জেতেন। সেগুলিকেই সুইং স্টেট বলা হয়। এই রাজ্যগুলিই ভোটের ফল নির্ধারণ করে।
হ্যারিস ও চেনি কি বললেন?
চেনির সঙ্গে তিনটি টাউন হল ইভেন্ট করেছেন হ্যারিস। পেনসিলভানিয়ায় রক্ষণশীল রেডিও হোস্ট ম্যালবার্ন মডারেটর ছিলেন। হ্যারিস সেখানে ট্রাম্পের মানসিক স্থিতি এবং প্রেসিডেন্টের পদে বসার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
হ্যারিস বলেন, অনেক ভাবেই ট্রাম্প সিরিয়াস মানুষ নন। কিন্তু তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে তা গুরুতর হতে বাধ্য।
কমলা হ্যারিস: অনেক প্রথমের এক নারী
কমলা হ্যারিস অনেক দিক দিয়েই ‘অ্যামেরিকার ইতিহাসে প্রথম’ হিসাবে নাম লিখিয়েছেন। প্রথম নারী এবং প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট কি তিনি হতে পারবেন?
ছবি: Tony Avelar/AP/dpa/picture alliance
অভিবাসীদের পরিবার
কমলা দেবী হ্যারিস ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডোনাল্ড জে. হ্যারিস একজন বিখ্যাত মার্কিন-জ্যামাইকান বিজ্ঞানী। মা শ্যামলা গোপালন হ্যারিস একজন বিখ্যাত ভারতীয় বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানী, যিনি স্তন ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এই ছবিটিতে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে মায়ের ল্যাবে কমলা হ্যারিসকে দেখা যাচ্ছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর কমলা হ্যারিস (বামে) এবং তার ছোট বোন মায়া মায়ের সঙ্গেই থাকতেন।কমলার বয়স যখন ১২, তখন তার পরিবার ক্যানাডার মন্ট্রিলে চলে যায়। গোপালন হ্যারিস ২০০৯ সালে ক্যান্সারে মারা যান। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন গ্রহণ করার সময় কমলা তার মায়ের সম্পর্কে বলেছিলেন, "তিনি ভারতীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে এবং তা নিয়ে গর্বিত হওয়ার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছেন।"
ছবি: picture-alliance/dpa/Kamala Harris Campaign
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
হ্যারিসের বাবা-মা দুজনেই নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আত্মজীবনীতে কমলা লিখেছেন, বাবা-মায়ের এই অবস্থান তার নিজের কর্মজীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। ১৯৮২ সালের নভেম্বরের এই ছবিতে ১৮ বছর বয়সি কমলাকে ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।
ছবি: Courtesy of Kamala Harris/AFP
ক্যালিফোর্নিয়ায় আইন বিষয়ে পড়াশোনা
১৯৮৬ সালে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর সান ফ্রান্সিসকোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেস্টিংস কলেজ অফ ল-তে পড়তে যান কমলা। ১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার আলামেডা কাউন্টিতে ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসাবে কর্মজীবন শুরু হয় কমলার।
ছবি: Avalon/Photoshot/picture alliance
সান ফ্রান্সিসকোর শীর্ষ প্রসিকিউটর
২০০৪ সালে কমলা সান ফ্রান্সিসকোর প্রথম নারী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসাবে শপথ নেন। এই পদে থাকা প্রথম অকৃষ্ণাঙ্গ নারীও তিনি। তার শপথ গ্রহণের সময় তার মা (মধ্যে) তার হাতে ইউএস বিল অফ রাইটসের একটি অনুলিপি ধরে রাখেন। এই নথিটিতে সংবিধানের প্রথম ১০টি সংশোধনী রয়েছে এবং নথিটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকার এবং সরকারি ক্ষমতার সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়।
ছবি: George Nikitin/AP Photo/picture alliance
জেলা অ্যাটর্নি থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল
২০১১ সালের জানুয়ারিতে কমলা ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে আসীন হন। এই পদেও প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে নেয়া কর্মসূচিকে সমর্থন জানানোর কারণে তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
ছবি: Rich Pedroncelli/AP Photo/picture alliance
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন কমলা। নির্বাচনে তিনি জয়ীও হন। অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং তৎকালীন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শপথ নেন। এই শপথ অনুষ্ঠানে তার স্বামী ডগলাস এমহফ তার পাশে বাইবেল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। ডগলাস এমহফ একজন বিনোদন খাতের আইনজীবী। তাদের বিয়ে হয়েছিল ২০১৪ সালে।
ছবি: Kevin Wolf/AP/dpa/picture alliance
বাইডেনের মুখোমুখি
২০১৯ সালের শুরুর দিকে কমলা ঘোষণা দেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন চাইবেন তিনি। ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স (মধ্যে) এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ছিল তার দলীয় মনোনয়নের লড়াই। তবে পরে নাম প্রত্যাহার করে বাইডেনকে সমর্থন জানান তিনি। আগস্টে বাইডেন নির্বাচনে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে কমলার নাম ঘোষণা করেন।
ছবি: SAUL LOEB/AFP/Getty Images
প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে বিজয়ী
