ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান৷ কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি সফল হতে পারবেন তো?
বিজ্ঞাপন
দাবি ছিলই৷ দাবি আরো জোড়ালো হলো৷ কিন্তু চিড়ে ভিজবে তো? এই প্রশ্নই এখন তুরস্কের বাতাসে ভাসছে৷ সম্প্রতি ইটালির এক বিখ্যাত খবরের কাগজে তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে৷ যেখানে তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে এবার তুরস্ককে জায়গা দেওয়া হোক৷
দাবি নতুন নয়৷ ২০০৫ সাল থেকেই এর্দোয়ান এই দাবি করছেন৷ তখন তিনি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু কখনোই তাঁর দাবি ধোপে টেকেনি৷ বস্তুত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হওয়ার জন্য ৩৫টি ধাপ রয়েছে৷ অভিযোগ, তার অধিকাংশই সফল ভাবে অর্জন করতে পারেনি তুরস্ক৷ অর্থনীতি থেকে পররাষ্ট্রনীতি, সর্বত্রই তাঁর সরকার অপারগ হয়েছে৷ কিন্তু এর্দোয়ানের দাবি ভিন্ন৷ তাঁর মতে, প্রতিটি ধাপই সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে তুরস্ক৷ কিন্তু ইউরোপের কোনো কোনো দেশের বিরোধিতার কারণেই তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নে জায়গা পাচ্ছে না৷
শরণার্থী সংকট নিরসনে তুরস্ককে ম্যার্কেলের আশ্বাস
তুরস্ক সফর করলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ তাঁর সঙ্গে বৈঠকে তুরস্ককে ইইউ-র সদস্য করার দাবি তুলে ধরেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী৷ জার্মান চ্যান্সেলর তাতে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, শরণার্থী সংকট নিরসনে পারস্পরিক সহযোগিতা খুব প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Berg
আঙ্কারায় ম্যার্কেল
ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্রোত নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলুর সঙ্গে বৈঠক করতে রবিবার আঙ্কারায় যান ম্যার্কেল৷ বৈঠকে শরণার্থী ইস্যু নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে৷ নিজের বক্তব্যে ম্যার্কেল তুরস্কের ইইউ সদস্য হওয়ার দাবিকে সমর্থন করার আশ্বাস দেন৷ তুরস্কের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবিও বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি৷
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ২০ লক্ষ সিরীয়কে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক৷ জার্মান চ্যান্সেলরের বক্তব্যে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ায় এবং জার্মানি এই সংকটে তুরস্কের পাশে থাকবে জানানোয় আহমেদ দাভুতোগলু জানান, ‘‘(শরণার্থীর) চাপ ভাগাভাগির বেলায় আন্তর্জাতিক মহল দুঃখজনকভাবে তুরস্ককে একা ফেলে রেখেছিল৷ আগের চেয়ে ভালো দৃষ্টিভঙ্গি দেখে আমরা খুশি৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
তুরস্ক প্রসঙ্গে ইইউ-র সাম্প্রতিক অবস্থান
ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে দাভিতোগ্লু যে দু’টি বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সেগুলো ইতিমধ্যে ইইউ বৈঠকেও আলোচিত হয়েছে৷ তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয়দের জন্য তুর্কি সরকারকে ৩ বিলিয়ন ইউরোর অর্থ সহায়তা দেয়া এবং ইইউ অঞ্চলে তুর্কিদের ভিসা প্রাপ্তি সহজ করার সিদ্ধান্ত ইউরোপের ২৮টি দেশের জোট মোটামুটি চূড়ান্ত করেছে বলেই জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/K. Ntantamis
জার্মানিতে অভিবাসীবিরোধীতা
ইতিমধ্যে ব্যাপক শরণার্থীর ঢল নামায় জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কয়েকজন সরকার এবং বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ৷ শরনার্থীবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ নতুন করে শুরু করছে পেগিডা৷ এদিকে শনিবার কোলনের মেয়র প্রার্থী হেনরিয়েটে রেকার-এর ওপর হামলা হয়৷ ছুরির আঘাতে আহত হলেও তিনি এখন সুস্থ হওয়ার পথে৷ প্রথম নারী হিসেবে কোলনের মেয়রও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি৷ অভিবাসীবিরাধী সংগঠন পেগিডা এই হামলায় জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Berg
