তিমির উপর জাহাজ চলাচলের প্রভাব নিয়ে ব্রাজিলে গবেষণা
১ মে ২০২৫
ব্রাজিল উপকূলের উষ্ণ জলরাশি যেন হাম্পব্যাক তিমি ও তাদের শাবকদের বসবাসের জন্য দারুণ জায়গা৷
তিমিদের প্রাকৃতিক বাসস্থানে বড় আকারের জাহাজ চলাচলের ফলে তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত, এমনকি ধাক্কা লেগে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছেছবি: Michael Nolan/robertharding/IMAGO
বিজ্ঞাপন
কিন্তু বড় জাহাজ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিমিদের জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা৷
দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের ভিটোরিয়া উপকূলে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীরা প্রায় প্রতিদিনই তিমি পর্যবেক্ষণ করতে বের হন৷ কারণ, এই জায়গায় তিমিরা তাদের বাচ্চা লালন-পালনের জন্য যায়৷
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী থিয়াগো ফেরারি বলেন, ‘‘এই তিমিদের কাছ থেকে দেখা দারুণ ব্যাপার৷ এদের ওজন সর্বোচ্চ ৩০ টন আর দৈর্ঘ্যে এরা ১৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে৷''
১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি ব্রাজিলের উপকূলে বাণিজ্যিক তিমি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ তারপর থেকে সেখানে তিমির সংখ্যা মাত্র ৮০০ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০,০০০-এ পৌঁছেছে৷ এলাকাটি যেন অনেকটা তিমি নার্সারিতে পরিণত হয়েছে৷
কিন্তু তিমিরা এখানে সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়৷ প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে কিছু তিমির দম বন্ধ হওয়ার উফক্রম হয়, আর কিছু, মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে ডুবে যায়৷ তবে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো, ভিটোরিয়া বন্দরে প্রবেশ ও বের হওয়া বিশাল জাহাজগুলো৷
কেন সেগুলো এত বিপজ্জনক? ফেরারি বলেন, জাহাজ চলার পথে হয়ত কোনো মা তিমি তার সন্তানকে নিয়ে সাঁতার কাটতে থাকে৷ তখন জাহাজটি যদি সাবধান না হয় তাহলে এটি তাদের সাথে ধাক্কা খেতে পারে, সম্ভবত তিমিদের মৃত্যুও হতে পারে৷
জাহাজে বিপর্যস্ত তিমির জীবন
03:50
This browser does not support the video element.
জাহাজগুলি খুব শব্দও করে, যা তিমিদের যোগাযোগ ব্যাহত করে৷ জীববিজ্ঞানী ব্রুনা রেজেন্ডে তিমিদের গান রেকর্ড করার জন্য পানির নিচে মাইক্রোফোন ব্যবহার করেন৷
রেজেন্ডে জানান, ‘‘তিমিরা গান গায়, বিশেষ করে পুরুষ তিমিরা৷ তারা সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য এবং অন্যান্য তিমির সাথে যোগাযোগ করার জন্য গান গায়৷''
তিমিরা সমুদ্রের পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, এমনকি বৈশ্বিক জলবায়ুও নিয়ন্ত্রণ করে৷
ফেরারি বলেন, ‘‘তিমিরা সমুদ্রের মালী৷ তাদের মলমূত্র পানিকে উর্বর করে, এবং যেহেতু তারা এত বড় এবং ভারী, তাদের চলাচল সমুদ্রের স্তরগুলিকে মিশ্রিত হতে সাহায্য করে৷ সে কারণে পুষ্টিগুলি এমন অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয় যেখানে হয়ত খুব কম বা কোনো জৈব পদার্থ নেই৷''
এই পুষ্টি উপাদানগুলি প্ল্যাঙ্কটন টিকিয়ে রাখে৷ প্ল্যাঙ্কটন হচ্ছে এক ধরনের ক্ষুদ্র অণুজীব, যা প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড সঞ্চয় করে৷ প্ল্যাঙ্কটন খাওয়ার মাধ্যমে তিমিরা সমুদ্রে কার্বনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে৷
এই সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য অপরিহার্য, এবং তিমিরা এর ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
ফেরারি বলেন, ‘‘তিমি লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এখানে আছে, এবং রাতারাতি হারিয়ে যাবে না৷ কিন্তু এটি আমাদের, মানুষের বেঁচে থাকারও বিষয়৷''
সুতরাং সাগরের এই পানিতে যা ঘটে, তার সরাসরি প্রভাব আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের উপর পড়ে৷
পরিযায়ী প্রাণীরা যেভাবে দেশ থেকে দেশান্তরে যায়
প্রতি বছর সুমেরু থেকে আফ্রিকা হয়ে পৃথিবীর দূরদূরান্তে পাড়ি দেয় পরিযায়ী প্রাণীরা৷ ছবিঘরে দেখুন এমনই কিছু পরিযায়ী প্রাণীদের যাত্রার গল্প...
