গত দেড় দশকের মধ্যে ভয়াবহ শীতের কবলে পড়েছে আফগানিস্তান৷ ১০ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা সর্বনিম্ন মাইনাস ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গেছে৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা শনিবার জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ঠান্ডায় মৃত্যুর সংখ্যা ৮৮ জনে পৌঁছেছে৷ ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ২৪টির পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৬ জনে৷
বন্যা, আগুন আর হিটারের গ্যাস বেরিয়ে এত প্রাণহানী হয়েছে বলে ভিডিও বিবৃতিতে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আব্দুল রহমান জাহিদ৷
শীতে দেশটিতে প্রায় শখানেক বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে৷ মারা গেছে ৮০ হাজার গবাদি পশু৷
এদিকে তীব্র ঠান্ডার কারণে ব্যাহত হচ্ছে সহায়তা কার্যক্রমও৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সপ্তাহে উত্তর-পূর্ব প্রদেশ বাদাকশানে খারাপ আবহাওয়ার কারণে পৌঁছাতে না পারার কথা জানিয়েছে৷ সেখানে ১৭ জন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় মারা যান৷
মানবিক সংকট
এদিকে শীত আফগানিস্তানের মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে৷ আগে থেকেই দেশটির মানুষ ব্যাপক ক্ষুধা সংকটে রয়েছেন৷ ত্রাণ সংস্থাগুলোর সতর্কবার্তা অনুযায়ী, দেশটির প্রায় চার কোটি মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন, যা জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি৷ ৪০ লাখ শিশু ভুগছে পুষ্টিহীনতায়৷
এদিকে শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে যাচ্ছে তালেবান৷ গত মাসে মানবিক সংস্থাগুলোতে নারীদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ এতে অনেক বিদেশি সংস্থা দেশটিতে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়৷
এফএস/এআই (এএফপি, রয়টার্স)
আফগানিস্তানের করুণ দশা
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে৷ এছাড়া নারী ও মেয়েদের অনেক অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Ahmad Sahel Arman/AFP
অর্ধেকের বেশি মানুষ ক্ষুধা কষ্টে
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডাব্লিউএফপি বলছে আফগানিস্তানের প্রায় দুই কোটি ২৮ লাখ মানুষ মারাত্মক ক্ষুধা কষ্টে আছেন৷ তারা খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷ দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি৷ ছবিতে কাবুলে দুই ব্যক্তিকে চীনের খাদ্য সহায়তা নিয়ে ফিরতে দেখা যাচ্ছে৷ ডাব্লিউএফপি বলছে আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম চালাতে প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন৷
ছবি: Saifurahman Safi/Xinhua/IMAGO
বাংলাদেশ এক কোটি টাকা দিচ্ছে
জাতিসংঘের মাধ্যমে আফগানিস্তানে এক কোটি টাকা অনুদান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ৷ রোববার (২২ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ‘ফর দ্য কো-অর্ডানেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ তহবিলে এ টাকা জমা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: Javed Tanveer/AFP
মেয়েদের অধিকার খর্ব
তালেবান বলেছিল এবার তারা আগের চেয়ে একটু বেশি সহনীয় হবে৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে নারীদের অনেক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে৷ তারা মাধ্যমিক স্কুলে যেতে পারছে না, একা চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ প্রকাশ্যে পা থেকে মুখ পর্যন্ত ঢাকা পোশাক পরতে বলা হয়েছে৷ এসব নির্দেশ মানা হচ্ছে কিনা তা দেখতে চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে৷ এছাড়া সম্প্রতি নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপকদের মুখ ঢেকে টিভিতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Ali Khara/REUTERS
প্রতিবাদ
কাবুলের মতো আফগানিস্তানের অধিকতর উদার এলাকার কিছু নারীকে নতুন নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়া একজন বলেন, ‘‘আমরা জীবিত প্রাণী হিসেবে পরিচিত হতে চাই, মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে চাই, ঘরের কোণে বন্দি দাস হিসেবে পরিচিত হতে চাই না৷’’
ছবি: Wakil Kohsar/AFP
বোরকার দাম বেড়েছে
কাবুলের এক বোরকা বিক্রেতা জানান, পোশাক নিয়ে তালেবানের নতুন নির্দেশের পর বোরকার দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP
নারী ও পুরুষ একসঙ্গে রেস্টুরেন্টে যেতে মানা
আফগানিস্তানের মানদণ্ড বিবেচনায় হেরাত শহরকে কিছুটা উদার মনে করা হয়৷ কিন্তু সেখানে রেস্টুরেন্টে বসে পুরুষ আর নারীরা একসঙ্গে খেতে পারবেন না বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ হেরাতের এক রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিউল্লাহ এই নির্দেশ জারির কথা নিশ্চিত করে বলেছেন, এর ফলে তাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে৷
ছবি: WANA NEWS AGENCY/REUTERS
প্রতিক্রিয়া
নারী ও মেয়েদের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারির সমালোচনা করেছেন জি-সেভেন দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা৷ এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তারা৷