5 ছবি1 | 5
কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল, আছে, থাকবে৷ ইতিমধ্যেই ইতালির রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ তৈরির কৌশলও গ্রহণ করেছেন এর্দোয়ান৷ কিন্তু তাতেই কি জল গলবে? এই উত্তর পেতে হলে খানিক ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরানো দরকার৷
তুরস্ককে রাজনৈতিক ভাবে খুব স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে দেখে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ দেখার কারণও নেই৷ দীর্ঘদিন ধরে সেখানে নানারকম জটিলতা অব্যাহত৷ যার অন্যতম কুর্দ সমস্যা৷ অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করে কুর্দ বিদ্রোহীদের উপর হিংসাত্মক আক্রমণ চালিয়েছেন এবং চালাচ্ছেন এর্দোয়ান৷ এবং সে কাজে সফল হওয়ার জন্য তুরস্কে কার্যত এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা তৈরি করেছেন তিনি৷ সেখানে নির্বাচন হলেও এর্দোয়ানই সর্বেসর্বা৷ অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক জমি খুব মজবুত নয়৷ সমস্যা চরমে পৌঁছায় তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর৷ রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে সেখানে একদিনের অভ্যুত্থান হয়৷ অভিযোগ, নৃশংস কায়দায় তা দমিয়ে দেন এর্দোয়ান৷ বহু সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়৷ শুধু তাই নয়, কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, নিজের ক্ষমতা জোরদার করতে এর্দোয়ানই ওই সেনা বিদ্রোহ করিয়েছিলেন৷
পাশাপাশি, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সঙ্গে লড়াইয়েও প্রথম দিকে এর্দোয়ানের ভূমিকা খুব স্পষ্ট ছিল বলে অনেকেই মনে করেন না৷ বস্তুত, আইএস-এর থেকে কুর্দদেরকেই বড় ‘থ্রেট' বলে তিনি মনে করেন বলে অনেকের ধারণা৷ যে কারণে, প্রথম দিকে সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের অস্ত্র দিয়ে এর্দোয়ান সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ৷ কারণ সে সময় কুর্দ বিদ্রোহীরা আইএস-এর সঙ্গে লড়াই করছিল৷ পরবর্তীকালে অবশ্য এর্দোয়ান আইএস বিরোধী শক্তির অন্যতম শরিক হন এবং ন্যাটো বাহিনীকে সাহায্য করেন৷ বস্তুত, আইএস-কে সাহায্য করার বিষয়টি তিনি কখনোই স্বীকার করেননি৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট৷
তুরস্কের শিল্পীদের আঁকা ব্যঙ্গচিত্র
যে দেশে সংবাদপত্রের স্বধীনতার মুখ চেপে ধরা হয়েছে, সে দেশে কার্টুনিস্টরা কতদূর যেতে সাহস করেন? জার্মানির কাসেল শহরের কারিকাটুরা গ্যালারিতে তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রের কিছু নমুনা প্রদর্শিত হচ্ছে৷
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
‘আমি কোথায়?’ ভাবছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল
২০১৫ সালে তুরস্কের ‘লেমান’ ব্যঙ্গপত্রিকার প্রচ্ছদে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে দেখানো হয় ‘সুলতান’ এর্দোয়ানের পাশে বসা অবস্থায়৷ ‘এ আমি কোথায় এসে পড়লাম?’ ভাবছেন ম্যার্কেল; তাঁর পরনেও মধ্যযুগীয় অভিজাত জার্মান মহিলাদের বাস৷ ইস্তানবুলের তিনটি নেতৃস্থানীয় ব্যঙ্গপত্রিকার মধ্যে ‘লেমান’ অন্যতম৷ তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলু একবার পত্রিকাটিকে ‘‘নীতিবিগর্হিত’’ বলে অভিহিত করেছিলেন৷
ছবি: LeMan/Caricatura
বুদ্ধিমানেরা সবাই জেলে
২০১৬ সালের জুলাই মাসের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে দেড় লাখ মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে ও ৪০ হাজার মানুষকে জেলে পোরা হয়েছে – তাদের মধ্যে বহু সাংবাদিক, লেখক ও আন্দোলনকারী৷ ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আঁকা এই কার্টুনটিতে ৬৬ বছর বয়সি কার্টুনিস্ট ইজেল রোজেনটাল দেখাচ্ছেন, বন্দিরা কীভাবে একটি অশোভন মুদ্রা প্রদর্শন করছে আর প্রহরীরা বলছে, তারা এই ‘বেজন্মা’ বুদ্ধিজীবীদের কি পরিমাণ ঘৃণা করে৷
ছবি: Rozental/Caricatura
