ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক ধরপাকড়৷ এর মধ্যেই তিন মাসের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷
বিজ্ঞাপন
জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা হলেও স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হবে না বলে জানিয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী মেহমেদ সিমসেক৷ বরং এটি গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে৷ টুইটারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি৷ জরুরি অবস্থা চলাকালীন কোন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না বলেও জানান তিনি৷ অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জানিয়েছেন, তুরস্কের সংবিধান মেনেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷
অস্ট্রিয়ায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে সমন
এদিকে, তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টার পর অস্ট্রিয়ার রাস্তায় এর্দোয়ান সমর্থকরা কেন সমাবেশ করছে- এর কারণ ব্যাখ্যা করতে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছিল অস্ট্রিয়া কর্তৃপক্ষ৷ তুরস্ক থেকেই ভিয়েনায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠানের ডাক দেয়া হয়েছে বলে তথ্য আছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার পরররাষ্ট্র মন্ত্রী সেবাস্টিয়ান কুর্জ৷
১৫ জুলাই রাতে তুর্কি সামরিক বাহিনীর একটি অংশ ক্ষমতা থেকে এর্দোয়ানকে উৎখাতের চেষ্টায় বিদ্রোহ করে৷ কিন্তু সামরিক বাহিনীর সব অংশ একইভাবে সাড়া না দেওয়া এবং পাশাপাশি এর্দোয়ান ও তার সহকর্মীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কারণে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়৷
রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবার রাজধানী আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ঘোষণায় এর্দোয়ান জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা জানান৷
জরুরি অবস্থা ঘোষণার আগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি৷ ঘোষণায় এর্দোয়ান বলেন, ‘‘জরুরি অবস্থা ঘোষণার লক্ষ্য হলো, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে হুমকি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ তৈরি করা৷''
তিন মাসের এই জরুরি অবস্থাকালে ‘সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে থাকা সকল ভাইরাস পরিষ্কার করার' প্রত্যয় জানান তিনি৷ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর গ্রেপ্তার হাজার হাজার ব্যক্তির আটকাদেশ দীর্ঘায়িত করতেও জরুরি অবস্থার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন এর্দোয়ান৷
এর্দোয়ানের দাবি, ‘‘এই পদক্ষেপ কোনোভাবেই গণতন্ত্র, আইন ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়৷'' অভ্যুত্থান চেষ্টার প্রতিক্রিয়ায় এরই মধ্যে ৬০০টি স্কুল বন্ধ ও হাজার হাজার রাষ্ট্রীয় কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷ গত শুক্রবার থেকে তুরস্কে এ পর্যন্ত ২৯৫ মানুষ নিহত হয়েছে৷
তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পাঁচটি কারণ
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন এর্দোয়ান৷ তাঁর সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এসেছিল বলেই অভ্যুত্থান হতে পারেনি৷ তবে জনসমর্থনই তো সবসময় অভ্যুত্থান ঠেকাতে পারে না৷ তাহলে কেন ব্যর্থ হলো অভ্যুত্থানের চেষ্টা?
ছবি: Getty Images/G.Tan
এর্দোয়ানকে আটকাতে না পারা
অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই ছিল রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করা৷ এ লক্ষ্য পূরণের জন্য এর্দোয়ানকে অবরুদ্ধ করাই ছিল প্রথম কাজ৷ সে কাজে ব্যর্থ হয়েছে অভ্যুত্থান প্রয়াসের সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যরা৷ তাঁকে ধরার চেষ্টা করেছিল বিমান বাহিনীর একটি অংশ৷ কিন্তু এর্দোয়ান সে চেষ্টা ব্যর্থ করে অভ্যুত্থানকেও ব্যর্থ করে দেন৷
ছবি: Reuters/H.Aldemir
প্রেসিডেন্ট ভবনে তীব্র প্রতিরোধ
আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনের ওপরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল সেনাবাহিনী৷ কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সেনাসদস্যরা প্রেসিডেন্ট ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কিছুটা খাটো করেই দেখেছিলেন৷ সে কারণে এক রকমের সমন্বয়হীনতা দেখা যায় প্রেসিডেন্ট ভবন আক্রমণে৷ ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ শেষ পর্যন্ত সেখানেও ব্যর্থ হয় সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/E. Ortac
পুলিশকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা
পুলিশের ওপরও শুরুতে সেনা সদস্যদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না৷ পুলিশ বুঝে উঠতে পারছিল না অভ্যুত্থানের প্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, নাকি সমর্থন দেবে৷ তাই শুরুতে প্রায় নিষ্ক্রিয়ই ছিল তারা৷ কিন্তু এর্দোয়ান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর পুলিশও রুখে দাঁড়ায়৷
ছবি: Reuters/M.Sezer
ধর্মীয় নেতাদের আস্থা অর্জন করতে না পারা
ধর্মীয় নেতাদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টা করেনি সেনাবাহিনী৷ ফলে এর্দোয়ান স্মার্ট ফোনে ভাষণ দেয়ার পর মসজিদগুলো থেকেও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়৷ ফলে পরিস্থিতি দ্রুত চলে আসে এর্দোয়ানের অনুকূলে৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এফকান আলাকে গ্রেপ্তার করতে না পারা এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর দখল নিতে কালক্ষেপণ করার বিষয়টিও অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করায় ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Reuters/Prime Ministry Pool
সমাজের ‘উঁচুমহলের’ সমর্থন না পাওয়া
অভ্যুত্থানের চেষ্টার সঙ্গে জড়িতরা জনমত একেবারেই বুঝতে পারেনি৷ তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের প্রয়াস নতুন কিছু নয়৷ তবে বর্তমানে তুর্কি সমাজ একেবারেই সামরিক অভ্যুত্থানকে স্বাগত জানানোর অবস্থায় নেই৷ তাছাড়া ব্যবসায়ী সমাজ এবং অভিজাত শ্রেণির সমর্থন আদায়েও ব্যর্থ হয়েছে সেনাবাহিনী৷