ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে তিস্তায় পানি হুহু করে বাড়ছে৷ উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবকটি খুলে দেওয়া হয়েছে৷ একথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড৷
বিজ্ঞাপন
উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির পানিতে তিস্তা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে৷
আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ৫২.১৫ মিটার অতিক্রম করে ৫২.২০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ অর্থাৎ, তিস্তার পানি এখন বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷
এ ছাড়া, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে৷ তবে এসব নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে৷
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে তিস্তায় পানি হুহু করে বাড়ছে৷ উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ কমাতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেটের সবকটি খুলে দেওয়া হয়েছে৷'
'তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তাপাড়ে চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে৷'
'তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তিস্তাপাড়ে যেকোনো সময় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে৷'
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৫৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ ভোর থেকে বাড়িঘরে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে৷ তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় চরের অনেক পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যাচ্ছে৷'
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামটি তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে হওয়ায় তিস্তার পানি বাড়লেই বন্যায় আক্রান্ত হতে হয়৷ আজ সকালে গ্রামে নদীর পানি ঢুকেছে৷ ঘরের ভেতর এখন তিস্তার পানি৷ নদীতে আরেকটু পানি বাড়লে আসবাবপত্র ও গবাদি পশু-পাখি নিয়ে নিরাপদস্থানে চলে যাবো৷'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বাগডোরা গ্রামের কৃষক সাদেক আলী (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সকাল থেকে ঘরের ভেতর নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছেন৷ সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছি৷'
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, গঙ্গাধরসহ সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে৷ এসব নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে৷ যেকোনো সময় তা বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছে৷'
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় পানি বাড়ছে তবে তিস্তাপাড়ে এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি৷ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি আছে৷ সার্বক্ষণিক তিস্তাপাড়ের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে৷'
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি৷
এনএস/কেএম (দ্য ডেইলি স্টার)
পানি ও ক্ষমতা: বাঁধের রাজনীতি
বাঁধ নির্মাণ করে অর্থনৈতিক সুফল পাওয়া যায়৷ কারও জন্য এটা মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতীকও বটে৷ কিন্তু এর ফলে ভাটির দেশের মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়ে?
ছবি: Gioia Forster/dpa/picture alliance
গর্বের বিষয়
বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করায় ক্রাউডফান্ডিং ও সরকারি বন্ডের মাধ্যমে ৪১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ব্যয় করে বাঁধ নির্মাণ করছে ইথিওপিয়া৷ এটি প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪৫ মিটার উঁচু হবে৷ ভাটির দেশ মিশর ও সুদানের সঙ্গে চুক্তি না করেই বাঁধ নির্মাণ করতে চাওয়ায় বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেনি৷ নিজ অর্থায়নে এই বাঁধ নির্মাণকে জাতীয় গর্ব হিসেবে দেখছেন অনেক ইথিওপিয়ান৷
ছবি: Gioia Forster/dpa/picture alliance
নীল নদের জীবন
ইথিওপিয়ার বাঁধ মিশর ও সুদানে নীল নদের ধারে বসবাসকারী মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ যদিও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ায় পানি প্রবাহে সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছে ইথিওপিয়া৷ কিন্তু তাতে ভরসা পাচ্ছে না ঐ দুই দেশ৷ ইথিওপিয়া তার কৃষকদের সেচের জন্য পানি প্রবাহের দিক নিয়ন্ত্রণ করবে না - এমন নিশ্চয়তা অনুভব করছে না তারা৷
ছবি: Joerg Boethling/imago images
মেকং নদীতে চীনের কয়েকটি বাঁধ
গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে এখন পর্যন্ত মেকং নদীতে ১১ টি বাঁধ নির্মাণ করেছে চীন৷ ফলে বিশ্বের শীর্ষ পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছে চীন৷ কিন্তু এসব বাঁধ ভাটির দেশ হিসেবে লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার জনগণের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে৷
ছবি: Yang Zheng/Imaginechina/picture alliance
কম্বোডিয়ায় খরা
মেকংয়ে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ ও ছাড়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করছে চীন৷ সে কারণে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় খরার সংখ্যা বেড়েছে, আর কমে গেছে মাছের সংখ্যা৷
ছবি: Heng Sinith/AP/picture alliance
বিশ্বব্যাপী চীনের বিনিয়োগ
শুধু নিজ দেশে নয় লাওস থেকে পর্তুগাল, কাজাখস্তান থেকে আর্জেন্টিনা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাঁধ তৈরিতে বিনিয়োগ করছে চীন৷ ছবিতে গিনির সুয়াপিতি বাঁধ দেখা যাচ্ছে৷ আগে এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতো৷ কিন্তু সেজন্য একই নদীর পানি শেয়ার করা দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি থাকতে হতো৷ কিন্তু চীনা বিনিয়োগ পেতে সেরকম চুক্তির প্রয়োজন পড়ে না৷
ছবি: Sadak Souici/Le Pictorium/imago images
বাঁধের কারণে ঘর ছাড়া
সুয়াপিতি বাঁধ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে৷ গিনির জন্য তা দরকারও৷ তবে বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে আশেপাশের ১০০র বেশি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষকে ঘর ছাড়া হতে হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
ছবি: CELLOU BINANI/AFP
কলোরাডোয় বাঁধ
প্রায় ২,৩৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী মেক্সিকো পৌঁছার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রাজ্য পার হয়৷ এই নদীতে বেশ কয়েকটি বাঁধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এসব বাঁধ দিয়ে সেচের প্রয়োজনে পানির প্রবাহ প্রয়োজনমতো ঘুরিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র৷ ফলে কলোরাডো নদীর মেক্সিকো অংশে বাস করা মানুষের জীবনে এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷
ছবি: Elliot Spagat/AP/picture alliance
ম্যাক্সিকালি উপত্যকায় পানির ব্যবস্থা
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তে অবস্থিত মরিলস বাঁধ ব্যবহার করে মেক্সিকোর ম্যাক্সিকালি উপত্যকায় পানির ব্যবস্থা করা নিয়ে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে৷
ছবি: GUILLERMO ARIAS/AFP/Getty Images
তিস্তা ও ফারাক্কা বাঁধ
বাংলাদেশ প্রথমে তিস্তা নদীর উপর বাঁধ দেয়৷ এরপর ভারতও পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় তিস্তায় বাঁধ দিয়েছে৷ এই বাঁধ দিয়ে ভারত পানি নিয়ন্ত্রণ করায় ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রায়ই বন্যা দেখা দিচ্ছে৷ আবার কখনও পানি না ছাড়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী শুকিয়ে যায়৷ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ তিস্তা চুক্তি করতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি৷ এদিকে ফারাক্কা নিয়ে চুক্তি থাকলেও ঐ বাঁধের কারণে এখনও বাংলাদেশ সমস্যায় পড়ছে৷