গুলেন সর্বত্র
যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনরত ফেতুল্লাহ গুলেন ও তাঁর সমর্থকরা জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ এবং বহু তুর্কি নাগরিক সত্যিই তা বিশ্বাস করেন৷ কার্টুনিস্ট ইগিট ওয়েজগুর-র ব্যঙ্গচিত্রে এক তুর্কি বলছেন: ‘‘৯০ শতাংশ তরমুজ নাকি গুলেনের শিষ্য৷’’ সঙ্গের তুর্কিটি বলছেন: ‘‘হতেই পারে৷’’
ছবি: Özgür/Caricatura
এর্দোয়ানের বিপক্ষে গেলেই বিপদ
গত এপ্রিল মাসের গণভোটে ৫১ দশমিক তিন শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোটে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ও প্রেসিডেন্টের প্রভূত ক্ষমতা বাড়ে৷ ভোটের আগে মিডিয়াকে বিরোধীদের হয়ে ‘হায়ির’ বা ‘না’ ভোটের সপক্ষে আন্দোলনের খবর খোলাখুলিভাবে প্রচার করতে দেওয়া হয়নি৷ তাই মার্চ মাসে ইপেক ওয়েজসুসলু এই কার্টুনটি আঁকেন: জলের মিস্ত্রির পশ্চাদ্দেশে ‘হায়ির’ উল্কিটা বেরিয়ে পড়েছে৷
ছবি: Özsüslu/Caricatura
ট্রাম্পও বাদ যাননি
এর্দোয়ানই তুর্কি ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের একমাত্র লক্ষ্য নন৷ বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে কার্টুনিস্টদের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ ছবির কার্টুনটিতে বন্দুকধারী মার্কিন সৈন্যের পিছনে একটি ছেলে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ওদের আমরা শেষমেষ কবে তাড়াব, বাবা?’ বাবা বলছেন, ‘আমাদের তেল ফুরোলে৷’
ছবি: Karabulat/Caricatura
সেক্স যেখানে টাবু
তুরস্কে যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা চলে না – বিশেষ করে মহিলাদের যৌনতা নিয়ে তো নয়ই৷ মহিলা কার্টুনিস্ট রামিজে এরার-এর মোটাসোটা ‘ব্যাড গার্ল’ রক্ষণশীল সমাজের ধার ধারে না৷ ছবিতে সেই ব্যাড গার্ল পরপুরুষের সঙ্গে রাত কাটানোর পর সেল্ফি তুলছে; প্রেমিক বেচারা ভয়ে জড়োসড়ো: তার গিন্নি যদি ঐ ছবি ফেসবুকে দেখে ফেলেন?
ছবি: Caricatura/Ramize Erer
দুনিয়াদারি
কার্টুনিস্ট মেহমেত চাগচাগ-এর দৃষ্টিতে দুনিয়ার অবস্থা আজ একটি ছবি দিয়েই বোঝানো যায়: বাগদাদ থেকে এথেন্স, বার্লিন থেকে প্যারিস অবধি এক পর্যায় ঘড়ি, আবহাওয়া অফিসে, পত্রিকার নিউজরুমে, হোটেল অথবা এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে যেরকম থাকে – প্রতিটি ঘড়ি আসলে একটি টাইম বোমা, প্রত্যেকটির পিছনে ডায়নামাইট বাঁধা রয়েছে৷ শুধু কোনটা যে কখন ফাটবে, সেটা জানা নেই৷
ছবি: Cagcag/Caricatura
7 ছবি1 | 7
বিশেষজ্ঞদের দাবি আরো স্পষ্ট হয়েছে কারণ, সিরিয়ায় আইএস-এর শক্তি সামান্য কমতেই সেখানে কুর্দ বিদ্রোহী পিকেকে-এর বিরুদ্ধে সৈন্য অভিযান শুরু করেছেন তিনি৷ মৃত্যু হয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষের৷ যা নিয়ে ইউরোপের বহু দেশই কঠোর সমালোচনা করেছে৷ কিন্তু এর্দোয়ান পিছু হঠতে রাজি নন৷ বরং তাঁর যুক্তি, যে কোনো জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেই অভিযান চালিয়ে যাবে তুরস্ক৷ কুর্দ বিদ্রোহীদের তাদের ভাষাতেই জবাব দিতে হবে৷ এ বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, যে সমস্ত দেশ জঙ্গিদের সমর্থন জোগায়, তিনি তাদের পাশে নেই৷ শুধু তাই নয়, এর্দোয়ানের দাবি ইউরোপের বহু দেশই পিকেকে-এর মতো সংগঠনকে জঙ্গি বলে মনে করে৷ সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে অন্য চোখে দেখা উচিত নয়৷
কিন্তু এর্দোয়ানের এই দাবির সঙ্গে বাস্তবের অনেক তফাত৷ কুর্দ সমস্যাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলেই মনে করে ইউরোপ৷ এ বিষয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্র খুঁজে বার করার কথাও একাধিকবার বলা হয়েছে ইউরোপের দেশগুলির তরফ থেকে৷ কিন্তু ইরাক কিংবা তুরস্ক তা কখনোই মানতে রাজি হয়নি৷ অন্যদিকে, কুর্দ বিদ্রোহীরা যেভাবে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাকেও কুর্নিশ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ফলে কুর্দদের বিরুদ্ধে এর্দোয়ানের অভিযান অধিকাংশ দেশই ভালো চোখে দেখছে না৷
