তুরস্কে এক কয়লা খনিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে৷ এ পর্যন্ত ২০১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ ৩৬৩ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে৷ খনিতে কর্মরত ৭৮৭ জনের মধ্যে বাকিদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে৷
বিজ্ঞাপন
তবে তুরস্কের জ্বালানি মন্ত্রী তানের ইলদিজ জানান, খনিতে আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে৷ মানিসা রাজ্যের একটি কয়লা খনিতে মঙ্গলবার এ দুর্ঘটনা ঘটে৷
জ্বালানি মন্ত্রী বলেন, ‘‘মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি৷ আর এটাও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে৷’’ খনিতে আগুন জ্বলতে থাকা এবং বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড ছড়িয়ে পড়ার কারণে উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ একটি ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক ট্র্যান্সফর্মারের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তুরস্কের কোনো খনিতে এর আগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি৷
ইস্তানবুলের ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণের এই খনির কাছে এখন হাজার মানুষের ভিড়৷ সবাই চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন৷ প্রিয়জনদের দেখা না পাওয়ায় কাঁদছেন অনেকে৷ সেনা ইসবিলার তাঁর সন্তানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘দুপুর থেকে আমি আমার ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় আছি৷ অথচ এখনো ওর ব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি৷’’
আরুম উনজার সোমা শহরের এই কয়লা খনিরই কর্মী৷ আটকে পড়া সহকর্মীদের জন্য তিনিও উৎকণ্ঠিত৷ তিনি বলছিলেন, ‘‘দুর্ঘটনার শিকার সকলেই আমার বন্ধু৷ আমরা একটা পরিবার৷ পরিবারটা আজ তছনছ হয়ে গেল৷ ওদের ব্যাপারে খুব কম খবরই পাচ্ছি৷ যা পাচ্ছি সবই খারাপ খবর৷’’
মঙ্গলবার সোমার এই খনিতে মোট ৭৮৭ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন৷ এ পর্যন্ত যাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷
এসিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স, ডিপিএ, এএফপি)
তুরস্কে খনি দুর্ঘটনা
‘‘আমার ছেলের কী হয়েছে? মেহমেত, তুই কোথায়?’’ – এই আহাজারি এক মায়ের৷ তুরস্কে কয়লা খনিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো যাদের খোঁজ মেলেনি, তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷
ছবি: picture alliance/AA
কয়লাখনির নরককুণ্ডে
মঙ্গলবার দুপুরে তুরস্কের মানিসা প্রদেশের সোমা শহরে ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই খনিতে বিস্ফোরণের পরপরই আগুন ধরে যায়৷ সে সময় ভেতরে ছিলেন অন্তত ৭৮৭ জন৷ তাদের মধ্যে ৩৭০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২৮০ ছাড়িয়েছে৷
ছবি: Reuters
বৈদ্যুতিক গোলোযোগে বিস্ফোরণ?
ইস্তানবুল থেকে আড়াইশ কিলোমিটার দক্ষিণে ওই খনিতে যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন শ্রমিকদের পালা বদল চলছিল৷ কর্তৃপক্ষের ধারণা, বৈদ্যুতিক গোলোযোগই এ বিস্ফোরণের কারণ৷ আর অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের বিষক্রিয়ায়৷
ছবি: picture alliance/AA
জীবনের দূরত্ব ২ কিলোমিটার
ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে এবং খনির প্রবেশ পথ থেকে চার কিলোমিটার দূরে এখনো বহু শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেখানে নামা সম্ভব হচ্ছে না৷ উদ্ধার কর্মীরা যাদের জীবিত তুলে আনতে পেরেছেন, তাদের অধিকাংশই আহত৷
ছবি: picture alliance/abakapress
উৎকণ্ঠা, অশ্রু
আশেপাশের কয়কটি খনির শ্রমিকরাও সোমার এই কয়লাখনিতে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন৷ আর খনির বাইরে কেবলই উৎকণ্ঠা৷ কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেই তাকে স্ট্রেচারে করে তোলা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে৷ চারপাশে ভীড় করে থাকা স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পরছেন থেকে থেকে৷
ছবি: AP
ভয়াবহতম?
তুরস্কের ইতিহাসে ভয়াবহতম খনি দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৯২ সালে৷ কৃষ্ণ সাগরের কাছে সঙ্গুলডাক-এ ওই খনিতে বিস্ফোরণ ঘটলে নিহত হন অন্তত ২৭০ জন৷ খনিতে কাজের পরিবেশের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার দাবিতে তুরস্কের শ্রমিকরা গত বছর বিক্ষোভেও অংশ নেন৷ স্থানীয়দের আশঙ্কা, সোমায় নিহতের সংখ্যা সঙ্গুলডাক-কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance/AA
তিন দিনের শোক
তুরস্কের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এ খনি দুর্ঘটনার পর তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এই তিন দিন জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত৷ প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ইতোমধ্যে আলবেনিয়া সফর বাতিল করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