‘‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা’’-র উদ্দেশ্যের কথা বলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াতে চলেছে তুরস্ক৷ বুধবার সে দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা এমজিকে চলমান জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানায়৷
বিজ্ঞাপন
রাজধানী আংকারায় প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো দীর্ঘ করার প্রস্তাবটি রাখে এমজিকে৷ সভা শেষে দেয়া এক বিবৃতিতে এমজিকে-র প্রধান বলেন, ‘‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো উচিত৷’’
গত ১৫ই জুলাই কথিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়৷ এর্দোয়ান সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কার্যত নিশ্চিহ্ন করার জন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে৷ প্রশ্নবিদ্ধ এবং ব্যর্থ ওই অভ্যুত্থান প্রয়াসের পর থেকে সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করা হয়৷ ধরপাকড় এখনো চলছে৷
বুধবার এনটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তুরস্কের আইনমন্ত্রী জানান, গত দু’মাসে মোট ৭০ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান প্রয়াসে জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত শুরু করা হয়েছে৷ তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ৩২ হাজারই এখন কারাবন্দি৷ তুর্কি এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী কারাবন্দির সংখ্যা অনেক বেশি৷
এদিকে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সারা দেশে ইতিমধ্যে ১৭৪টি নতুন কারাগার তৈরির কাজ শুরু করেছে এর্দোয়ান সরকার৷ পাঁচ বছরের মধ্যে এ নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহ দেখে, আহতদের আর্তনাদ শুনে সেদিন অসহায় বোধ করেছেন অনেকে৷ মৃতদেহ ডিঙ্গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কেউ কেউ৷ পুলিশ তখনো এগিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মানুষদের তখন পুলিশের প্রতি হামলার শিকারদের সহায়তার এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/T. Berkin
শান্তির বাণীতে ঢাকা মৃতদেহ
শান্তি সমাবেশে এসে মৃত্যু বরণ করা মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহগুলো ঢাকার মতো কাফনের কাপড় তখন ছিল না৷ তাই ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েই ঢেকে দেয়া হয় তাঁদের দেহ৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
স্বজন এবং সমমনাদের কান্না
বোমা হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে শত শত মানুষ৷ কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে চিরবিদায় নেয়া স্বজন এবং সমমনাদের জন্য তখন অবশ্য কেঁদে ভাসানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/AA
তদন্তের তৎপরতা
একটু দেরিতে হলেও শনিবারই ঘটনার তদন্তে সক্রিয় হতে দেখা যায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে৷ ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা সেদিনই ঘটনাস্থলে ব্যস্ত সময় কাটান৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ৷ বোমা হামলার পর বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ পুলিশের এই গাড়িটিও জনবিক্ষোভের শিকার৷
ছবি: picture-alliance/AA
বিক্ষোভ চলছে
আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ হামলার জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে দায়ী করেছে তুরস্কের সরকার৷ তবে হামলার পর তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ আংকারা এবং ইস্তানবুলসহ কিছু শহরে বোমা হামলার বিক্ষোভ জানানোর সময় এর্দোয়ান-বিরোধী স্লোগানেও ফেটে পড়েছেন বিক্ষু্ব্ধরা৷
শনিবারের হামলাটি হয়েছে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে৷ নিহত এবং আহতরা মূলত কুর্দি এবং বামপন্থি দলের নেতা-কর্মী৷ তাই সারা বিশ্বের সব কুর্দির মাঝেই দানা বেঁধেছে ক্ষোভ৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুর্দি ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Saget
11 ছবি1 | 11
বিরোধীদের প্রতিবাদ
জরুরি অবস্থার মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনায় ইতিমধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রিপাবলিকান পিপল’স পার্টি (সিএইচপি)-র নেতা কেমাল কিলিচদারোগ্লু৷ তুরস্কের এক টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘আমি অবশ্যই হয়রানিমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো৷’’