রাজপরিবারের তিন সদস্যকে আটক করেছে সৌদি প্রশাসন৷ তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এমন তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি রাজপরিবারের তিন সদস্যকে শুক্রবার অভ্যুত্থান পরিকল্পনার অভিযোগে আটক করা হয়েছে৷ তাদের একজন বর্তমান রাজা সালমানের ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ৷ আছেন রাজার ভাইয়ের ছেলে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফও৷
শুক্রবার তাদেরকে নিজেদের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে রয়্যাল গার্ডের সদস্যরা৷ নাম প্রকাশ না করে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল৷
এই দুইজনকে একসময় দেশটির সিংহাসনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ তারা বর্তমান রাজা এবং যুবরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত হয়েছেন সৌদি রাজ আদালতে৷ এই দুইজন ছাড়াও প্রিন্স নায়েফের ছোট ভাই প্রিন্স নওয়াফ বিন নায়েফকেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিয় ইয়র্ক টাইমস৷ তবে এই বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ৷
৮৪ বছর বয়সী সালমান বর্তমানে সিংহাসনে থাকলেও কার্যত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই দেশটির প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন৷ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যারা হুমকি হতে পারে রাজপরিবারের এমন সদস্যদের বন্দী ও বিচারের মুখোমুখি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে৷
নতুন করে রাজপুত্রদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপকে যুবরাজের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা৷
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেন্ড কর্পোরেশনের বিশ্লেষক বেকা ওয়াসার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ক্ষমতা বিস্তারে যারা হুমকি তাদের এরইমধ্যে জেলে দিয়েছেন প্রিন্স মোহাম্মদ, সমালোচকদের হত্যা করেছেন৷ বর্তমান পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে রাজপরিবারের সদস্যসহ অন্যদেরকেও নতুন করে তিনি বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করেন ওয়াসার৷
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে প্রিন্স নায়েফ সৌদি আরবের সাবেক ক্রাউন প্রিন্স এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন৷ ২০১৭ সালে তাকে হটিয়ে ক্রাউন প্রিন্স হন মোহাম্মদ৷ অন্যদিকে সত্তরোর্ধ্ব প্রিন্স আহমেদ লন্ডনে বসবাস করতেন৷ সাংবাদিক জামাল খাশোগজি হত্যার পর তিনি সৌদি আরব ফিরে আসেন৷
দেশে ফেরার আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে আহমেদের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে৷ খাশোগজি হত্যা প্রসঙ্গে সেখানে তিনি বলেন, ‘‘রাজপরিবার এই বিষয়ে কী করতে পারে৷ এর জন্য দায়ী নির্দিষ্ট কয়েকজন...রাজা এবং যুবরাজ৷'' তার এই মন্তব্যকে সৌদি রাজপরিবারের নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে বিরল এক সমালোচনা হিসেবে দেখা হয়েছিল৷ যদিও আহমেদ পরে দাবি করেছেন তাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে৷
এফএস/এডিকে (এপি, এএফপি)
দেখুন ২০১৭ সালের ছবিঘরটি...
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