তুরস্কে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তুপে চালানো অভিযানের পঞ্চম দিনে একই পরিবারের চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল৷ এ পর্যন্ত ১৯ জনের লাশ এবং একজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে দলটি৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির আদিয়ামান সিটির জুম হেরিয়াত মাহেল্লিসি এলাকায় মঙ্গলবার রাতে আট ঘণ্টার অভিযানে দুই সন্তানসহ এক দম্পতির লাশ উদ্ধার করেন উদ্ধারকর্মীরা৷
বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে উদ্ধারকর্মীরা তাদের অভিযানে ওই চারজনসহ এ পর্যন্ত ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন, জীবিত উদ্ধার করেছেন একজনকে৷ বাংলাদেশ দলের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদ্ধারকারীরা সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের মিডিয়া সমন্বয়কারী উপ-সহকারী পরিচালক ফয়সালুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে অভিযান শেষ করে ক্যাম্পে ফিরে যান বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দল৷
৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপে ৭ দশমিক ৮ মাত্রায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়৷ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মাত্র ১০০ কিলোমিটার উত্তরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রায় আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে তুরস্ক-সিরিয়ার বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ দুই দেশ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৪১ হাজারের বেশি৷
ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়ারা এখন প্রচণ্ড শীত ও ক্ষুধার কবলে
তুরস্ক ও সিরিয়ায় শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়ারা ভয়ঙ্কর দিন পার করছেন৷ আশ্রয় ও স্বজন হারানো হাজারো মানুষের জন্য রাস্তা আর, অস্থায়ী শিবিরই হয়ে উঠেছে বাড়ি-ঘর৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
খোলা আকাশের নীচে
ভূমিকম্পের প্রায় সপ্তাহ পেরুলেও ধ্বংসস্তূপ সরানোর এখনও কোনো কুলকিনারা করা যায়নি৷ এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন কংক্রিটের নীচে৷ স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন প্রিয়জনের খবর জানতে৷ তুরস্কের কাহরামানমারাসে ধ্বসে পড়া ভবনের পাশে তেমনই কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে অপেক্ষার প্রহর গুণতে৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
তাঁবুতে আশ্রয়
ভূমিকম্পে আশ্রয় হারানো মানুষদের জন্য কোথাও কোথাও আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে৷ তুরস্কের গাজিয়ানটেপে একটি ফুটবল খেলার মাঠে তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: Irakli Gedenidze/REUTERS
তীব্র ঠান্ডা
এর মধ্যে বইছে শৈত্য প্রবাহও৷ হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়া তাপমাত্রায় রাতারাতি আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষেরা পড়েছেন ভয়ানক বিপাকে৷
ব্যক্তি বা সংগঠনের উদ্যোগে আশ্রয়হীন মানুষদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ তুরস্কের কাহরামানমারাসে এক ব্যক্তিকে খাবার বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
যাওয়ার জায়গা নেই
চারদিকে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন৷ সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন জানা নেই এই নারীর৷ ছবিটি তুরস্কের হাতায় তোলা৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
দুঃসহ পরিবেশ
বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে যথেষ্ট খাবার, ঔষধ, এমনকি টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই৷ আলিহান কাভাসোগলু নামের এক নারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছি৷ টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ সবাইকে বাইরেই কাজ সারতে হয়৷ চারদিকে এত দুর্গন্ধ যে রাতে আমরা ঘুমাতেও পারি না৷’’
ছবি: Benoit Tessier/REUTERS
চলছে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের প্রায় এক সপ্তাহ পরও সৌভাগ্যবান অনেককে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে৷ স্বজন হারানোরা এখনও তাই আশায় বুক বেঁধে আছেন৷ রাতেও ধ্বংস্তূপের পাশে আগুন জ্বালিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন৷
ছবি: Suhaib Salem/REUTERS
হতাশা
সময় গড়ানোর সাথে সাথে অবশ্য বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷ শেষ পর্যন্ত স্বজনদের দেখা পাবেন কিনা জানেন না আপনজনেরা৷ ক্ষুধা, ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে ভয়াবহ হতাশা গ্রাস করেছে বেঁচে যাওয়া মানুষদের৷
ছবি: Kyodo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
ওই ঘটনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে বাংলাদেশের সম্মিলিত উদ্ধারকারী দল ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তুরস্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে৷ পরদিন বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় দেশটির আদানা মিলিটারি এয়ার বেইসে পৌঁছায় দলটি৷ সেখান থেকে উদ্ধারকারী দল আদিয়ামান শহরে পৌঁছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজ শুরু করে৷
৬০ সদস্যের দলটিতে ফায়ার সার্ভিসের ১২ সদস্যের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ২৪ জন এবং ১০ জন চিকিৎসক রয়েছেন৷ এছাড়া ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে সিরিয়ায় পাঠানো হয় ১১ টন ত্রাণ সামগ্রী৷ এর মধ্যে রয়েছে তাবু, কম্বল, সোয়েটার, শুকনো খাবার ও ওষুধ৷
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃতদেহ মিলছে তুরস্ক এবং সিরিয়া থেকে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত দুই দেশ।
ছবি: OZAN KOSE/AFP
মৃতের সংখ্যা বিশ হাজার ছাড়ালো
তুরস্ক এবং সিরিয়ার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারীরা। এখনো পর্যন্ত ২০ হাজার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
ছবি: BULENT KILIC/AFP
তুরস্কেই ১৭ হাজার
শুধু তুরস্কেই ১৭ হাজারের উপর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। সিরিয়ায় মিলেছে তিন হাজার ১৬২টি দেহ।
ছবি: AFP
প্রবল ঠান্ডা
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ধ্বংসস্তূপে আটকে এখনো বহু মানুষ। প্রবল ঠান্ডায় মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
ছবি: ADEM ALTAN/AFP
এর্দোয়ানের পরিদর্শন
বৃহস্পতিবার ভূমিকম্প বিধ্বস্ত শহর গাজিআনটেপে গেছিলেন প্রেসিডেন্ড এর্দোয়ান। শুধু এই শহরেই ছয় হাজারের উপর বাড়ি ভেঙে পড়েছে। মৃতের সংখ্যা এখনো পর্যন্ত প্রায় হাজার।
ছবি: BULENT KILIC/AFP
অ্যামেরিকার সাহায্য
বৃহস্পতিবার অ্যামেরিকা ৮৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে। তুরস্ক এবং সিরিয়া দুই দেশকেই এই অর্থ পাঠানো হবে।
ছবি: Stoyan Nenov/REUTERS
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিশ্রুতি
বিশ্ব ব্যাংক বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, তুরস্ক এবং সিরিয়াকে এক দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার সাহায্য করা হবে।
ছবি: Kamran Jebreili/AP/picture alliance
বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া
১৯৯৯ সালে তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। তারপর বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন আইন তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ সেই নিয়ম মেনে তুরস্কে বাড়ি তৈরি হয়েছে কি না! সরকার অবশ্য এখন এ বিষয়ে আলোচনা করতে নারাজ।