২০২০ সালের নভেম্বরে কমলা এবং বাইডেন জুটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় নিয়ে আসেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ এর সময় ডেলাওয়ার রাজ্যের উইলমিংটনে ঐতিহাসিক জয় উদযাপন করছেন কমলা এবং বাইডেন।
ছবি: Andrew Harnik/AP/dpa/picture alliance
রাজনীতিতে আরেকটি প্রথম
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। এই পদে অধিষ্ঠিত প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিও তিনি। ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকদের ইউএস ক্যাপিটল বিল্ডিং আক্রমণের পর এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আয়োজন করা হয়েছিল।
ছবি: Rachel Wisniewski/REUTERS
অভিবাসন মোকাবিলায় কাজ
বাইডেন কমলাকে প্রথম যে কাজগুলোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে অভিবাসনের মূল কারণ অনুসন্ধান করা। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ২০২১ সালের জুন মাসে গুয়াতেমালাসহ বিভিন্ন দেশ পরিদর্শন করেছিলেন তিনি। অনিয়মিত অভিবাসনের সমস্যাটি সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় বারবারই রিপাবলিকান পার্টি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কমলাকে।
ছবি: Jacquelyn Martin/AP Photo/picture alliance
ইউক্রেন ও ন্যাটোর কট্টর সমর্থক
বাইডেনের মতোই কমলাও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন শক্তিশালী সমর্থক। রাশিয়ার পদক্ষেপকে "নিষ্ঠুর," "ভয়াবহ" এবং "ভয়ঙ্কর" হিসাবে বর্ণনা করে এসেছেন তিনি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে কমলা ন্যাটো এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সমর্থনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান তার।
ছবি: TOBIAS SCHWARZ/AFP/Getty Images
গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার
গর্ভপাতের ইস্যুতেও রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে কমলা হ্যারিস। ইউএস সুপ্রিম কোর্ট রো বনাম ওয়েড মামলার রায় বাতিল এবং ২০২২ সালের জুনে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বিলুপ্ত করার পর তিনি সন্তান জন্ম দেয়ার স্বাধীনতা নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তরুণ ভোটারদের জন্য এই ইস্যুটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে অনেক রিপাবলিকান গর্ভপাতের অধিকার আরও সীমিত করতে চান।
ছবি: Justin Sullivan/Getty Images
২০২৪ নির্বাচনে কমলার সম্ভাবনা কতটুকু?
ডেমোক্র্যাটরা আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে বেছে নিলে তার নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেয়া এবং প্রচারণা চালানোর জন্য মাত্র ১০০ দিন হাতে থাকবে। রবিবার থেকে তিনি এরই মধ্যে তিনি অনেক ডেমোক্র্যাটের অনুমোদন এবং লাখ লাখ ডলার অনুদান পেতে শুরু করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, অশ্বেতাঙ্গ ভোট আকৃষ্ট করলেও বর্ণবাদী এবং যৌনতাবাদী মনোভাব তার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
ছবি: Kevin Dietsch/Getty Images
14 ছবি1 | 14
তিনি বলেছেন, ট্রাম্প যদি নভেম্বরের নির্বাচনে জেতেন, তাহলে রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের পতন হতে বাধ্য। পররাষ্ট্রনীতির প্রসঙ্গে চেনিও বহুবার ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন।
চেনি মিশিগানের ইভেন্টে বলেছেন, তিনি অনেক রিপাবলিকানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, কী কথা হয়েছে, তা তিনি প্রকাশ্যে জানাতে পারবেন না। তবে তারা যে ঠিক কাজটা করবেন, তা নিয়ে চেনির মনে কোনো সংশয় নেই।
চেনি বলেছেন, ''আমি শুধু এটা মনে করিয়ে দিতে চাই, যদি আপনারা উদ্বিগ্ন হন, তাহলে আপনারা নিজেদের বিবেক অনুযায়ী ভোট দিন। কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।''
চেনির সমালোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ট্রাম্প
সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, চেনি হলেন যুদ্ধবাজ। তিনি হ্যারিসের ইভেন্টে চেনির যাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তা বুঝিয়ে দেন।
তিনি অভিযোগ করেন, আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধে তার ভূমিকার জন্য ডিক চেনিকে মানুষ চেনে। তিনি সব মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইতেন। তিনিই মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের জন্য বুশকে বাধ্য করেছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা
ট্রাম্প গত মাসে বিতর্কের সময় সেন্ট্রাল পার্কে ১৯৮৯ সালের একটি হত্যা নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। এই অভিযুক্তদের বলা হয় সেন্ট্রাল পার্ক ফাইভ। প্রথমে তাদের পাঁচ থেকে ১৩ বছরের জেল হয়। তবে আরেকজনের সাক্ষ্য ও ডিএনএ তথ্যের ভিত্তিতে তারা ছাড়া পায়।
ট্রাম্প প্রচারে বলেছিলেন, তারা একজনকে খুন করেছিল এবং দোষ স্বীকারও করেছিল।
তদন্তের প্রথম দিকে পাঁচ কিশোর অপরাধ স্বীকার করে। তারপরেই তারা জানায়, তারা চাপের মুখে এই কথা বলেছিল এবং বিচারের সময় তারা বলে, তারা নির্দোষ।
এই বিষয়টি নিয়েই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আরেকটি অসার মামলা করা হয়েছে।