আবার কেঁপে উঠলো তুরস্ক। দক্ষিণপূর্ব তুরস্কে সোমবার সকালে আবার বড় ভূমিকম্প হয়। অন্ততপক্ষে একজন মারা গেছেন। ৬৯ জন আহত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের পরিমাপ ছিল পাঁচ দশমিক ছয়। এই ভূমিকম্পেও প্রচুর বাড়ি ভেঙেছে। অনেকে এখনো চাপা পড়ে আছেন। উদ্ধারকাজ চলছে।
এই অঞ্চলে গত তিন সপ্তাহে এই নিয়ে চারবার বড় ভূমিকম্প হলো। গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবারের ভূমিকম্প
তুরস্কের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মালাটিয়া অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়। মাটির ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার নিচে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল।
এই ভূমিকম্পে অন্ততপক্ষে ২৯টি বাড়ি ভেঙেছে। একজন মারা গেছেন।
ভূমিকম্পের পর ভবন নিয়ে তদন্তে তুরস্ক
তুরস্ক এবং সিরিয়া মিলে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে৷ তুরস্কের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে৷ ভবন নির্মাণে অব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত৷
ছবি: KHALIL ASHAWI/REUTERS
ভূমিকম্পের তাণ্ডবলীলায় ধ্বংস মসজিদ
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিবের মালান্দ গ্রামের কেন্দ্রে অবস্থিত মসজিদটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে৷ এর সোনালি গম্বুজটি মাটিতে পড়ে রয়েছে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার সাক্ষী হয়ে৷ ফজরের নামাজের অনেক আগেই ভূমিকম্প হওয়ায় তখনও নামাজিরা মসজিদে আসতে শুরু করেননি৷ ফলে এখানে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি৷ কিন্তু এই মসজিদটি কেবল নামাজের জায়গাই ছিল না, গ্রামের মানুষের মিলনকেন্দ্র হিসাবেও এর অনুপস্থিতি টের পাচ্ছেন সবাই৷
ছবি: KHALIL ASHAWI/REUTERS
নামাজের বিকল্প ব্যবস্থা
মসজিদসহ আশেপাশের অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে৷ সেই শোক কাটিয়ে উঠতে ধ্বংসস্থলের পাশের খোলা জায়গায় আয়োজন করা হয় নামাজের৷ নিহতদের পরকালে শান্তি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয় নামাজে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবারে জুম্মার নামাজের জন্য মসজিদের পাশে গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন৷
ছবি: KHALIL ASHAWI/REUTERS
স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র
যারা ভূমিকম্পের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন, তাদেরও অনেকে হারিয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ তাদের কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ী সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে৷ সিরিয়ার লাটাকিয়ায় একটি স্কুলকে এমন আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে৷ সেখানেই ধ্বংস হওয়া ঘর থেকে আনতে পারা অল্প কিছু ব্যবহার্য নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ৩৯ বছরের ইয়াসমিনে আসাদ ইয়াসিন৷ সঙ্গে রয়েছে তার তিন সন্তানও৷
ছবি: FIRAS MAKDESI/REUTERS
খাদ্যের জন্য অপেক্ষা
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার চেয়ে তুরস্কের ভূমিকম্প পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কিছুটা ভালো হলেও সেখানেও রয়েছে সংকট৷ সিরিয়ার মতো তুরস্কেও অনেকেই বাধ্য হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা নিয়েছেন৷ তুরস্ক সরকার ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকেও আসছে সহযোগিতা৷ হাতায় প্রদেশের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে অনেককেই দেখা যাচ্ছে খাবারা সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে৷
ছবি: ELOISA LOPEZ/REUTERS
শিশুদের মনে আঘাত
