জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তিব্বতে হিমবাহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছে৷ ফলে বাংলাদেশ-ভারত সহ এশিয়ার অনেক দেশেই জলের সংকট দেখা দিতে পারে৷ বড় নদ-নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও বাঁধ নির্মাণ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে৷
বিজ্ঞাপন
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে বেড়ে চলেছে, তা জানার জন্য আর বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন হচ্ছে না৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ প্রতি বছর তা অল্প অল্প করে অনুভব করছেন৷ তবে এর সামগ্রিক প্রবণতা ও প্রভাব সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি রয়েছে৷
চীনের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবার এমনই এক চাঞ্চল্যকর প্রবণতার খবর প্রকাশ করেছে৷ চীনা বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির ‘ইনস্টটিটিউট অফ টিবেটান প্ল্যাটো রিসার্চ'-এর সূত্র অনুযায়ী, তিব্বতের মালভূমির হিমবাহের তাপমাত্রা গত ৫০ বছরে আশঙ্কাজনক মাত্রায় বেড়ে গেছে – যা গোটা বিশ্বের গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ! গত দুই হাজার বছরে এমন অঘটন দেখা যায়নি৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দ্বীপগুলো
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকেই বিশ্বের অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে পড়বে, বাড়বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষে মানুষে হানাহানি৷ আইপিসিসি-র রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পৃথিবীর স্বর্গ হারানোর পথে
বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ মালদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত৷ ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে এটি পুরোপুরি তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷
ছবি: picture alliance/chromorange
বন্যার প্রকট আকার
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্ন ভৌগলিক অবস্থান এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে দেশটি৷ সাগরের পানির উচ্চতা মাত্র তিন ফুট বেড়ে গেলেই দেশের অর্ধেক পানির নীচে তলিয়ে যাবে৷
ছবি: Tareq Onu
পানিতে নিমজ্জিত সম্পদ
সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে এরই মধ্যে দ্বীপগুলোর নিম্নাঞ্চল থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছে অনেকেই৷ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিরিবাটি দ্বীপপুঞ্জের কিছু গ্রাম এরই মধ্যেপানিতে তলিয়ে গেছে৷ ফসলি জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় বেশ চিন্তিত সেখানকার চাষীরা৷
ছবি: AFP/Getty Images
তাপমাত্রা বৃদ্ধি
আইপিসিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই শতকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ০.৩ থেকে ৪.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ এমনকি শিল্পকারখানা যেখানে বেশি সেখানে গড়ে ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে৷ ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রে পানির উচ্চতা বাড়বে ২৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার৷
ছবি: picture-alliance/AP
সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে বসবাস
সমুদ্রের পানি থেকে বাঁচার উত্তম পন্থা জানা আছে ডাচদের৷ প্রায় ১০০০ বছর আগে বন্যার হাত থেকে বাঁচতে তারা প্রথম পরিখা নির্মাণ করেছিল৷ এ কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ নির্বিঘ্নে দিন কাটাচ্ছে সেখানে৷ তবে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও ভাবছে ডাচরা৷
ছবি: picture-alliance/Ton Koene
ডুবছে বিশ্ব ঐতিহ্য
ইটালির ভেনিস পুরোটাই পানি বেষ্টিত৷ তাই সেখানে বন্যা কোনো আকস্মিত ঘটনা নয়৷ কিন্তু চিন্তা বিষয় হল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরটি ক্রমেই পানির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে৷ ইটালির সরকার ভেনিস রক্ষায় ৯.৬ বিলিয়ন ইউরোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার এই প্রকল্প ২০১৬ সাল নাগাদ শেষ হবে৷
ছবি: AP
প্রাকৃতিক বিপর্যয়
আইপিসিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এশিয়া ও ইউরোপে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ অন্যদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে পানি সংকট এবং খরা দেখা দেবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এর ফলে ফসল ভালোমত হবে না, দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি৷
ছবি: dapd
কোনো মানুষ রেহাই পাবে না
আইপিসিসি-র সভাপতি রাজেন্দ্র পাচৌরি বলেছেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা যদি ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তবে ঝুঁকির পরিমাণও সেই অনুপাতে বাড়বে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাব থেকে বিশ্বের কোনো মানুষই রেহাই পাবেন না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
এই প্রবণতা চালু থাকলে বরফ আরও গলে যাবে, সেই জায়গায় মরু অঞ্চল সৃষ্টি হবে৷ তিব্বতের হিমবাহ ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেলে ভারত ও বাংলাদেশ সহ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জলের সরবরাহ মারাত্মক হারে কমে যাবে৷ ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা, চীনের ইয়েলো ও ইয়াংসি নদী, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মেকং ও সালউইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর জলের সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে৷
চীনা গবেষকদের খুঁটিনাটি কিছু হিসেব পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ মে মাসের হিসেব অনুযায়ী গত ৩০ বছরে তিব্বতের হিমবাহ প্রায় ১৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে৷ অর্থাৎ প্রায় ৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থেকে হিমবাহ উধাও হয়ে গেছে৷
এখন প্রশ্ন হলো, এমন প্রবণতা বন্ধ করা হয়ত আর সম্ভব না হলেও এর গতি কি কমানো সম্ভব? কারণ এমন অস্বাভাবিক মাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষের কার্যকলাপ দায়ী৷ বিজ্ঞানীরা সংশ্লিষ্ট সরকারগুলির উদ্দেশ্যে ঠিক সেই আবেদনই জানিয়েছেন৷ কিন্তু বাস্তবে চীন ও ভারতের মতো দেশ উলটো পথে হাঁটছে৷ চীনের সরকার তিব্বত অঞ্চলেই একের পর এক জলবায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ আগামী ২০২০ সালে আরও বড় আকারের বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার কথা৷ জীবাশ্ম-ভিত্তিক জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে চীন গত কয়েক দশক ধরে জলবিদ্যুতের উপর বিশেষ জোর দিয়ে আসছে৷ ভারতও ব্রহ্মপুত্র নদে বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে৷ এই মর্মে প্রায় ১০০টি প্রস্তাব পরীক্ষা করা হচ্ছে৷