1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তুমি রবে নীরবে

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গেল গ্রীষ্মের কথা৷ কে যেন বলছিল, কনসার্ট হবে৷ রাইনের পাড়ে, বিয়ার গার্ডেনে৷ যেতেই হবে৷ তথৈবচ৷ সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম সেই বিয়ার গার্ডেনে৷ তারপর...

Symbolbild Terror Musik Katzenmusik
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPhotos

যদিও সন্ধ্যা না বলে বিকেল বলা ভালো কারণ, এমনিতেই গ্রীষ্মে রাত দশ এগারটা অবধি আলো থাকে ইউরোপে৷ দর্শক-শ্রোতাও কম নন৷ প্রত্যাশিতই ছিল যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই হবে বেশি৷ হলোও তাই৷

আয়োজন বলতে একটি স্টেজ৷ ডিস্ক জকি তাঁর মিক্সার ও সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে প্রস্তুত৷ কানে হেডফোন লাগিয়ে পরীক্ষা করছেন৷

রাইন থেকে শরীর জুড়াচ্ছে মৃদুমন্দ হিম বাতাস৷ আর মন জুড়াতে সংগীতের অপেক্ষা৷ বসে রইলাম কখন শুরু হবে সেই কনসার্ট৷

কিন্তু কনসার্ট তো আর শুরু হয় না৷ অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়েই কিনা তরুণ-তরুণীরা সব কানে হেডফোন লাগিয়ে মঞ্চের সামনের খালি জায়গাটায় শরীরে রাইন নদীর মৃদু ঢেউ তুলে যাচ্ছেন৷

শুনেছিলাম ‘জার্মান সময়' শিষ্টাচারপূর্ণ৷ কিন্তু এ কী? এই সংগীতসাধকরা তো জাতির সফেদ দেয়ালে কালিমা লেপনে মত্ত৷

খুবই বিরক্ত লাগছিল৷ কোথায় কনসার্ট দেখব বলে এতটা পথ এলাম৷ এদিকে, হেডফোন কানে শরীর দুলানো দর্শকশ্রোতার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷

হঠাৎ খেয়াল হলো একটা বিষয়! এদের সবার কানে একই ধরনের হেডফোন৷ এমনকি যাঁরা বসে বসে গা দুলাচ্ছেন, তাঁদের কানেও সেই একই হেডফোন৷ ওদিকে, একই ভঙ্গিমায় নর্তন-কুর্দন করছেন স্বয়ং ডিজে৷ ওরে, এ তো ‘নিরব কনসার্ট'! বুঝতে আর বাকি রইল না৷ মানে গান বাজবে, কনসার্ট হবে, কিন্তু যাঁরা শুনতে চাইবেন, তাঁরাই কেবল শুনবেন৷ যাঁরা চাইবেন না, তাঁরা শুনবেন না৷ এমন কনসার্ট জম্মেও শুনিনি, দেখিওনি৷

জার্মানিতে খোলা কনসার্ট যে হয় না তা নয়৷ সেটিও হয়, তবে শব্দ তৈরির মাত্রায় একটা সীমাবদ্ধতা থাকে৷ আমাদের দেশগুলোতে যেমন কনসার্ট হয়, তার সঙ্গে মিল কম৷ এ হলো ভদ্রলোকের কনসার্ট! তবে কোন ধরনের কনসার্টে আনন্দ বেশি, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে৷

কিন্তু এই ঘটনার অবতারণা অন্য কারণে৷ তা হলো, শব্দদূষণ নিয়ে এদের সচেতনতা৷

শব্দদূষণ করে মানুষের ক্ষতি করা কিংবা কোলাহল করে অন্যকে বিরক্ত করার ব্যাপারে কড়া আইন আছে এদেশে৷ অন্যকে বিরক্ত করার সীমা নিয়ে আইনের ব্যাখ্যায় পরে আসি৷ প্রথমে আসুন দেখি, রাষ্ট্রীয়ভাবে শব্দদূষণের মাত্রা নিয়ে কতটা সচেতন এরা৷

একে তো পাবলিক অনুষ্ঠান, হোক সে রাজনৈতিক বা সামাজিক, জোরে মাইক বাজিয়ে অন্যদের বিরক্ত করবেন? ভুলে যান৷ এখানে সেটা সম্ভব নয়৷

