তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদোলু বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, দেশটির ভান প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ২৮৫ জন অভিবাসীকে আটক করেছে৷ এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের নাগরিক বলে জানিয়েছে সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
ইরান সীমান্তে অবস্থিত ভান প্রদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা চৌকিতে তাঁদের আটক করা হয়৷ এদের মধ্যে ৪৮ জন শিশু ও ৫১ জন নারী রয়েছেন বলে জানিয়েছে আনাদোলু৷
এদিকে, ভান প্রদেশে বৃহস্পতিবার এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছেন৷ গাড়ির যাত্রীরা অভিবাসী ছিলেন৷ নিহতরা আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন, বলে মনে করছেন ভান প্রদেশের গভর্নর মেহমেত এমিন বিনমেজ৷
ঐ ঘটনায় ২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন৷
সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপে অভিবাসী হতে ইচ্ছুকদের তুরস্ক হয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা বেড়েছে৷ তুরস্ক থেকে নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে তারা গ্রিসের বিভিন্ন দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তবে ছোট নৌকা ব্যবহার করায় নৌকা ডুবে অনেক অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে৷
জেডএইচ/কেএম (এপি)
তুরস্কে কেমন আছে উইগুর মুসলিমরা
বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত এক জাতি চীনের উইগুর মুসলিমরা৷ এই সম্প্রদায়ের অনেকেই বসবাস করছেন তুরস্কে৷ সেখানেও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/Murad Sezer
উইগুরদের পরিচয়
উইগুররা মূলত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত একটি মুসলিম সম্প্রদায়৷ চীনের স্বিকৃত ৫৫টি সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি তাঁরা৷ চীন ছাড়াও কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক ও সৌদি আরবেও এই জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/H. H. Young
চীনা নিপীড়ন
চীনে উইগুরদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাধা-নিষেধ আরোপ রয়েছে৷ উইগুরসহ দেশটির ১০ লাখের বেশি মুসলমানদের আলাদা নজরদারিতে রেখেছে সরকার৷ জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এ পরিস্থিতিকে বন্দীদশার সাথে তুলনা করেছে৷ তবে ইসলামি জঙ্গীবাদ ঠেকাতে এমন উদ্যোগ বলে দাবি চীনের৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
উইগুরদের তুর্কি যোগাযোগ
তুর্কি ভাষাভাষি উইগুরদের তুরস্কের সংস্কৃতির সাথে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে৷ চীনের জিনজিয়াংয়ে তাঁদের করুণ পরিস্থিতি নিয়ে একমাত্র এই দেশটিই নিয়মিত উদ্বেগ প্রকাশ করে৷ ১৯৬০-এর দশক থেকে উইগুরদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ও তুরস্ক৷ ‘ইস্ট তুর্কেস্থান ন্যাশনাল সেন্টার’ নামের একটি সংস্থার হিসাবে দেশটিতে বর্তমানে ৩৫,০০০ উইগুর বসবাস করছে৷
ছবি: Reuters/Murad Sezer
তুরস্কেও বিপাকে উইগুররা
তিন-চার বছর আগ পর্যন্ত তুরস্কে বসবাসে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি উইগুরদের৷ কিন্তু বেইজিংয়ের সাথে আংকারার সুসম্পর্কের জের ধরে সেই ধারার পরিবর্তন হয়েছে৷ নির্বাসিত উইগুরদের সংগঠন ‘অ্যাসেম্বলি অফ ইস্ট তুর্কেস্তান’-র প্রধান সাইদ তুমতুর্ক জানান, তাদের কিছু সদস্য সিরিয়ার বাসার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদি লড়াইয়ে অংশ নেয়ায় চীন তুরস্কের উপর চাপ দিয়েছে৷ এতে উইগুরদের বিরুদ্ধে তুরস্কের মনোভাবও পাল্টে গেছে৷
ছবি: Reuters/Murad Sezer
পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা
২০১৫ সালে স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে বাধ্য হয়ে তুরস্কে পাড়ি জমান নূরমুহাম্মদ৷ পরিবারের অন্যরা পেলেও বসবাস আর কাজ করার অনুমতি পাননি তিনি৷ এমন অবস্থায় তুরস্ক সরকার তাঁকে বের করে দেয়ার শঙ্কায় রয়েছে নূরমুহাম্মদ৷ জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
চীনে বন্দী সন্তান
২০১৬ সালে দাদা-দাদির সাথে দেখা করতে চীনের জিনজিয়াংয়ে যান নূরমুহাম্মদের সন্তান পাকজাত৷ পৌছানোর পর বিমানবন্দর থেকেই চীন সরকার তাকে বন্দী করে বলে খবর পেয়েছেন তাঁরা৷ ‘‘আমার সন্তানকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন সে ১৬ বছরের এক শিশু৷ তার ছোট ভাই-বোনরা অনবরত প্রশ্ন করে, বড় ভাইয়ের সাথে তারা কবে একসাথ হবে?’’ রয়টার্সকে জানান পাকজাতের মা গুলজিন মাহমুত৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
পাসপোর্ট জটিলতা
তুরস্কে চীনা দূতাবাস সেখানে বসবাসরতদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে তা আর নবায়ন করছে না৷ একটি কাগজ দেয়া হয়, যার মাধ্যমে তাঁরা চীনে ফেরার সুযোগ পান৷ অন্যদিকে ২০১৭ সালে এক উজবেক নাগরিক ইস্তানবুলে নাইট ক্লাবে হামলা চালিয়ে ৩৯ জনকে হত্যার পর তুরস্ক সরকারও কিছুটা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে৷ সেখানে কাজের অনুমতি না পাওয়ায় দেশটিতে বসবাসরত উইগুররা তাঁদের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
আশার আলো
চীনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রায়ই তুরস্কে প্রতিবাদে অংশ নেন উইগুর জনগোষ্ঠী৷ তাঁদের অধিকার আদায়ে তুরস্কই এখনও একমাত্র ভরসা৷ গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু উইগুরদের বিরুদ্ধে চীনের দুর্ব্যবহারের সমালোচনা করেন ও ধর্মপালনের স্বাধিনতা দেয়ার আহ্বান জানান, যা উইগুরদের নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে৷