সমস্যা রয়েছে আরো৷ তুরস্কের অর্থনৈতিক টালমাটালের জন্য বহু তুর্কি শরণার্থী ইউরোপের বহু দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন এবং করছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়টিকেও খুব ভালো চোখে দেখে না৷ তুরস্ককে কোনো ভাবেই স্থিতিশীল রাষ্ট্র বলে মনে করতে চায় না তারা৷ এমন অবস্থায়, তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ হতে গেলে বহু বাধা পেরতে হবে৷ মন জয় করতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধিকাংশ রাষ্ট্রের৷ সম্প্রতি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে তুরস্ক সম্বন্ধে ইউনিয়নের নেতাদের যে মনোভাব দেখা গেছে, তাতে তুরস্ক সকলের মন গলাতে পারবে, এ আশা দুরাশাই মনে হচ্ছে৷ সে কথা বুঝেই সম্ভবত, ইটালি, ফ্রান্সের মতো দেশের সাহায্য পেতে চাইছে তুরস্ক৷ তবে সেই কূটনীতিও ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞেরা৷
এর্দোয়ানের পক্ষে, বিপক্ষে যারা
ক্ষমতা বাড়ানোর গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ানকে নিয়ে আলোচনা চলছে গোটা বিশ্বেই৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ তুর্কি তাঁর ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন, তবে বিপক্ষেও আছেন অনেক মানুষ৷ রবিবারের সেই গণভোটের পর বিক্ষোভ হয়েছে ইস্তানবুলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
প্রতিবাদ, গ্রেপ্তার
রবিবারের গণভোটের পর থেকে তুরস্কের ইস্তানবুলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর বিপক্ষে থাকা একদল প্রতিবাদকারী৷ শুরুতে পুলিশ তাদের বাধা না দিলেও বুধবারের খবর হচ্ছে, অন্তত ৩৮ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অল্প ব্যবধানে জয়
তুরস্ক সরকারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, রবিবার ভোট দেওয়া তুর্কিদের মধ্যে ৫১ দশমিক চার শতাংশ ভোটর ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন৷ এই ভোট সেদেশের প্রেসিডেন্টের হাতে অভূতপূর্ব ক্ষমতা তুলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট৷ বিক্ষোভকারীরা অবশ্য মনে করছেন, ভোটের জন্য প্রয়োজনীয় ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা হয়নি৷ ৬০ শতাংশ ভোট পুর্নগণনার দাবি জানিয়েছেন এর্দোয়ানের বিরোধী পক্ষ৷
ছবি: Reuters/K. Aslan
অভিনব প্রতিবাদ
ইস্তানবুলে প্রতিবাদকারীরা হাড়ি পাতিল হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন৷ তারা সেসব দিয়ে শব্দ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ কেউ কেউ আবার এর্দোয়ানকে ‘চোর, খুনি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিক্ষোভের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
ভিন্নচিত্র
তুরস্কের সামগ্রিক চিত্রটা অবশ্য ভিন্ন৷ এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষের মানুষরা তুরস্কের বিভিন্ন শহরে আনন্দ মিছিল করেছেন৷ অনেক নারীও তাঁকে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Gurel
এর্দোয়ানের জনপ্রিয়তায় কমতি নেই
একরোখা আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর্দোয়ান এক সমালোচিত চরিত্র হলেও নিজের দেশের জনগণের মধ্যে তাঁর সমর্থন তেমন একটা কমেনি বলেই মনে হচ্ছে৷ গতবছর তাঁর বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল কার্যত জনগণ প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের পাশে থাকায়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/L. Pitarakis
‘ডিক্টেটর’ এর্দোয়ান?
গণভোটে জয়ের পর এর্দোয়ান কি ‘ডিক্টেটরদের’ মতো ব্যবহার শুরু করবেন? এটা সত্য যে, এর ফলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷ তুরস্কের সংবিধানে পরিবর্তন আনার ইচ্ছা বহু আগেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি৷ এখন সে পথ পরিষ্কার৷ তবে সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, গণভোট তাঁকে ‘ডিক্টেটর’ বানাচ্ছে না৷ বরং নতুন ব্যবস্থা তাংর জন্যনয়, তুরস্কের মঙ্গলের জন্যই, বলেন এর্দোয়ান৷