নির্বাচনের আগে মেয়েদের হেডস্কার্ফ পরার সাংবিধানিক অধিকার দিতে চায় তুরস্কের ক্ষমতাসীন সরকার৷ এজন্য আগামী সপ্তাহে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পার্লামেন্টে পেশ করতে যাচ্ছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে হেডস্কার্ফ প্রশ্নে সংবিধান সংশোধন করতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের দল একেপি পার্টি৷ প্রায় একশো বছর আগে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক হেডস্কার্ফ বিতর্ক সমাধানের চেষ্টা করেন৷ তবে এ নিয়ে তুরস্কের রাজনীতিতে বরাবরই মেরুকরণ ঘটেছে৷
প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ বছর ক্ষমতায় থাকা এর্দোয়ানকে দেশটির রক্ষণশীলরা তাদের নেতা বলে মনে করেন৷ কিন্তু এবার আর এর্দোয়ান নন আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ সিএইচপি পার্টি সংবিধান সংশোধনের এই দাবি সামনে নিয়ে আসে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকদের নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা৷
সিএইচপি পার্টির নেতা কেমাল কেলেটশদারোহল মনে করেন অতীতে হেডস্কার্ফের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তারা ভুল করেছেন৷ এজন্য তিনি ও তার দল এখন স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের মাথা ঢেকে রাখার সাংবিধানিক অধিকার দেয়ার পক্ষে৷
তবে এই দাবির প্রেক্ষিতে এর্দোয়ান শুরুতে বলেছিলেন, ‘‘স্কুলে বা জনপরিসরে মাথা ঢাকা বা না ঢেকে রাখা নারীদের মধ্যে কি কোনো বৈষম্য করা হয়? না৷'' এর্দোয়ান দাবি করেন, ‘‘এটা আমরাই অর্জন করেছি৷''
উল্লেখ্য, ১৯২৩ সালে আধুনিক তুরস্ক রিপাবলিকের যাত্রা শুরুর পর ধীরে ধীরে স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে মাথা ঢেকে রাখা পোশাকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷
২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও চাকরিক্ষেত্রে এই বিধান তুলে দেয় একেপি৷ সেসময় তুরস্কের নারীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানবলে উল্লেখ করেন দেশটির নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা ইতিহাসবিদ বেরিন সনমেৎজ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র হেডস্কার্ফের উপর নিষেধাজ্ঞা অথবা পরতে বাধ্য করলে সেটি নারী অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে৷''
সবশেষ ২০১২ সালের এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান তুরস্কের ৬৫ শতাংশ নারীই হেডস্কার্ফ পরে৷
এফএস/জেডএইচ (এএফপি)
এর্দোয়ানকে হটাতে চান যারা
চলতি বছর জুনের মধ্যে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা৷ ঐ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান ও তার একেপি পার্টিকে হারাতে একটি বিরোধী জোট তৈরি হচ্ছে৷
ছবি: Alp Eren Kaya/Republican People's Party (CHP) /Handout/REUTERS
কেমাল কিলিচদারোলু
৭২ বছর বয়সি সাবেক আমলা কিলিচদারোলু তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি সিএইচপির প্রধান৷ এর্দোয়ান নিয়মিত যাদের সমালোচনা করতে পছন্দ করেন তাদের একজন কিলিচদারোলু৷ জাতীয় নির্বাচনে তার দলের ২২ থেকে ২৬ শতাংশ সমর্থন আছে বলে মনে করা হয়৷ ২০১৭ সালে তার দলের এক সাংসদকে জেল দেয়ার প্রতিবাদে আঙ্কারা থেকে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত মিছিল করে আলোচিত হন তিনি৷
ছবি: CHP
মেরাল আকসেনার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আকসেনার তার দল এমএইচপি পার্টির (এর্দোয়ানের দলের জোটসঙ্গী) শীর্ষ নেতা দেভলেত বাচেলিকে হটানোর পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়ে ২০১৬ সালে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন৷ এরপর তিনি আইওয়াইআই (ভালো) পার্টি গঠন করে ২০১৮ নির্বাচনে সিএইচপির সঙ্গে জোট করেন৷ বর্তমানে ৬০০ আসনের মধ্যে ৩৬ জন সাংসদ তার দলের৷ তিনি তুরস্ককে আবারও সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিতে চান৷ ২০১৮ সালে এর্দোয়ান প্রেসিডেন্ট শাসন চালু করেন৷
ছবি: ANKA
একরেম ইমামোলু
২০১৯ সালে তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম সেই ফল বাতিল করে দেয়া হয়৷ পরে আবারও নির্বাচন হলে ইমামোলু তাতেও জিতে যান৷ ৫১ বছর বয়সি ইমামোলু সিএইচপি দলের সদস্য৷ তার দল ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত হলেও মেয়র নির্বাচনের সময় তিনি কিছু রক্ষণশীল ভোটারদের টানতে সমর্থ হয়েছিলেন৷ ইস্তাম্বুলের বিভিন্ন ইস্যুতে মাঝেমধ্যে এর্দোয়ানের সঙ্গে তার মতপার্থক্য হয়৷ আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেন৷
ছবি: İBB
মানসুর ইয়াভাশ
৬৬ বছর বয়সি আইনজীবী ইয়াভাশ এক সময় এমএইচপি পার্টি করতেন৷ পরে তিনি কিলিচদারোলুর সিএইচপি পার্টিতে যোগ দেন৷ ২০১৯ সালে তিনি এর্দোয়ানের একেপি পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে রাজধানী আঙ্কারার মেয়র নির্বাচিত হন৷ মেয়র হিসেবে তিনি করোনা মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছেন৷ তাই জনমত জরিপে তাকে জাতীয় পর্যায়ে এর্দোয়ানের চ্যালেঞ্জার হিসেবে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Hilal Köylü/DW
আলি বাবাজান
একসময় এর্দোয়ানের ঘনিষ্ট ছিলেন ৫৪ বছর বয়সি বাবাজান৷ তিনি সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রীও৷ ২০১৯ সালে একেপি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন৷ এরপর ডেভা পার্টি গঠন করেন৷ আইনের শাসন ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে তিনি সংস্কারের ডাক দিয়েছেন৷ তিনি অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন৷ দায়িত্ব পালনের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ভালো সখ্যতা ছিল তার৷
ছবি: Hilal Köylü/DW
আহমেট দাভুটোলু
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এর্দোয়ানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি৷ তবে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে তিনি পরিচিতি পান৷ তার পররাষ্ট্রনীতি ছিল ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে শূন্য সমস্যা’৷ তবে আরব বসন্তের সময় তার মধ্যপ্রাচ্য কৌশল পথ হারিয়ে ফেলে৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থারও ঘোর সমালোচক তিনি৷ ২০১৯ সালে একেপি থেকে পদত্যাগ করে তিনি গেলেচেক পার্টি গড়ে তোলেন৷