তিস্তা নিয়ে মোদীর শিষ্টাচার
২৮ মে ২০১৪ নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শিরীন শারমিন চৌধুরী রাজধানী নতুন দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে বৈঠক করেন মঙ্গলবার দুপুরে৷ বৈঠকের পর বাংলাদেশের স্পিকার সাংবাদিকদের জানান, ‘‘ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে৷ তিস্তার পানি বণ্টন ও স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারত গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন৷’’
স্পিকার আরো জানান, ‘‘ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ তিনি বাংলাদেশ সফরে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷’’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে থাকায় তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মোদীর সোমবারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে যান৷
তবে বৈঠকে তিস্তার পনি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস আশ্বস্ত করেনি বাংলাদেশের বিশ্লেষকদের৷ তাঁরা মনে করেন, ২০১৬ সালের আগে এ নিয়ে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই৷ এটা বলতে গেলে ‘ডিপ ফ্রিজ’-এ চলে গেছে৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে যে কথা বলেছেন তা কূটনৈতিক শিষ্টাচার ছাড়া আর কিছুই না৷ কারণ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অতীতে ভোটের রাজনীতির হিসাব করেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে রাজি হননি৷ ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচন এবং ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচন৷ সুতরাং মমতা তিস্তার পানি দেবেন না৷ নরেন্দ্র মোদী যদি সত্যিকার অর্থেও চান তাহলেও এটা সম্ভব নয়৷’’
অন্যদিকে পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চুক্তি হওয়া বড় কথা নয়, কি চুক্তি হবে সেটাই আসল কথা৷ এর আগে চুক্তির যে খসড়া করা হয়েছিল তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি৷ তাতে নাকি বলা হয়েছিল দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর পানি ভাগ করা হবে৷’’
ইনামুল হক বলেন, ‘‘তিস্তার পানির ঐতিহাসিক প্রবাহ ১০ হাজার কিউসেক৷ এই প্রবাহ ধরে যদি পানি বণ্টন না হয় তাহলে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই৷’’ তিনি বলেন, ‘‘পানি চুক্তির নামে নতুন কোনো সুবিধা আদায় করতে চাইতে পারে ভারত৷ এ ব্যাপারে সবাইকে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে৷ কারণ তিস্তার পানি কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়, এটা বাংলাদেশের অধিকার৷’’
তবে এই দু’জন বিশ্লেষকই ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তাঁরা বলেন, ‘‘পানি না পাওয়া গেলেও অন্তত আশার বাণী তো শোনা গেল৷’’