‘‘তুর্কি নাগরিকরা স্বচ্ছন্দে জার্মানিতে বেড়াতে আসতে পারেন, তারা এখানে স্বাগতম,’’ বলেন ম্যার্কেল৷ আংকারা ইতিপূর্বে জার্মানিতে জাতিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের বিপদের কথা বলেছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gentsch
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন চলাকালীন জার্মানিতে আসার ব্যাপারে কোনো তুর্কি নাগরিকের ভয় পাওয়া উচিত নয়, ম্যার্কেল রবিবার পশ্চিম জার্মানির ডেলব্র্যুক শহরে একটি নির্বাচনি সমাবেশে ঘোষণা করেন, ‘‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে কোনো তুর্কি নাগরিক আমাদের এখানে বেড়াতে আসতে পারেন৷’’
‘‘কোনো সাংবাদিককে এখানে গ্রেপ্তার করা হয় না৷ কোনো সাংবাদিককে এখানে আটকে রাখা হয় না৷ আমাদের এখানে বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন আছে এবং আমরা সে বিষয়ে গর্বিত,’’ চ্যান্সেলর যোগ করেন৷
জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী, অন্তত ১০ জন জার্মান নাগরিককে বর্তমানে রাজনৈতিক অভিযোগে তুরস্কে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ ‘ডি ভেল্ট’ পত্রিকার জার্মান-তুর্কি সাংবাদিক ডেনিজ ইউচেল তাদের অন্যতম৷
শনিবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি যাত্রা সতর্কতা প্রকাশ করে, সেখানে জার্মানিগামী অথবা জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কি নাগরিকদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে, কেননা জার্মানিতে নির্বাচনি প্রচার অভিযান চলাকালীন জাতিবাদের খবর পাওয়া গিয়েছে৷
জার্মানিতে যে সব নারী চ্যান্সেলর হতে চান
জার্মানির সাতটি মুখ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে চারটি দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হলেন মহিলা৷ চলুন, পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক...
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
‘মা ম্যার্কেল’
জার্মানির প্রথম মহিলা চ্যান্সেলর হিসেবে ২০০৫ সালে শপথ গ্রহণ করার পর ১২ বছর কেটে গেছে – ম্যার্কেল এখনও সেই পদেই অধিষ্ঠিত রয়েছেন৷ এমনকি নিজের দলের লোকেরাও আজ তাঁকে ‘মুটি’ বা ‘মা’ বলে অভিহিত করে – মা বলতে জাতির জননী – এবং সেটা ঠাট্টা বা অশ্রদ্ধা করে নয়৷ আর্থিক সংকট থেকে শুরু করে উদ্বাস্তু সমস্যা অবধি হাল ধরে রেখে জার্মানিকে বাঁচিয়ে চলেছেন ‘মা’ – এই হলো জনমানসে ম্যার্কেলের ভাবমূর্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Bergmann
আরো চার বছর?
জরিপ বলছে, ম্যার্কেলের সিডিইউ দল আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনেও ৪০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেতে চলেছে৷ অর্থাৎ চ্যান্সেলর হিসেবে ম্যার্কেলের একটি চতুর্থ কর্মকালের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
‘সবুজ দলের আঙ্গেলা’
জার্মানির সবুজ পার্টি যে পশ্চিমি বিশ্বের সফলতম পরিবেশবাদী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে গণ্য, তার একটি কারণ হলো, জার্মানির সবুজদের ডান কিংবা বাম, কোনোদিকেই ফেলা চলে না৷ ঠিক সেইভাবেই সবুজদের কাট্রিন গ্যোরিং-একহার্ড একদিকে কট্টর পরিবেশবাদী, অন্যদিকে আবার গভীরভাবে ধর্মানুরাগী৷
ছবি: imago/S. Simon
সবুজদের ডবল টিকিট
জার্মানির সবুজদের এবার একজনের বদলে দু’জন মুখ্য প্রার্থী: কাট্রিন গ্যোরিং-একহার্ড ও চেম ও্যজদেমির, একজন মহিলা ও একজন পুরুষ, কিন্তু দু’জনেই মধ্যমপন্থি, এই দু’জনেই আবার দলের যুগ্ম সভাপতি৷ শোনা যাচ্ছে, সবুজরা নাকি এবার ম্যার্কেল সরকারে জোট সহযোগী হবার আশা করছে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
বামপন্থি নেত্রী
বামদলের প্রধান সারা ভাগেনক্নেশ্ট কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির ইয়েনা শহরে বড় হয়েছেন৷ তাঁর বাবা ইরানি বংশোদ্ভূত ও মা জার্মান, তাই তাঁর নামের বানান কিন্তু প্রচলিত জার্মান ‘সারাহ’ নয়, বরং ইরানি ধাঁচের ‘সাহরা’৷ তিনি একবার মন্তব্য করেছিলেন, সমাজতন্ত্রের আদর্শের সঙ্গে সাবেক পূর্ব জার্মানির ‘‘কোনো সম্পর্ক নেই’’৷ অপরদিকে তিনি ‘‘শিকার ধরা পুঁজিবাদের’’ বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছেন৷
ছবি: DW/R.Oberhammer
বিরোধীর ভূমিকায় চিরকাল?