ক'দিন আগে, জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল সামাজিক গণতন্ত্রী পার্টির বার্ষিক সমাবেশ হয়েছে ডয়চে ভেলে অফিসের একটু সামনেই৷ মহাজোট সরকার গঠন নিয়ে দলটিতে মতবিরোধ ছিল৷ কনফারেন্স হলের বাইরে প্রতিবাদও হয়েছে৷ কিন্তু সিকিমাইল দূর থেকেও তা শোনা সম্ভব নয়৷

এখানে রাস্তায় অযথা গাড়ির হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ৷ কেউ যদি একবার হর্ন বাজান, তাহলে অন্যরা ধরে নেন যে, খুব জরুরি কিছু ঘটে গেছে৷ সবাই সেই গাড়িকে পথ ছেড়ে দেবেন৷

পুরো দেশ রেল নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত৷ তাই রেলগাড়ির আওয়াজ নিয়ে বেজায় শঙ্কিত জার্মানরা৷ একটা গবেষণায় দেখা গেছে, রেলগাড়িগুলো গড়ে ১১০ ডেসিবেল শব্দ তৈরি করে৷ এর মানে হলো, একটি করাত কল এক মিটার দূরে যে শব্দ তৈরি করবে তেমনটি৷

এ নিয়ে পরিবেশবাদীদের বিস্তর অভিযোগ৷ ফেডারেল পরিবেশ সংস্থা ইউএফএ-এর গবেষণায় দেখা যায়, বছরে ২ হাজার জার্মানের হৃদরোগের কারণ পরিবহনে সৃষ্ট শব্দ৷ আর এ কারণে স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ইউরো৷

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শব্দদূষণের মাত্রা দিনে ৫৫ ডেসিবেল ও রাতে ৪৫ ডেসিবেলে নামিয়ে আনার জন্য কাজ করছে সরকার৷

এবার আসি ব্যক্তিগতভাবে আপনি কতটা কোলাহল করতে পারবেন জার্মানিতে, সেই হিসেবে৷

জার্মান সিভিল কোড বলছে, কোনো বাড়ির বাসিন্দা কখনোই ‘অত্যাধিক শব্দ' তৈরি করতে পারবেন না, যা অন্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এখন প্রশ্ন হলো, এই ‘অত্যাধিক' বিষয়টি কিভাবে নির্ধারিত হবে৷ আসলে এটি নির্ধারণ করা কঠিন৷ তাই এ নিয়ে ফি বছর হাজারো নালিশ জমা পড়ে আদালতে৷ আদালতও অনেক সময় মজার মজার রায় দেন৷

যেমন, এক ব্যক্তির পুকুরে ব্যাঙ প্রচুর আওয়াজ করত৷ আর যায় কোথায়? সইতে না পেরে মামলাই ঠুকে দিলেন প্রতিবেশী৷ কিন্তু আদালত ব্যাঙের স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিলেন৷

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

আবার, কোলন শহরে আরেক ব্যক্তির কুকুর খুব চিৎকার করে৷ তাই আদালত রায় দিলেন যে, কুকুর দিনে ৩০ মিনিটের বেশি চিৎকার করতে পারবে না৷ আর একবার চিৎকার করলে ১০ মিনিট তাকে চুপ থাকতে হবে৷ কী বিপদ বলুন তো!

সে যাই হোক, সাধারণভাবে এখানে নিয়ম হলো, অন্যকে বিরক্ত করা যাবে না৷ রাত আটটার পর থেকে পরদিন ভোর সাতটা পর্যন্ত সময়কে কোয়ায়েট টাইম বা নিরব সময় বলে ধরা হয়৷ এছাড়া সপ্তাহে রোববার ও অন্য ছুটির দিনও এই কোয়ায়েট টাইমের আওতায় পড়বে৷ অর্থাৎ এ সময়ে শব্দ করে বাগানে এমন কোনো যন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে না কিংবা ওয়াশিং মেশিন চালানো যাবে না৷ তবে হ্যাঁ, মৃদু নাক ডাকা যেতে পারে!

তাই বন্ধের দিন বলে ধেই ধেই করে নাচলে এ অনাচার সহ্য করবেন না প্রতিবেশীরা৷ তিরস্কারের পাশাপাশি বাড়তি পাওনা হিসেবে মামলাটিও খেতে হবে৷

তবে সব নিয়মই নিজেদের স্বাস্থ্য সমুন্নত রাখতে তৈরি করা, যেগুলো আমাদের তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে খুবই বেমানান৷ কারণ, স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা আসতে এখনো ঢের সময় লাগবে আমাদের৷

ব্লগটি কেমন লাগলো জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