তুরস্কের জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম টিআরটি দুইশ'টিরও বেশি গান নিষিদ্ধ করেছে৷ গানগুলোতে মাদকগ্রহণ এবং সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনেছে তারা৷ গানের শিল্পীরা অবশ্য সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
২০১০ সালে কুর্দি সংগীতশিল্পী রোজদাকে এক বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয় গান গাওয়ার অপরাধে৷ অভিযোগে বলা হয়েছিল, কুর্দি শহর দিয়ারবাকিরের সংস্কৃতি উৎসবে তাঁর গাওয়া গানগুলো ছিল ‘সন্ত্রাসের পক্ষে প্রচারণা'৷ ৮ বছর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই গায়িকা জানলেন, একই অভিযোগে তাঁর তিনটি গানের উপর আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ অথচ রোজদা জানালেন, তিনটি গানের বিষয়ই শান্তির পক্ষে প্রচারণা৷
২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত তুর্কি রেডিও ও টেলিভিশন কর্পোরেশন টিআরটি মোট ২০৮টি গান নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে ৬৬টি কুর্দি ভাষায়৷ তবে বিরোধী দল সিএইচপি'র এক প্রতিনিধি এই ঘটনার তদন্ত দাবি করার পর জনগণ এ সম্পর্কে জানতে পারে৷ রোজদা যখন তালিকাটি দেখলেন, তখন তিনি কিন্তু বিস্মিত হননি৷ ডয়চে ভেলেকে এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, এমন ঘটনা তাঁর সাথে এই প্রথম নয়৷
নিষিদ্ধ হওয়া তাঁর গানগুলো ২০০৭ সালে প্রকাশ পেয়েছিল এবং সেই সময় টিআরটি রেডিও ও টেলিভিশনে কয়েক বছর প্রচার করেছিল তাঁর গাওয়া ঐ গানগুলো৷ টিআরটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘এসব গানে মদ্যপান, ধূমপান এবং সন্ত্রাসের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়েছে, যা দেশের শিশু-কিশোরদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে৷'' নিষিদ্ধ গানগুলোর মধ্যে বিখ্যাত বেশ কয়েকটি পপ সংগীতও রয়েছে৷ পপ সংগীত শিল্পীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
অবশ্য তুরস্কে সংগীতের উপর নিষেধাজ্ঞা নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের দল ক্ষমতা নেয়ার আগে থেকে এই ঘটনা চলে আসছে৷ ওরহ্যান গিনসবে'র ‘মে দিস ওয়ার্ল্ড এন্ড' নিষিদ্ধ করা হয়েছিল আশির দশকে৷
তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়৷ এর্দোয়ানের দল একেপি ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্টে একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, প্রতিটি গান এবং গানের সঙ্গে যেসব দৃশ্য রেকর্ড করা হয়, সেগুলো প্রচারের আগে তুরস্কের সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে৷ নতুন এই আইনে অনলাইনেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷
বুরসু কারাকাস/এপিবি
সংগীত সুস্থ হতে সাহায্য করে
সংগীত মানুষকে আনন্দ দেয় – সেকথা কম-বেশি সকলেই জানি৷ তবে একটি গবেষণায় দেখা গেছে একসাথে সংগীতচর্চা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগীকে সুস্থ করতেও ভূমিকা রাখে৷ আরো পাবেন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: Hochschule für Musik Karlsruhe
সংগীতের আসর
গান শোনার সময় ‘মোটিভেশন হরমোন’ ডোপামিন এবং ‘সুখ হরমোন’ এন্ড্রোফিন’ মস্তিষ্কে একত্রিত হয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো সংগীতদল যখন কোরাসে গান গায়, তখন সেই গান উপভোগ করার সময় এক ধরণের বিশেষ অনুভূতি হয়৷ এই অনুভূতি মানুষকে নিরাপত্তা দেয় এবং মনোযোগও বাড়ায়৷ ফলে ‘ইমিউন সিস্টেম’ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে৷
ছবি: B. Maas
‘ইমিউনথেরাপি’ হিসেবে গান গাওয়া
বেশ কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, কোনো সংগীতদলে গান গাওয়ার পর রোগী অনেক ভালো বোধ করেন৷ শুধু তাই নয়, সংগীত শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে উজ্জীবিত করে ‘স্ট্রেস’ কমায় এবং তার পাশাপাশি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ‘ইমিউন সিস্টেম’-কেও বাড়িয়ে দেয়৷
ছবি: DW/A. Slanjankic
গান গেয়ে ভালো থাকা
যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষক দল বয়স্ক মানুষদের, যাঁরা গায়কদলে গান করেন এবং যাঁরা গান করেন না – তাঁদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান৷ সমীক্ষা চলাকালীন সখের গায়কদের কম ঔষুধের প্রয়োজন হয় এবং ডাক্তারের কাছেও কম যেতে হয়৷ অথচ যাঁরা গায়কদলের সাথে জড়িত ছিলেন না, তাঁদের অনেক বেশিবার চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে৷
ছবি: picture alliance / dpa
পিয়ানো
‘‘স্ট্রোক হবার পর অনেকেরই আঙুলের খানিকটা অংশ অবশ হয়ে যায়৷ কিন্তু তাঁরা যদি পিয়ানো বাজান, তাহলে আস্তে আস্তে একটি একটি করে আঙুলে শক্তি ফরে আসতে পারে৷ অবশ্য এর জন্য আগে থেকেই পিয়ানো বাজানো জানতে বা শিখতে হবে না৷’’ এ কথা বলেন, জার্মানির হ্যানোভার শহরের মেডিকেল কলেজের সংগীত মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ডা. একার্ট আল্টেনম্যুলার৷
ছবি: picture-alliance/ dpa/dpaweb
ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায়
পিয়ানো বাজানোর সময় প্রতিবারই হাতের আঙুলে তার প্রতিফলন ঘটে৷ বাজানোর সময় আঙুলের নড়াচড়া এবং শব্দধ্বনি রোগীর অনুভূতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে৷ এর কারণে রোগীর ‘মোটিভেশন’ বা ইচ্ছাশক্তি বেড়ে যায় এবং স্ট্রোকে ভীত হয়ে যাওয়ার ভাব কেটে যেয়ে৷ শুধু তাই নয়, সংগীত বা গানের মধ্যে বেঁচে থাকার আনন্দও খুঁজে পান রোগীরা৷
ছবি: Nurunnahar Sattar
হাঁপানি রোগ
সংগীত ‘ক্রনিক’ ব্যথা, ভয়, অশান্তি – এ সব কমিয়ে মন ভালো করে দেয়৷ যাঁরা বুড়ো বয়সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, তাঁরা সমাজ থেকে কিছুটা দূরে সড়ে যান৷ অথচ সংগীতের মাধ্যমে ‘ডিমেনশিয়া’-র রোগীদের কাছে যাওয়া যায়, করা যায় বন্ধুত্ব৷ এছাড়া স্যাক্সোফোন বা বাঁশি বাজানোর মধ্য দিয়ে শ্বাসনালীর পেশি শক্ত হয় ও ফুসফুসের কাজ বেড়ে যাওয়ায় ‘অ্যাজমা’ রোগীরাও উপকৃত হতে পারেন৷