সিরিয়ায় কুর্দিদের উপর অভিযানের কারণে তুরস্কের প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
এছাড়া প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ছে৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ জব্দ করা হবে৷ বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব তুর্কি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেনা৷
তুরস্কের ইস্পাত রপ্তানির উপর শুল্কের পরিমাণ আরও ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এছাড়া ওয়াশিংটন ও আংকারার মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ক আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে৷
কুর্দি কারা, কোথায় থাকে?
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে বেশিরভাগ কুর্দির বাস৷
ছবি: Reuters/A. Lashkari
কুর্দির সংখ্যা ও ধর্ম
কুর্দিশ ইন্সটিটিউট অফ প্যারিসের ২০১৭ সালের হিসেবে বিশ্বে কুর্দিদের আনুমানিক সর্বোচ্চ সংখ্যা সাড়ে চার কোটির বেশি৷ তাদের বেশিরভাগই সুন্নি মুসলমান৷ বাকিরা শিয়া, অ্যালেভিজম, ইয়াদিজম, ইয়ারসানিজমসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী৷ কুর্দিদের ভাষা অনেকটা ফার্সির মতো৷
ছবি: AFP/D. Souleiman
স্বাধীনতার প্রায় কাছাকাছি
অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ দিকে ১৮৯০ দশকে কুর্দি জাতীয়তাবাদ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তিতে কুর্দিদের স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ কিন্তু মাত্র তিন বছর পরই সেই চুক্তি ছিড়ে ফেলেন তুর্কি নেতা কামাল আতাতুর্ক৷ এরপর ১৯২৪ সালে অনুমোদন পাওয়া আরেক চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হওয়া দেশগুলোর মধ্যে কুর্দিদের আবাসস্থল ভাগ হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
যেখানে থাকে
বর্তমানে বেশিরভাগ কুর্দির বাস আর্মেনিয়া, ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্কে৷ সেসব দেশে তারা মাঝেমধ্যে স্বশাসনের দাবি তুলে ধরে৷ এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে কুর্দিরা বাস করেন৷
ছবি: Getty Images/C. Court
সিরিয়া
আরব বসন্ত শুরুর আগে সিরিয়ার জনসংখ্যার ৮-১০ শতাংশ ছিল কুর্দি৷ ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়তে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আর সিরিয়ার সরকার মূলত ব্যস্ত ছিল সুন্নি আরব বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে৷ ফলে একসময় কুর্দিরা সিরিয়ার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়৷ তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার কুর্দি এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিলে তুরস্ক সেখানে হামলা শুরু করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Souleiman
তুরস্ক
তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ কুর্দি৷ স্বশাসনের দাবিতে ১৯৮৪ সালে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি, পিকেকে৷ সেই থেকে সংঘাতে প্রায় ৪০ হাজার জন প্রাণ হারিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্ক পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে৷ তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান অবশ্য কুর্দি ভাষা ব্যবহারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Al-Khatib
ইরাক
উত্তরাঞ্চলের তিন রাজ্যে কুর্দিদের বাস৷ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫-২০ শতাংশ৷ ১৯৮০-র দশকে সাদ্দাম হোসেন কুর্দিদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক গ্যাস ব্যবহার করেছিলেন৷ ২০১৪ সালে আইএস ইরাকের একটি অংশ দখল করলে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সেই সুযোগ কির্কুকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল কুর্দিরা৷ পরে ২০১৭ সালে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে ব্যর্থ হয় তারা৷ উলটো বাগদাদের কাছ থেকে প্রতিশোধের শিকার হয় কুর্দিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Mohammed
ইরান
ইরানের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ কুর্দি৷ তুরস্কের পিকেকে সংগঠনের অনুসারী ইরানের ‘পার্টি অফ ফ্রি লাইফ অফ কুর্দিস্তান’এর বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি নিয়োগ করা হয়েছিল৷ সংগঠনটি ইরানের কুর্দিদের জন্য আরও বেশি সায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানিয়েছিল৷ ইরানের কুর্দিরা বৈষম্যের শিকার ও তাদের নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করে থাকে৷
ছবি: IRNA
7 ছবি1 | 7