অনেক শিশুই তাদের স্বজন হারিয়েছে৷ ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি বোঝার সামর্থ্য না হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুদের মনে৷ তুরস্কের হাতায় প্রদেশের একটি ক্যাম্পে ফাতিমা আশেরি তার শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ত্রাণের অপেক্ষায়৷
ছবি: CLODAGH KILCOYNE/REUTERS
এখনও উদ্ধারকাজ চলছে
ভূমিকম্পের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও রাত-দিন উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা৷ সবার মনেই আশা, যদি প্রিয়জনকে জীবিত উদ্ধার করা যায়৷ বিশাল বিশাল কংক্রিটের স্তূপ সরিয়ে খোঁজা হচ্ছে নিখোঁজদের৷ ছবিতে দেখানো হাতায় প্রদেশের আন্তাকায়া শহরের এই ধ্বংসস্তূপে সন্ধান চালানো হচ্ছে এক মা-মেয়ের৷
ছবি: CLODAGH KILCOYNE/REUTERS
ত্রাণ আসছে
গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার সকল অংশে আসাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের অনেক অংশে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও৷ তবে সকল সংকট মোকাবিলা করে সিরিয়াতেও দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে ত্রাণ৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিরিয়ার বাব আল-হাওয়া সীমান্ত ক্রসিংয়ে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা- ডাব্লিউএফপির ত্রাণ নিয়ে আসা ট্রাকগুলো অপেক্ষা করছে৷
ছবি: MAHMOUD HASSANO/REUTERS
তাঁবুতে সাময়িক ব্যবস্থা
এত বড় দুর্যোগ সামাল দেয়ার মতো প্রস্তুতি তুরস্কের ছিল না৷ এত বেশি সংখ্যার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার মতো ব্যবস্থাও বিভিন্ন শহরে নেই৷ ফলে দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি সেবা ব্যবস্থাপনা সংস্থা আফাদ বিভিন্ন স্থানে তাঁবু তৈরি করে আশ্রয় দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের৷ এমনই কিছু তাঁবুতে এবং সেখানে আশ্রয় নেয়া মানুষদের দেখা যাচ্ছে তুরস্কের কিরিখান শহরের এই ছবিতে৷
ছবি: PIROSCHKA VAN DE WOUW/REUTERS
আবার কবে আসবে সুদিন?
সিরিয়া এবং তুরস্কে যে এলাকাজুড়ে ভূমিকম্পের প্রকোপ ছিল তীব্র, সেসব এলাকাতে বাড়ি-ঘরের অবস্থা ছবির বাড়ির মতোই৷ এত বড় বিপর্যয়ের পর আবার কবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন ক্ষতিগ্রস্তরা, আবারা কবে এলাকাগুলো ফিরবে আগের রূপে, কেউ বলতে পারেন না৷
ছবি: CLODAGH KILCOYNE/REUTERS
ধ্বংসস্তূপ থেকেও সম্পদ বাঁচানোর চেষ্টা
কংক্রিটের নীচে সবই চাপা পড়েছে৷ অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব৷ যদি কিছু জিনিস ফেরত পাওয়া যায়, তাতেই বা মন্দ কী? এমন আশায় অনেকেই প্রতিদিন হাজির হচ্ছেন নিজের ধ্বংস হওয়া বাড়ির সামনে৷ কেউ কেউ অন্যের সহায়তায় বের করে আনছেন দরকারি জিনিসপত্র৷
ছবি: ELOISA LOPEZ/REUTERS
সুন্দর ভবিষ্যতের অপেক্ষায়
আশা হারালে চলবে না৷ একদিকে হতাহতের পরিবার যখন আহাজারি করছে, আশার বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছেন সিরিয়ার দুই শিল্পী৷ আজিজ আসমার এবং সালাম হামেদ ধ্বংসস্তূপেই রংতুলি নিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন নানা চিত্র৷ ফুটিয়ে তুলছেন ভালোবাসা৷
ছবি: KHALIL ASHAWI/REUTERS
11 ছবি1 | 11
গত ৬ ফেব্রুয়ারিতেও এই অঞ্চলে প্রবল ভূমিকম্প হয়। তখন অন্তত দুই হাজার তিনশ জন মারা যান।
তুরস্কের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রেসিডেন্সি(এএফএডি) চালান ইউনুস সেজার। তিনি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর পাঁচটি বাড়িতে উদ্ধারকারী দল গেছে।
সংগঠনের ভূমিকম্প ও রিস্ক রিডাকশনের জেনারেল ডিরেক্টর ওরহান টাটার জানিয়েছেন, তিন সপ্তাহে এখানে চারটে বড় ভূমিকম্প হয়েছে। আর ৪৫ বার আফটারশক অনুভূত হয়েছে। এই আফটারশকের পরিমাপ ছিল পাঁচ থেকে ছয়ের মধ্যে। এই ঘটনাকে একেবারেই সাধারণ বলা যাবে না।
