জার্মানির মসজিদগুলিতে তুরস্কের প্রশিক্ষিত ইমামদের নেয়া হতো। কিন্তু এবার তা বন্ধ করা হচ্ছে। জার্মানদেরই ইমাম হিসাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে। এতে দেশের সঙ্গে তাদের সংহতি থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা করেছে।
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তুরস্কের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ দিয়ানেট ও ডিটিটিবি-র চুক্তি হয়েছে। প্রতি বছর একশজন জার্মানকে ইমামের প্রশিক্ষণ দেবে তারা। পশ্চিমের শহর ডালেমে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
জার্মানিতে এখন তুরস্কের এক হাজার জন ইমাম আছেন। তাদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নতুন প্রশিক্ষিতদের নিয়োগ করা হবে। আর যাদের সরানো হবে, তাদের দিয়ানেট অন্যত্র নিয়োগ দেবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, ''আমরা এমন ধর্মীয় নেতা চাই, যারা আমাদের দেশকে জানে, আমাদের ভাষায় কথা বলে এবং আমাদের মূল্যবোধেকে সমর্থন করে। আমরা চাই ইমামরা বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করুন এবং আমাদের সমাজে বিশ্বাস তৈরি করুন।''
জার্মানির মসজিদ সম্পর্কে ছয়টি অজানা তথ্য
জার্মানিতে মসজিদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না৷ তবে সংখ্যাটি ২,৩৫০ থেকে ২,৭৫০ এর মধ্যে৷ জার্মান ইসলাম কনফারেন্সের গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালে জার্মানির ৫৫ লাখ মুসলিমের ২৪ শতাংশ সপ্তাহে অন্তত একদিন মসজিদে গেছেন৷
ছবি: Schoening/imageBROKER/picture alliance
প্রথম মসজিদে জিহাদিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল জার্মান সাম্রাজ্য
ইস্তাম্বুলের মুফতির অনুরোধে ১৯১৫ সালে ব্রান্ডেনবুর্গে ভ্যুনশডর্ফ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল৷ একে জার্মানি ও মধ্য ইউরোপের প্রথম ইসলামিক ভবন মনে করা হয়৷ মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল৷ মুসলিমদের ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুসলিম বন্দিদের অনুভূতি উসকে দিয়েছিল সেই সময়কার জার্মান সাম্রাজ্য৷ পরে তাদের শপথ পড়িয়ে ‘পবিত্র যুদ্ধে’ পাঠানো হয়েছিল৷ ১৯৩০ সালে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়৷
ছবি: akg-images/picture alliance
তাজমহলের মতো
জার্মানির প্রথম মসজিদটি ভেঙে ফেলার কারণ ১৯২৮ সালে বার্লিনের ভিলম্যার্সডর্ফে নির্মিত হওয়া এই মসজিদটি (ছবি)৷ পাকিস্তানের লাহোরের আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের জন্য মসজিদটির নকশা করেছিলেন জার্মান স্থপতি কার্ল আউগুস্ট হেয়ারমান৷ এটি এখনও টিকে আছে৷ সে হিসেবে এটি জার্মানিতে টিকে থাকা মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো৷
ছবি: Schoening/imageBROKER/picture alliance
নারী ধর্মপ্রচারক
২০১৭ সালে বার্লিনে ইবনে রুশদ-গ্যোয়েটে মসজিদ নির্মিত হয়৷ সেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন৷ নারীরা সেখানে খুতবাও দিতে পারেন৷ ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণকারী তুর্কি-কুর্দি বংশোদ্ভূত জার্মান আইনজীবী, লেখক ও নারী অধিকারকর্মী সেইরান আটেশ এই মসজিদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ এমন মসজিদ নির্মাণের কারণে তিনি কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন৷ তাই এখন সবসময় তাকে পুলিশি নিরাপত্তায় থাকতে হয়৷
