তিলজলায় গ্রেপ্তার ২০, তান্ত্রিক এখনো অধরা
২৮ মার্চ ২০২৩গত রবিবার নাবালিকার দেহ উদ্ধারের পর থেকে উত্তেজনা রয়েছে তিলজলা এলাকায়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সোমবার তা চরমে পৌঁছয়।
মূল অভিযুক্ত অলোক কুমারের ঘর থেকে নাবালিকার দেহ উদ্ধারের পরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা খবর পেয়ে কেন দেরিতে এসেছে, এ নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ হয়। সেই কারণে রবিবার আরো দুজনকে ধরে তিলজলা থানা।
এই দু'জনের গ্রেপ্তারিতে ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। সোমবার বন্ডেল রোড অবরোধ করে জনতা। পরে পার্ক সার্কাস ও বালিগঞ্জ স্টেশনের মধ্যে রেল অবরোধ করা হয়। পুলিশ অবরোধকারীদের নিরস্ত করার চেষ্টা করলে এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করা হয়। পুলিশ পাল্টা লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা। সোমবার রাতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে তিলজলা থানা। আরো ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। তদন্তভার হাতে নিয়েছে লালবাজার।
সোমবার কলকাতায় এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তার সফরের দিনই তুলকালাম। জনতার পাশাপাশি বিরোধীরা পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলেছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, "কোনো কোনো এলাকা অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।"
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গে যে আইনশৃঙ্খলা নেই, এটা তার প্রমাণ।" তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, "এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। উগ্র প্রতিক্রিয়া ঠিক নয়। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
অলোক কুমারকে সোমবার পকসো আদালতে পেশ করা হয়। তাকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। নাবালিকার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শ্বাসরোধ ও মাথায় আঘাত করে খুনের আগে তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে।
সূত্রের খবর, জেরায় অপরাধ কবুল করে অলোক বলেছে, তান্ত্রিকের নির্দেশ অনুযায়ী নির্জনতার সুযোগে সে নাবালিকাকে ঘরে ঢুকিয়ে হত্যাকরে।এই কাজ করার আগে গাঁজা টানে অলোক। তান্ত্রিক তাকে দেহ রেখে দিতে বলেছিল। তা হলে কি শব সাধনার মতলব ছিল তান্ত্রিকের?
অলোকের দাবি, সন্তানলাভের জন্য তান্ত্রিকের কথায় সে নরবলি দিয়েছে। নিমতলা ঘাটের সেই তান্ত্রিকের খোঁজ পুলিশ এখনো পায়নি। তদন্তকারীরা এটাও খতিয়ে দেখছেন, অলোক যে তান্ত্রিকের তত্ত্ব খাড়া করেছে, তা কোনো কৌশল নয় তো! অন্য কোনো শত্রুতার জেরে নাবালিকার খুন কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশন টুইটে তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে। রাজ্যের ডিজিপি ও মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠানোর কথা বলছে তারা। কমিশনের একটি দল পশ্চিমবঙ্গে আসছে।
রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় সোমবার ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, "স্থানীয় মানুষেরা চান মূল অভিযুক্তকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হোক। সে কারণেই উত্তেজনা।"
সন্তানলাভের জন্য যদি এই খুন হয়, তবে তা একুশ শতকের দুনিয়ায় নাড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনা। তবে প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ আরো আগে তৎপর হলে কি অবরোধ, হিংসা ও তার ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি এড়ানো যেত না?