বিধ্বস্ত এলাকায় আবার ভূমিকম্প
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে যে ভূমিকম্প হয় তার পরিমাপ ছিল সাত দশমিক সাত ও সিরিয়ায় সাত দশমিক ছয়। এর ফলে ৫০ হাজার মানুষ মারা গেছেন। ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ঘরহীন মানুষদের জীবন
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার অসংখ্য মানুষ এখন ঘরহারা৷ অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে কেমন কাটছে তাদের জীবন, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Thaier Al-Sudani/REUTERS
স্টেডিয়ামে আশ্রয়
তুরস্কের কাহরামানমারাসের এক স্টেডিয়ামে তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ৷ ঘর হারালেও পোষা পাখিগুলোকে রক্ষা করেছেন ২৬ বছর বয়সি এই তরুণ৷ তাঁবুর দরজায় বসে খাঁচার সেই পাখিগুলোর দিকেই তাকিয়ে আছেন তিনি৷
ছবি: Nir Elias/REUTERS
শিশুদের ব্যস্ত রাখা
তুরস্কের ইসকান্দারুন শহরেও ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে৷ প্রাণ গেছে অনেকের৷ অনেক শিশু হয়েছে এতিম৷ সব শিশুকে ব্যস্ত রেখে দুঃখ ভোলানোর চেষ্টাও চলছে৷ ওপরের ছবিতে নিজেদের আঁকা ছবি বোর্ডে লাগাচ্ছে কয়েকজন শিশু৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
ছোট কাঁধে বড় দায়িত্ব
সিরিয়ার জাবেহ শহরের এই শিশুটিকে রেশনের খাদ্য নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়েছিল তার পরিবার৷ এক স্কুল থেকে রুটি নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরছে সে৷
ছবি: Amr Alfiky/REUTERS
স্কুলই তাদের ঘর
সিরিয়ার লাতাকিয়ার ঘরহারাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে রেফাত দাহো স্কুলে৷ ছবিতে সেই স্কুলের সামনের দৃশ্য৷
ছবি: Amr Alfiky/REUTERS
বিষন্ন মুখে আনন্দের রং
শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য তাদের নানাভাবে আনন্দে রাখার চেষ্টা চলছে৷ তুরস্কের ওসমানিয়ের এক শিশুর গালে ছবি এঁকে তাকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করছেন এক নারী৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
জুমার নামাজ
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন তুরস্ক ও সিরিয়ার অনেক মানুষ৷ শুক্রবার তুরস্কের আদিয়ামান শহরে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা যায় কয়েকশ মানুষকে৷
ছবি: Thaier Al-Sudani/REUTERS
শিশুর আনন্দ...
কাহরামানমারাসের এক শিশু এক বেলার খাবার পেয়ে ভীষণ আনন্দিত৷ ট্রে-তে খাবার সাজিয়ে খুশিমনে পরিবারের সদস্যদের কাছে নিয়ে যাচ্ছে সে৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
অস্থায়ী পার্ক
তুরস্কের হাতায় প্রদেশের এক আশ্রয় শিবিরে শত শত গৃহহীনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে তাঁবুতে৷ পাশেই শিশুদের জন্য রয়েছে দোলনায় দোল খেয়ে আনন্দ করার ব্যবস্থ৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
রেশনের দোকানে লম্বা লাইন
এই ছবিটিও তুরস্কের ইসকান্দারুন শহরের৷ প্রয়োজনীয় নানা ধরনের পণ্য বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে শুনে ছুটে এসেছেন সব সহায়-সম্বল হারানো মানুষেরা৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
থেমে নেই পড়াশোনা
ছবির এই দুই কিশোরী সিরিয়া থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছে তুরস্কের কাহরামানমারাসের এক আশ্রয় শিবিরে৷ সেখানেই বই পড়ায় ব্যস্ত তারা৷
ছবি: Eloisa Lopez/REUTERS
10 ছবি1 | 10
মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে দেহ উদ্ধার করা হচ্ছে।
তুরস্কে মোট দুই কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৮ লাখ মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্প তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর ভূমিকম্প হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।