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘তুর্কি নেতারা বিপজ্জনক ও ধ্বংসাত্মক পথ থেকে সরে না এলে আমি তুরস্কের অর্থনীতি দ্রুত ধ্বংস করে দিতে প্রস্তুত৷’’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে তিনি ‘দখলদারি অভিযান বন্ধ, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও কুর্দিদের সঙ্গে আলোচনার’ জন্য এর্দোয়ানের প্রতি আহ্বান জানান৷
তুরস্কের সঙ্গে আলোচনার জন্য মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ শিগগিরই তিনি মধ্যপ্রাচ্যে রওয়ানা হবেন বলে জানিয়েছেন৷ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘সিরিয়ায় তুরস্কের হামলা আর সহ্য করবেনা ওয়াশিংটন৷’’
সম্প্রতি সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকা থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ তারপরই সিরিয়া সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ শুরু করে তুরস্ক৷
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের ভেতর ৩০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত একটি বাফার জোন তৈরি করতে চাইছেন এর্দোয়ান৷ সেজন্য ঐ এলাকা থেকে কুর্দি যোদ্ধাদের সরাতে চাইছেন তিনি৷ এরপর সেখানে বর্তমানে তুরস্কে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে রাখার ব্যবস্থা করতে চান তুর্কি প্রেসিডেন্ট৷
জেডএইচ/কেএম (এএফপি, রয়টার্স)
৮ অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
সিরিয়ায় কে, কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ মাঝে আইএস-এর কারণে সেই যুদ্ধে বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়েছে৷ কে আসলে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
যুদ্ধ যেন শেষই হচ্ছে না
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে দেশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান৷ এরপর সেই যুদ্ধে একসময় বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়ে৷
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
আসাদের সমর্থক
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ‘সিরিয়ান আরব আর্মি’ বা এসএএ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ আসাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে৷ এছাড়াও ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’সহ আসাদের সমর্থক কয়েকটি বাহিনী এবং রাশিয়া ও ইরান আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Presidency
তুরস্কের ভূমিকা
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ ছিল তুরস্ক৷ এছাড়া আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দিয়ে আসছে দেশটি৷ তবে কুর্দিদের সহায়তা করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, কারণ সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ পিকেকে-র সম্পর্ক রয়েছে বলে তুরস্কের অভিযোগ৷ ১৯৮৪ সাল থেকে তুর্কি সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে আছে পিকেক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
রাশিয়ার ভূমিকা
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রাশিয়া৷ অবশ্য তারও আগে থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছিল দেশটি৷ রাশিয়ার আকাশ হামলায় সিরিয়ার বহু সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ রয়েছে৷ রাশিয়ার কারণে যুদ্ধের ঢেউ এখন আসাদের অনুকূলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২০১৪ সালের শেষ দিকে আইএস-সব অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে লক্ষ্য করে আকাশ হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট৷ জার্মানিসহ প্রায় ৫০টি দেশ রয়েছে সেই জোটে৷ আইএসবিরোধী এই জোটের কারণে সিরিয়ায় আইএস-এর পরাজয় হয়েছে৷ জোটকে সহায়তা করেছে কুর্দি ও আরব মিলিশিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ এসডিএফ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Brandon
বিদ্রোহীদের কথা
‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র মতো নন-জিহাদি গোষ্ঠীগুলো আসাদের পদত্যাগ চাইছে৷ এরপর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনেরও দাবি আছে তাদের৷ তবে বেশ কয়েকটি পরাজয়ের পর এই সংগঠনের অনেক সদস্য কট্টরপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters
ইরানের সমর্থন
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দামেস্ককে কৌশলগত ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান৷ ইরানের সমর্থনপ্রাপ্ত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হেজবোল্লাহও আসাদ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে৷