এক সপ্তাহের মধ্যে আবার উত্তেজনা চরমে উঠল তুরস্কের সংসদে৷ সরকার এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আবার শুরু হলো মারামারি৷ মারামারিতে আহত হয়ে অন্তত দু'জন সংসদ সদস্য এখন হাসপাতালে৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের সংসদে থেকে থেকেই উত্তেজনা চরমে উঠছে৷ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আরো বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবিত বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর থেকেই এ অবস্থার শুরু৷ প্রস্তাবিত বিলে প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে যে কোনো সময় মন্ত্রীদের নিয়োগ এবং বরখাস্ত করাসহ বেশ কিছু ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ বিলটি সংসদে পাশ হলেই অবশ্য এর্দোয়ানের ক্ষমতা বাড়বে না৷ পাশ হওয়ার পর এ নিয়ে গণভোট হবে৷ আর সেখানে ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস ফর ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)-র প্রস্তাব করা এ বিল যে বিপুল সমর্থন পাবে তা প্রায় নিশ্চিত৷ বিরোধীরা বলছেন, এ কারণেই এমন একটি বিষয় নিয়ে গণভোট চাচ্ছে একেপি৷ তাঁরা মনে করেন, এর্দোয়ানের ক্ষমতা আরো বাড়ালে দেশে গণতন্ত্র আরো বিপন্ন হবে, দেশে তখন এক ব্যক্তির শাসন সাংবিধানিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত হবে৷
Turkish constitutional reforms pass first vote
00:24
বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে আলোচনা শুরুর পরই বিরোধী দলের সদস্যরা প্রতিবাদ শুরু করেন৷ নির্দলীয় সংসদ সদস্য আয়লিন নাজলিয়াকা মাইক্রোফোনের সঙ্গে শিকল দিয়ে নিজের হাত বাঁধতে বাঁধতে বলে ওঠেন, ‘‘এক ব্যক্তির শাসনকে ‘না' বলতে আমি আমার হাত শিকল দিয়ে বাঁধছি৷'' সঙ্গে সঙ্গেই সংসদে শুরু হয়ে যায় হট্টগোল৷ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ডেপুটি স্পিকার৷ একেপি-র কয়েকজন সাংসদ ছুটে গিয়ে আয়লিনের হাত মাইক্রোফোন থেকে খোলার জন্য টানাটানি শুরু করলে পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়৷ বিশেষ করে সরকারি এবং বিরোধী দলের নারী সাংসদদের মধ্যে শুরু হয়ে যায় মারামারি৷ মারামারিতে আহত হয়ে কুর্দিশ পিপল'স ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-র পারভিন বুলদান এবং সরকারি দলের গোকেন এন্ক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷
সাংসদরা যখন সংসদে মারমুখী
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংসদদের অনেক সময় উত্তেজিত হয়ে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা গেছে৷ ছবিঘরে থাকছে তেমনই কয়েকটি ঘটনার কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Acosta
জোটে বিভাজনের ফল
যাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে তিনি ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী আর্সেনি ইয়াৎসেনিয়ুক, আর যিনি হেনস্তা করছেন তিনি সাংসদ ওলে বার্না৷ তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কোর দলের লোক৷ প্রধানমন্ত্রী যখন সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরছিলেন তখন তাঁকে বক্তৃতা মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেন বর্ন৷ ঘটনাটি ইউক্রেনের জোট সরকারের মধ্যে থাকা বিভাজনকে ফুটিয়ে তুলেছে৷
ছবি: Reuters/V. Ogirenko
সংসদে টিয়ার গ্যাস!
গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কসোভোর সংসদে ষষ্ঠবারের মতো কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার হয়েছে৷ ছবিতে নভেম্বরের ৩০ তারিখে বিরোধী সাংসদদের কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Xhemaij
পরিকল্পনা পছন্দ না হওয়ায়
ছবিটি জাপানের সংসদের৷ বিদেশে সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনার বিরোধিতা করতে গিয়ে গত সেপ্টেম্বরে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Y. Tsuno
ডিম ছুঁড়ে মারা
আবারো ইউক্রেন৷ এই ঘটনাটি ২০১০ সালের এপ্রিল মাসের৷ কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নৌঘাঁটি সম্প্রসারণ অনুমোদনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বিক্ষোভ৷ সেসময় ছুঁড়ে আসা ডিমের হাত থেকে বাঁচতে সংসদের তৎকালীন স্পিকারকে ছাতার ব্যবহার করতে হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Marusenko
রুশ ভাষার জন্য
২০১২ সালের মে মাসে ইউক্রেনের কিছু অংশে রুশকে অফিসিয়াল ভাষা করার প্রস্তাবকে ঘিরে ইউক্রেনের সংসদে এই দৃশ্যের অবতারণা হয়৷
ছবি: dapd
মাংস নিয়ে রাজনীতি
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে গরুর মাংস নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গরুর মাংস খাওয়ার পার্টি আয়োজন করায় স্বতন্ত্র সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন বিজেপির সাংসদরা৷ গত অক্টোবরে এই ঘটনা ঘটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Mustafa
নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংস্কার
২০০৭ সালে তাইওয়ানের সংসদে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার বিল নিয়ে আলোচনার সময় প্রতিপক্ষ সাংসদরা এভাবে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন৷ গত এক দশকে তাইওয়ানের সংসদে এরকম ঘটনা অন্তত পাঁচবার ঘটেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Hsin-Teh
মুক্তবাণিজ্য চুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি অনুমোদনের চেষ্টার প্রতিবাদে বিরোধী সাংসদরা একটি সংসদীয় কমিটির রুমে ঢোকার চেষ্টার করছেন যেখানে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি দলের সাংসদরা৷ ঘটনাটি ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসের৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Young-Han
প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে বিঘ্ন ঘটানোয়
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদে বক্তব্য রাখছিলেন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা৷ সেসময় এএনসি দলের সাবেক নেতা জুলিয়াস মালেমার দল বক্তব্যে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ এরপর সাংসদদের সংসদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়৷ এতে কয়েকজন আহত হন৷
ছবি: Reuters/R. Bosch
ঘুসাঘুসি
২০১৩ সালে ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্টে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সময় সাংসদরা বিবাদে জড়িয়ে পড়েন৷ বিরোধী দল অভিযোগ করে, তাদের সাতজন সদস্য হামলার শিকার হন৷ ছবিতে তাঁদের একজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters
প্রেসিডেন্টকে শপথ নিতে দেব না তাই
২০০৬ সালে মেক্সিকোতে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফেলিপে কালডেরন যেন কংগ্রেসে ঢুকতে না পারেন সেজন্য একটি দরজা বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করেন বিরোধী দলের সাংসদরা৷ অবশ্য প্রেসিডেন্ট সেদিন শপথ নিতে পেরেছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Acosta
11 ছবি1 | 11
তুরস্কের সংসদে গত কিছুদিনে এই নিয়ে তৃতীয়বার মারামারি হলো৷
আমাদের দেশের সংসদেও এমন মারামারির ঘটনা কি কখনও আপনি প্রত্যক্ষ করেছেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