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO/E. u. H. Pum
এক মেরু থেকে আরেক মেরুতে
সুমেরুনিবাসী টার্ন পাখি প্রতি বছরই প্রবল শীতের হাত থেকে বাঁচতে উড়াল দেয়৷ কুমেরু পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতে কেটে যায় পৃথিবীর উত্তরার্ধ্ব ও দক্ষিণার্ধের দুটি গ্রীষ্মকাল৷ সেকারণেই এই ছোট পাখিটি অন্য যে কোনো প্রাণীর তুলনায় সবচেয়ে বেশি সূর্যের আলো পায়৷ ৩৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাপথ পেরোনো এই পাখি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ পরিযায়ী যাত্রায় সফল প্রাণী৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO/E. u. H. Pum
চেষ্টায় অনড় স্যামন মাছ
টার্ন পাখির সাফল্য যেমন দীর্ঘ পথ উড়ে যাওয়ায়, সেভাবেই স্যামন মাছের বৈশিষ্ট্য নিঃসন্দেহে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে আসায়৷ নদীপথ বেয়ে স্রোতের সাথেই এই মাছ সমুদ্রে পৌঁছায়৷ কিন্তু শীতকালে স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে ঘরে ফেরা খুব কঠিন৷ তা করতে মাঝে মাঝে স্যামন মাছকে ঝর্ণাও পেরোতে হয়৷ কিন্তু ঘরে ফিরেও শান্তি নেই৷ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ফিরতি পথে ক্লান্ত মাছের অপেক্ষায় রয়েছে ক্ষুধার্ত ভালুক, ঈগল বা মানুষ৷
ছবি: Imago/ZUMA Press/J. Mather
মধ্যরাতের যাত্রী
আফ্রিকার খড়রঙা ফ্রুট ব্যাট বা বাদুড় গোটা দিন কাটায় গাছের ডালে ঝুলে৷ কিন্তু সূর্যাস্তের পর থেকে গোটা রাত ধরে এই বিশেষ প্রজাতির বাদুড়গুলি প্রায় ১৮০ কিলোমিটারের দূরত্ব উড়ে যায়৷ যেতে যেতে বিভিন্ন গাছের বীজ, ফুলের পরাগ ছড়াতে থাকে৷ কোনো কোনো বিশেষ সময়ে এরচেয়েও লম্বা পথ পাড়ি দিতে পারে আফ্রিকার জাম্বিয়া অঞ্চলের এই ‘মেগাব্যাট’৷
ছবি: imageBROKER/picture-alliance
ত্বকের যত্ন নিচ্ছে তিমিরাও!
মেরু অঞ্চল থেকে উষ্ণতর অঞ্চলে আসতে প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম তিমি৷ বিজ্ঞানীরা এক সময় ধারণা করেছিলেন যে, সন্তানের জন্ম দিতেই গরম অঞ্চলে আসে তারা৷ কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, তা ঠিক নয়৷ বরং নিজেদের ত্বকের যত্ন নিতেই এমনটা করে থাকে তিমি৷ বরফজমা পানিতে দীর্ঘ সময় কাটানোর ফলে তিমির ত্বকে রক্ত চলাচল থেমে যায়, ত্বকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও থাকে৷ গরম পানিতে সেই সমস্যা সমাধান হয়৷
প্রজাপতির মতো একটি ছোট ও ঠুনকো প্রাণীও যে লম্বা পথ পার করতে পারে, তা কল্পনা করা কঠিন হলেও বাস্তব৷ মনার্ক প্রজাতির প্রজাপতি তিন হাজার কিলোমিটার উড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণের ক্যালিফোর্নিয়া বা মেক্সিকো পর্যন্ত অনায়াসে যায়৷ ঝাঁকে ঝাঁকে ওড়া এই প্রজাপতিদের শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে৷
ছবি: M. Watson/picture-alliance/Mary Evans Picture Library
তৃতীয় চোখ যে কচ্ছপের
লেদারব্যাক প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায় ক্যানাডা, ক্যারিবিয়ান সাগরের উপকূলে, আলাস্কায় ও ইন্দোনেশিয়াতেও৷ কিন্তু দশ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয় কিভাবে এই প্রাণীটি? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই কচ্ছপের মাথার ওপরে, দুই চোখের মাঝে একটি ছিদ্র থাকতে পারে, যা সরাসরি পিনিয়াল গ্ল্যান্ডের সাথে যুক্ত৷ এর ফলে, এই ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে কচ্ছপকে বোঝায় যে, এখনই পথে নামার সময়৷
ছবি: Imago/Nature Picture Library
খাবারের খোঁজে দলে দলে...
আফ্রিকার সেরেংগেটি-মারা অঞ্চলে প্রতি বছরই দেখতে পাওয়া যায় পরিযায়ী প্রাণীদের অদ্ভূত দৃশ্য৷ বৃত্তাকার একটি পথে একসাথে ঘুরতে থাকে প্রায় ১৫ লাখ বন্য হরিণ, জেব্রা ও অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের ঝাঁক৷ পথে সাবধান থাকতে হয়, কারণ তাজা খাবার ও পানির পাশাপাশি এই পথে রয়েছে মাংসাশী কুমির, সিংহ ও নেকড়েও৷
ছবি: S. Meyers/picture-alliance/blickwinkel
খাবার বয়ে আনে যারা...
পেঙ্গুইনের ধীরগতিতে চলার কথা আমরা জানি৷ এই ধীরগতিতেই নিজেদের বাসস্থানের ১০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ডিম পাড়ে তারা৷ কখনো মা, কখনো বাবা এই দীর্ঘপথ পেরিয়ে শিশুদের জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ ধীরগতিতে চলার কারণে এই যাত্রায় অনেক সময় লাগে৷ তাই খিদে পেলেও সেই খাবার খায় না বাবা বা মা পেঙ্গুইন৷ কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে থেকে সেই খাবার শিশুর জন্য সংরক্ষণ করে৷