ছবি: Christophe Gateau/dpa/picture alliance
বিতর্কিত মসজিদ সংস্থা
জার্মানির মসজিদ পরিচালনায় থাকে বিভিন্ন মসজিদ সংস্থা৷ এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও সবচেয়ে বড় সংস্থা হচ্ছে ডিটিব৷ এটি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট একটি সংস্থা৷ এর ইমামরা মূলত তুরস্কে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন৷ সমালোচকরা অনেকদিন ধরেই ডিটিবের আওতাধীন মসজিদগুলোর সমাবেশে তুরস্কের প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছেন৷ ছবিতে ডিটিব পরিচালিত জার্মানির অন্যতম বড় কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mesut Zeyrek/AA/picture alliance
বেশিরভাগ মসজিদ চেনাই যায় না
জার্মানির বেশিরভাগ মসজিদই বাইরে থেকে চেনা যায় না বা বোঝা যায় না৷ কারণ সেগুলো কোনো ভবনের পেছনে অবস্থিত৷ একটি সরু গলি দিয়ে সেখানে ঢুকতে হয়৷ আর বেশিরভাগ মসজিদেই মিনার থাকে না৷
ছবি: IWFZ e.V
বেশিরভাগ মসজিদে আজান দেয়া হয় না
জার্মানির কমবেশি প্রায় আড়াই হাজার মসজিদের মধ্যে মাত্র ৩০টিতে মসজিদ থেকে নিয়মিত আজান দেয়া হয়৷ বাকিগুলোতে আজান দেয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ আজানবিরোধীদের যুক্তি, এতে শব্দদূষণ হয় এবং এর মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশ করা হয়৷ তাদের যুক্তি, আজানের একটা ধর্মতাত্ত্বিক অর্থ আছে, যেটা গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মধ্যে নেই৷
ছবি: Imago/J. Jeske
6 ছবি1 | 6
জার্মানির ইমাম কনফারেন্স জানিয়েছে, জার্মানিতে ৫৫ লাখ মুসলিম বাস করেন। তারা মোট জনসংখ্যার ছয় দশমিক ছয় শতাংশ। তাদের মতে, নতুন সিদ্ধান্ত জার্মানির মুসলিমদের মিলন ও যোগদানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।
জার্মানিতে আড়াই হাজার মসজিদ আছে। তার মধ্যে নয়শ মসজিদ ডিটিটিবি নিয়ন্ত্রণ করে। ডিটিটিবি হলো তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অফ রিলিজিয়াস অ্য়াফেয়ার্সের একটি শাখা। তারাই জার্মানিতে সবচেয়ে বড় ইসলামিক সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে অভিয়োগ, তারা তুরস্ক সরকারের কথাতে ওঠাবসা করে।
সাম্প্রতিক বিতর্ক
ডিটিটিবি-কে নিয়ে সম্প্রতি একটা বিতর্কও দেখা দিয়েছে। কোলনের একটি মসজিদে একজন আফগান তালেবান সদস্য গতমাসে ভাষণ দিয়েছিলেন। সেটা নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়।
২০১৭ সালে জার্মান কর্মকর্তারা ডিটিটিবি-কে মৌলিক সংস্কার করতে বলেন। তখন অভিযোগ উঠেছিল, তারা যে ইমামদের নিয়োগ করে, তারা তুরস্কের হয়ে চরবৃত্তি করেন। তুরস্কে এর্দোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এই অভিযোগ ওঠে। দিয়ানেট অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকের করেছে। এর্দোয়ান সরকারও জানিয়েছে, তারা এই নিয়ে তদন্ত কমিটি করেছিল। কিন্তু সেই কমিটি জানিয়েছে, এরকম কোনো তথ্যই নেই।
সাবেক চ্যান্সেলর ম্য়ার্কেল ২০১৮ সালে প্রথমে জার্মানিতে জার্মান ইমামদের প্রশিক্ষণের কথা বলেন। তার যুক্তি ছিল, এই পদক্ষেপ জার্মানিকে এই বিষয়ে আরো স্বাধীন করবে। আর এটা জার্মানির ভবিষ্যতের জন্য জরুরি।