ভারতের অরুণাচল সীমান্তের কাছ পর্যন্ত বুলেট ট্রেন চালু করেছে চীন। আশঙ্কায় ভারত।
বিজ্ঞাপন
ফের চীন-ভারত সংঘাতের পরিস্থিতি। এবারের সংকট একটি রেললাইনকে ঘিরে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচলের সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত রেললাইন পেতেছে চীন। গত সপ্তাহে সেখানে বুলেট ট্রেন চালাতে শুরু করেছে শি জিনপিংয়ের সরকার। এর ফলে তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে অরুণাচল সীমান্ত পর্যন্ত খুব সহজেই পৌঁছানো যাবে। সরকারিভাবে ভারত এ বিষয়ে এখনো কোনো বিবৃতি না দিলেও, বিষয়টি নিয়ে যে খুশি নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রকের এক কর্মকর্তা।
গতবছর জুন মাসে লাদাখে ভারত এবং চীন তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের সেনার হাতাহাতিতে বেশ কিছু জওয়ান এবং অফিসারের মৃত্যু হয়। এরপর সংঘাতের বাতাবরণ বেশ অনেক মাস চলে। দুই দেশের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয় এবং শেষপর্যন্ত দুই দেশই উত্তেজনা প্রশমনের কিছু ব্যবস্থা করে। সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের উত্তেজনা কমেনি, তা আরো একবার প্রমাণিত হলো।
প্যাংগং থেকে সরে গেল ভারত-চীনের সেনা
দীর্ঘ আট মাস পরে প্যাংগংয়ের বিতর্কিত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নিল ভারত ও চীন। কিন্তু গালওয়ানের সমস্যা এখনো কাটেনি।
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
প্যাংগং বিতর্ক
গত বছর মে-জুন মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে প্যাংগং লেক ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ভারত এবং চীনের সেনার। ফিঙ্গার পয়েন্ট তিন থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট আট পর্যন্ত এলাকা কার দখলে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Manish
প্যাংগংয়ের দক্ষিণে ভারতের শক্তি
বিতর্কের মধ্যেই প্যাংগং লেকের দক্ষিণে দুইটি পাহাড়ের দখল নেয় ভারতীয় সেনা। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় চীন। কিন্তু ভারতীয় সেনা এলাকা ছাড়তে রাজি হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
লাগাতার বৈঠক
সীমান্তে প্রবল উত্তেজনার মধ্যেই একের পর এক বৈঠক করে দুই দেশের সেনা। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীরাও একাধিক বৈঠক করেন। অবশেষে সেনাদের বৈঠকে সমাধানসূত্র মেলে।
ছবি: Eesha Kheny
সেনা প্রত্যাহার
দুই দেশের সেনাই এপ্রিলের পূর্ববর্তী সময়ে নিজেদের অবস্থানে ফিরে যেতে সম্মত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের সেনা যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানায়, প্যাংগং থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: AFP/X. Galiana
স্থায়ী কাঠামো ভাঙা হলো
প্যাংগংয়ের ধারে চীন যে স্থায়ী সেনা কাঠামো তৈরি করেছিল, বুলডোজার দিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জামও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: AFP/X. Galiana
গালওয়ান বিতর্ক
প্যাংগং থেকে সেনা সরলেও, গালওয়ান বিতর্ক নিয়ে এখনো সমাধানসূত্র মেলেনি। এই গালওয়ানেই গত বছর জুনে ভারত এবং চীনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল। বহু ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/I. Abbas
চীনের স্বীকারোক্তি
গালওয়ান সংঘর্ষের পরে চীন নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। ভারতীয় সেনা দাবি করেছিল, চীনের সেনারও মৃত্যু হয়েছে। এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে চীন জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদেরও চার সেনা জওয়ান এবং একজন অফিসারের মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: Yawar Nazir/Getty Images
চীনের ভিডিও প্রকাশ
গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চীন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চীন যে বিবৃতি দিয়েছে, তা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ছবি: Reuters/PLANET LABS INC
লাদাখ সংঘাতের ভবিষ্যত
প্যাংগং অঞ্চল থেকে সৈন্য সরলেও লাদাখ সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না। কারণ, প্যাংগং থেকে সৈন্য সরলেও বাকি এলাকায় এখনো সেনা মোতায়েন করে রেখেছে দুই দেশেরই সেনা। এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
9 ছবি1 | 9
চীনের পত্রিকা লিখেছে, গত বছর নভেম্বর মাসে শি জিনপিং তিব্বতে নতুন বুলেট ট্রেনের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। তারপর দ্রুত গতিতে গোটা প্রকল্প শেষ করা হয়। এর ফলে লাসা থেকে নিংচি পর্যন্ত প্রায় ৪৩৫ কিলোমিটারের রাস্তা সহজেই পৌঁছে যাবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এই বুলেট ট্রেন। তিব্বতে এই প্রথম বুলেট চালু করল চীন। এর আগে আর একটিই মাত্র রেল লাইন চালু ছিল সেখানে। যার সাহায্যে লাসা থেকে নিংচি পৌঁছাতে যা সময় লাগত, নতুন ট্রেনে তার চেয়ে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা কম সময় লাগবে।
তিব্বতের নিংচি অঞ্চল অরুণাচলের গায়ে। চীন বহুদিন ধরেই দাবি করে অরুণাচল তিব্বতের অংশ। অর্থাৎ, চীনের। ভারত বরাবরই এ দাবি নস্যাৎ করে দেয়। এই বিতর্ক নিয়ে ষাটের দশকে ভারত-চীন যুদ্ধও হয়েছে। চীন বহু সময়েই অরুণাচলের কাছে সৈন্য পাঠিয়ে দেয়। সাম্প্রতিক অতীতে চীনের সেনা অরুণাচলে ধরাও পড়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বুলেট ট্রেন চালু হওয়ায় চীন অনেক সহজে অরুণাচল সীমান্তে পৌঁছতে পারবে। মনে রাখা দরকার, গত বছর ভারতের তৈরি একটি রাস্তা নিয়েই লাদাখে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। চীনের বক্তব্য ছিল, সীমান্তের অত কাছে ভারত ওই ধরনের রাস্তা তৈরি করতে পারে না। ভারতও চীনের রেলপথ নিয়ে কোনো বিবৃতি প্রকাশ করে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।