1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন হাজার কোটি টাকার স্বীকারোক্তি শামীমের

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ নভেম্বর ২০১৯

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম তার সুবিধাভোগীদের নাম প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে৷ প্রকাশ করেছে তার সম্পদের পরিমাণও৷ কিন্তু দুদক তাদের চার্জশিটে তার অবৈধ সম্পদের বিষয়টিই রাখবে, সুবিধাভোগীদের নয়৷

ছবি: bdnews24.com

 তবে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি দুদক৷

দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি টিম জিজ্ঞাসাবাদ করছে জি কে শামীমকে৷ জানা গেছে, দুই বছর আগে একটি রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে চার কোটি টাকা দেন তিনি৷ ওই সংগঠনকে মাসে দিতেন ৫০ লাখ টাকা৷ আর যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান হলেই দিতেন ১০ লাখ টাকা৷ সংগঠনটির শীর্ষ নেতাকে এরই মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে৷

এর বাইরে গণপূর্তের প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তিনি নিয়মিত মাসোহারা দিতেন৷ তার এই মাসোহারায় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও প্রশাসন, সাংবাদিক এবং সেলিব্রেটি বা তারকারাও রয়েছেন৷ তারকাদের তিনি মূলত দেশে ও দেশের বাইরে প্রমোদ ভ্রমণে পাঠাতেন৷

জি কে শামীম গণপূর্তের অধীনে ঠিকাদারির একচ্ছত্র কাজ করলেও তার সিন্ডিকেটে ওয়াসা, মেডিক্যাল, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড আছে৷ এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি যারা করেন তাদের একটি অংশ তার সিন্ডিকেটের সদস্য৷

দুদক সাত দিনের রিমান্ডে জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে রোববার থেকে৷ আর যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে সোমবার থেকে৷

জি কে শামীমের সম্পদ কত?
জানা গেছে জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদের কথা স্বীকার করেছেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় তার সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন৷ তিনি দুবাইতে বসবাসের কথা ভাবছিলেন৷ ডিসেম্বর মাসেই সেখানে তার ফ্ল্যাট কেনার কথা ছিল৷

জি কে শামীমের অসুস্থতার দাবি
রোববার জি কে শামীমকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনার পর পরই বুকে ব্যথার কথা জানান তিনি৷ এরপর দুদকের নিজস্ব চিকিৎসক ডেকে এনে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়৷ চিকিৎসক সবকিছু পরীক্ষা করে স্বাভাবিক বললে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে ব্যর্থ হন৷ জানা গেছে, এখন জি কে শামীম স্বাভাবিকভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন৷ তবে তাকে যেকোনো প্রশ্ন একাধিকবার জিজ্ঞাসা করলে তিনি বেশ ভেবেচিন্তে জবাব দেন৷

দুদকের লক্ষ্য

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর দুদক এ পর্যন্ত নয়টি দুর্নীতির মামলা করেছে, যার মোট আসামি ১৬ জন৷ জি কে শামীমের বিরুদ্ধে মামলায় ২৯৭ কোটি আট লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক৷ আর খালেদের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আনা হয়েছে৷ জানা গেছে, দুদক মামলার চার্জশিটে তাদের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা সুবিধাভোগীদের বিষয় থাকবে না৷ তারা এসব ব্যাপারে বাড়তি যে তথ্য দিচ্ছেন তা দুদকে আর্কাইভ আকারে নথিভূক্ত করা হবে৷ ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে এইসব তথ্য নিয়ে আলাদা তদন্ত হবে৷ দুদক যুবলীগ নেতা সম্রাট, আরমান, মিজান ও রাজীবের বিরুদ্ধেও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে৷

জি কে শামীম বা খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদে কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছু জানায়নি সংস্থাটি৷ তবে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য আমরা যাচাই বাছাই করব৷ আমরা দেখব এরমধ্যে কতটুকু সারবত্তা আছে৷ তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো আরো মামলা হবে কিনা বা আমরা কতটুকু এগুবো৷ তার আগে কিছু বলা যাবে না৷’’

‘আমরা প্রধানত তার অর্থের উৎস, সুবিধাভোগী, সম্পদের পরিমাণ এইসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি’

This browser does not support the audio element.

মামলার ধরন:
গত ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে র‌্যাব৷ এরপর পর্যায়ক্রমে খালেদ, সম্রাট ও আরমানসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ২৭৩ জনকে আটক করা হয়৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা, অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম৷

শামীম, খালেদ, সম্রাট ও আরমানদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতি দমন আইনে তিন ধরনের মামলা হয়েছে৷ এরইমধ্যে র‌্যাব জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে৷

শুরুতে শামীমকে আটকের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷ এরপর র‌্যাব তদন্তের দায়িত্ব পায়৷ ডিবি উত্তরের উপ কশিনার মশিউর রহমান বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা কী পেয়েছি তা প্রকাশ করা যাবে না৷ তবে আমরা যা পেয়েছি তা সবই র‌্যাবকে পাঠিয়েছি৷ আমরা প্রধানত তার অর্থের উৎস, সুবিধাভোগী, সম্পদের পরিমাণ এইসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি৷’’

এদিকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে যে তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে ওই তথ্য তারা দেননি৷ আর মঙ্গলবার চেষ্টা করেও র‌্যাবের দায়িত্বশীল কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