বামদল গত চার বছর ধরে জার্মান সংসদে বৃহত্তম বিরোধী দল৷ ২০১৩ সালে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল বলেছিল, তারা কোনোমতেই বামদলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করবে না৷ এবার কিন্তু এসপিডি এ বিষয়ে নীরব৷ হয়ত এসপিডি সিডিইউ-সিএসইউ-এর চেয়ে কম আসন পেলেও অন্য একটি জোট সরকার গঠনের স্বপ্ন দেখছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/P. Steffen
‘জার্মানির জন্য বিকল্প’
অ্যালিস ভাইডেলকে উগ্র দক্ষিণপন্থি, বহিরাগত বিদ্বেষি এএফডি দলের মুখাবয়ব বলা চলে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ উচ্চশিক্ষিতা ভাইডেল নিজে সমকামী; তাঁর দল সমকামী বিবাহের বিরোধী৷ এএফডি দল যখন মূলত ইউরো মুদ্রা বিরোধী দল ছিল, তখন ভাইডেল যোগদান করেন৷ সেযাবৎ তাঁর দলে দক্ষিণপন্থি প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ও দলের একাধিক সদস্যকে সম্প্রতি জাতিবাদী ও বহিরাগত বিদ্বেষি মন্তব্য করতে শোনা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
ভাইডেল একা নন
এএফডি দলও এবার চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে দু’জনকে মনোনীত করেছে, ভাইডেল ও এএফডি দলের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা আলেক্সান্ডার গাউল্যান্ড৷ ভাইডেল তাঁর দলকে কেন্দ্র করে সব বিতর্ক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে যথেষ্ট সফল হয়েছেন – যদিও সম্প্রতি একটি টেলিভিশন বিতর্কে তাঁকে সঞ্চালিকার উপর বিরূপ হয়ে স্টুডিও ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kappeler
8 ছবি1 | 8
‘‘জার্মানির রাজনৈতিক নেতারা তুরস্কবিরোধী ও তুরস্কের ইইউ সদস্য হওয়া রোখার সপক্ষে হওয়ার ভিত্তিতে তাদের নির্বাচনি প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন,’’ বলে তুরস্কের বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়৷
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তুর্কি নাগরিকদের আরো বলা হয়েছে যে, জার্মানি কুর্দিস্তান শ্রমিক দল পিকেকে অথবা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী তুর্কি যাজক ফেতুল্লাহ গুলেনের চক্রের মতো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীদের স্বাগত জানিয়ে থাকে৷ সন্ত্রাসবাদীরা ‘‘স্বচ্ছন্দে (জার্মানির) পথেঘাটে চলাফরা করে,’’ বলে তুর্কি পররাষ্ট্র দপ্তর আভাস দেয়৷
বার্লিন-আংকারা সম্পর্কে তিক্ততা
গত সপ্তাহে উভয়ের একমাত্র টেলিভিশন বিতর্কে ম্যার্কেল ও আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে তাঁর মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শুলৎস, দু'জনেই তুরস্কের সঙ্গে ইইউ সদস্যপদ সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা বন্ধ করার সপক্ষে মতপ্রকাশ করেন৷
শনিবার একটি নির্বাচনি প্রচার সমাবেশে শুলৎস তুর্কি সরকারের যাত্রা সতর্কতার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘‘তুরস্কের কাছ থেকে এ ধরণের অমর্যাদা সহ্য করার মতো দেশ জার্মানি নয়৷’’
গত বছর প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টার পর থেকে এক পর্যায় কূটনৈতিক সংকটের ফলে দু'টি দেশের সম্পর্কে ব্যাপক অবনতি ঘটেছে৷
ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে তুরস্কে মোট ৫০,০০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বার্লিন যার তীব্র সমালোচনা করেছে৷
আংকারার দৃষ্টিতে ফেরারি তুর্কিরা জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার ফলে ও জার্মানিতে তুর্কি রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে আংকারার রোষ আরো বেড়েছে৷
