ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। তুরস্ক জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠায়। অভিযোগ, ফ্রাঙ্কফুর্টে তুরস্কের দুই সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। ওই দুই সাংবাদিক তুরস্কের পত্রিকা সাবাহ-র সঙ্গে যুক্ত এবং তারা ওই পত্রিকার জার্মান দপ্তরের কাজ করেন।
তুরস্কের দাবি, এই কাজ করে জার্মানি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। সাংবাদিককে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হয়েছে।
জার্মানিতে তুর্কিদের জীবন
জার্মান-তুর্কি নিয়োগ চুক্তির ৬০ বছর পূর্তিতে জার্মানির রুর জাদুঘরে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে। বিস্তারিত ছবিঘরে...
ইস্তাম্বুলের চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে ১৯৯০ সালে জার্মানির কোলন, হামবুর্গ, ভের্ল, বার্লিন ও ডুইসবুর্গ শহরের তুর্কি বংশোদ্ভূতদের ছবি তোলেন। ওপরের ছবিতে চিত্রগ্রাহক নিজে।
ছবিতে ডুইসবুর্গের ভালসুম খনির দৃশ্য, যেখানে রয়েছে তুরস্ক থেকে আসা দুই খনি শ্রমিক। পঞ্চাশের দশকে জার্মানির কৃষি ও খনিখাতে দেখা যায় শ্রমিক সংকট। জার্মানির তৎকালীন রাজধানী বন ও তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার মধ্যে ১৯৬১ সালে সাক্ষরিত হয় নিয়োগ চুক্তি, যার ফলে ১৯৭৩ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ অতিথি শ্রমিক আসেন এই দেশে।
ছবিতে কোলনে গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের একটি কারখানা। গাড়িসহ নানাখাতে কাজ করতে আসা এই তুর্কিরা বর্তমানে জার্মানির বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। জার্মানিতে রয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ তুর্কি।
চাগাতের তিনমাসব্যাপী এই সফরে জার্মানির পরিবর্তনের চিত্রটি ধরা পড়ে। বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর ধীরে ধীরে একটি বহুমাত্রিক সমাজের দিকে যাচ্ছিল দেশটি, যার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছিল অনেকের জন্যই নতুন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৯০ সালে হামবুর্গ শহরে তৎকালীন একটি আইনের বিরুদ্ধে তুর্কীদের প্রতিবাদ সমাবেশ।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই একটি তুর্কী পরিবারের বাসার দৃশ্য। হামবুর্গের বাসিন্দা হাসান হ্যুসেইন গ্যুল ও তার পরিবারের সাত সদস্য। চাগাতের ছবির এই প্রদর্শনীতে রয়েছে হাসানের পরিবারের মতো আরো বহু পরিবারের কথা, যারা জার্মানিতে বাস করছেন কয়েক প্রজন্ম ধরে।
বর্তমানে, জার্মানিতে জলপাই বা ভেড়ার দুধের ছানা পাওয়া মোটেও কঠিন নয়। তবে একটা সময় তুর্কীদের পছন্দের খাবারের ব্যাপক অভাব থাকায় এই পরিবারেরা দেশ থেকে নিজেদের খাবার নিয়ে আসতেন। আস্তে আস্তে এই অবস্থার পরিবর্তন হয় ও তুরস্কে প্রচলিত খাবারের জোগান দিতে চালু হয় বহু তুর্কি বাজার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলন শহরের এমনই এক বাজার।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলনের একটি পাড়ার দৃশ্য, যেখানে একটি দেয়ালে লেখা তুর্কী নির্বাসিত কবি নাজিম হিকমেটের কয়েকটি পংক্তি, "বাঁচতে হলে গাছের মতো, একা, মুক্ত! যেন জঙ্গলে একা হয়েও সঙ্ঘবদ্ধ থাকা যায়! এটাই আমাদের চাওয়া।"
বার্লিন-ক্রয়েতজবার্গ অঞ্চলের একটি তুর্কী বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন এই চিত্রগ্রাহক। তুরস্কের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানেও নববিবাহিত দম্পতির জন্য সবাই দোয়া করেন, যাতে তারা একসাথে একই বালিশ ভাগাভাগি করে থাকেন। কারণ, তুর্কী সংস্কৃতিতে বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য বরাদ্দ থাকে একটা লম্বা বালিশ।
তুরস্কে প্রচলিত অনেক কিছুই ভুলে যাননি এই অভিবাসীরা। খৎনার অনুষ্ঠান শেষে 'মাশাল্লাহ' লেখা উত্তরীয় পরানোর চল জার্মানিতে আজও প্রচলিত। চাগাতের এই চিত্রপ্রদর্শনীর অর্থায়ন করেছে জার্মান পররাষ্ট্র বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থা। সহযোগিতা করছে তুরস্কে অবস্থিত জার্মান সংস্থা গ্যোটে ইন্সটিটিউটও।
স্বাভাবিকভাবেই তুরস্কের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে জার্মানি। এবং সে কারণেই মঙ্গলবার তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে জার্মানি। জার্মান প্রশাসনের বক্তব্য, তুরস্কের দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাদের আটক করা হয়েছিল। আটকের কারণ সংবাদ নয়, ওই দুই সাংবাদিকের পরিচয়পত্রে ভ্রান্তি আছে বলেই তাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কোনোভাবেই তাদের হেনস্থা করা হয়নি বলে জার্মান প্রশাসন জানিয়েছে।
কিন্তু তুরস্ক একথা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, জার্মানি ওই দুই সাংবাদিককে হেনস্থা করেছে। এদিকে ওই দুই সাংবাদিক যে পত্রিকার সঙ্গে কাজ করেন, তা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। নির্বাচনের সময় সে জন্যই বিষয়টি নিয়ে তুরস্ক এত উত্তেজিত বলে জার্মান বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য।