ইতিপূর্বে এর্দোয়ান একটি বিবৃতিতে জার্মানিতে বসবাসকারী তুর্কিদের জার্মানির মুখ্য তিনটি রাজনৈতিক দলকে ভোট না দেবার পরামর্শ দেন৷ প্রত্যুত্তরে বার্লিন তুর্কি প্রেসিডেন্টকে ‘নাক না গলাতে’ বলে৷
জার্মানিতে প্রায় ৩০ লাখ তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করেন৷ তাদের মধ্যে দশ লক্ষের আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার আছে৷
এসি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
জার্মান নির্বাচনের প্রচারণা প্ল্যাকার্ড
আসল? বিদেশিবিদ্বেষী? সেকেলে? জার্মানির নির্বাচনের জন্য তৈরি পোস্টারে এ রকম আরো অনেক শব্দ দেখা যাচ্ছে৷ ভোটারদের দলে ভেড়াতে বড় দলগুলোর পোস্টারে কী দেখা যাচ্ছে দেখে নেই চলুন৷
ছবি: picture alliance/dpa/B.Pedersen
খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)
টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল নির্বাচনি পোস্টারে এখন আর কোনো অপরিচিত মুখ নন৷ তাঁর দল সিডিইউ ২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে গোটা জার্মানিতে ২২,০০ প্ল্যাকার্ড বসাচ্ছে৷ এতে জার্মান চ্যান্সেলরের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে জার্মান পতাকা ব্যবহারে করে দলটির দেশপ্রেম বোঝানো হয়েছে৷ আর স্লোগানে প্রাধান্য পেয়েছে নিরাপত্তা, পরিবার এবং কাজের মতো বিষয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/B.Pedersen
সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি)
সামাজিক গণতন্ত্রীরা তাদের দীর্ঘদিনের লাল আর বর্গাকারের লোগোকে পোস্টারে প্রাধান্য দিয়েছে৷ তাদের পোস্টারে শিক্ষা, পরিবার, পেনশন, বিনিয়োগ এবং বেতন বৈষম্যের মতো বিষয়াদি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ২৪ মিলিয়ন ইউরোর নির্বাচনি প্রচারণার পর নির্বাচনের ঠিক আগে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নাকি একটি বোমা ফাটাতে পারে এসপিডি, তবে সেসম্পর্ক কিছু এখনো জানা যায়নি৷
মুক্তগণতন্ত্রী দল (এফডিপি)
মুক্তগণতন্ত্রীদের নির্বাচনি প্রচারণায় খরচ হচ্ছে পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সাদাকালো ফটোশুটের মাধ্যমে পোস্টারে আধুনিক মার্কেটিংয়ের ছাপ ফুটিয়ে তুলেছে সেদেল৷ তাদের পোস্টারে শোভা পাচ্ছেন একজন: ক্রিস্টিয়ান লিন্ডার৷ তবে পোস্টারে ছোট করে লেখা নানা কথা পড়তে ভোটারদের বেশ কষ্টই করতে হবে৷ ‘অস্থিরতাও একটা গুণ’, লেখা হয়েছে পোস্টারে৷
সবুজ দল
সবুজ দল তাদের দলীয় নীতিকেই নির্বাচনের পোস্টারে তুলে ধরছেন৷ সেদলের স্লোগানে জায়গা করে নিয়েছে পরিবেশ, ইন্টিগ্রেশন এবং শান্তির মতো বিষয়৷ তাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘‘পরিবেশই সবকিছু নয়, তবে পরিবেশ ছাড়া সবকিছুই অর্থহীন৷’’
জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি)
তবে আসন্ন নির্বাচনের সবচেয়ে বিতর্কিত প্ল্যাকার্ড তৈরি করেছে ডানপন্থি এএফডি পার্টি৷ আপাত দৃষ্টিতে এই পোস্টারটি দেখলে মনে হবে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী হাসছেন৷ কিন্তু স্লোগান কী বলছে জানেন? ‘‘নতুন জার্মান? তাদের আমরাই তৈরি করবো৷’’ দলটির আরেক পোস্টারে বিকিনি পরা তিন নারীকে দেখা গেছে৷ আর তাতে লেখা: ‘‘বোরকা? আমরা বিকিনি পছন্দ করি৷’’
বামদল
বামদলের পোস্টারে বিভিন্ন ফস্টের বর্ণিল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ ‘‘[বর্নিল] মানুষ৷ স্পষ্টভাবে ডানপস্থি ঘৃণার বিরোধী’’, বলছে তাদের স্লোগান৷ দলটির নির্বাচনি প্রচারণায় গুরুত্ব পাচ্ছে সাশ্রয়ী ভাড়া, আরো স্বচ্ছ পেনশনের নিশ্চয়তা এবং অস্ত্র রপ্তানি বন্ধের মতো বিষয়৷