1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজতুরস্ক

তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বন্ধের তীব্র প্রভাব

২৬ মে ২০২৫

ভয়েস অফ অ্যামেরিকা বন্ধ হওয়ার পর সবচেয়ে সংকটে পড়েছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস পাচ্ছে- এমন দেশগুলো। ব্যবহারকারীরা বলছেন, তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কের ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ পেতে ভয়েস অব অ্যামেরিকাই ছিল একমাত্র মাধ্যম।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র কার্যালয়ের কাঁচের দেওয়ালে ভয়েস অফ অ্যামেরিকার লোগো৷
এক ভিওএ কর্মীর মতে, ‘‘ওয়াশিংটনে আমাদের সহকর্মীদের কর্মঘণ্টার মধ্যে তাদের অফিস খালি করতে বলা হয়েছিল। তাদের ব্যাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তারা দিন শেষ হওয়ার অপেক্ষাও করেনি। সংবাদ কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা যে প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কাজ করছিলাম, তাও আমরা সম্পূর্ণ করতে পারিনি।’’ছবি: Bonnie Cash/AFP/Getty Images

১৪ মার্চ ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন সরকার-অর্থায়িত আন্তর্জাতিক সংবাদ পরিষেবা ভয়েস অব অ্যামেরিকা বা ভিওএ-র তহবিল বন্ধ করার ফলে সংস্থাটি কার্যত বন্ধই হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সংবাদমাধ্যমটির ভাষা বিভাগগুলো তাদের ওয়েবসাইটে কোনো সংবাদ আপডেট করেনি। টেলিভিশন এবং রেডিওতে সম্প্রচার হয় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে অথবা কেবল সংগীতভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলো চলছে।

পরিষেবা স্থগিত করার আগে তুরস্কের মতো দেশগুলোতে সেন্সরবিহীন সংবাদের বিরল উৎসগুলোর মধ্যে একটি ছিল ভিওএ। বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটিরও বেশি দর্শকের কাছে ৪৯টি ভাষায় সম্প্রচার করতো সংবাদমাধ্যমটি।

তুরস্কে 'নিয়ন্ত্রিত' সংবাদমাধ্যম

তুরস্কে প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রায় প্রায় ৯০ শতাংশই সরকার-নিয়ন্ত্রিত। ২০২২ সালে ডয়চে ভেলে বা ডিডব্লিউ-এর সকল ভাষার সংস্করণের পাশাপাশি ভিওএ-র তুর্কি ভাষার ওয়েবসাইটও নিষিদ্ধ করা হয়। তারপর থেকে তুরস্কে দর্শকদের কাছে একটি ‘মিরর’ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পৌঁছানোর চেষ্টা করে আসছিল ভিওএ। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্প এর সম্প্রচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত এই মিররের মাধ্যমেই দর্শক-পাঠকদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছিলো ভিওএ।

সাংবাদিকদের উপর চলমান দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে গণমাধ্যম অধিকার সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বা আরএসএফ তাদের ২০২৫ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে তুরস্ককে ১৫৯তম স্থানে রেখেছে। তুরস্কে বর্তমানে ১৭ জন সাংবাদিক কারাগারে বন্দি।

আরএসএফের তুরস্ক প্রতিনিধি এরোল ওনদেরোলু ডিডাব্লিউকে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভিওএ, বিবিসি এবং ডিডাব্লিউ এর মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো ‘গঠনমূলক’ রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যমের পরিবেশের মান এবং স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

তুরস্কে স্বাধীন গণমাধ্যমের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রচারকদের তুর্কি-ভাষা পরিষেবাগুলো বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। তাদের নিউজরুম বিদেশে অবস্থিত হলেও ভাষা পরিষেবাগুলো দেশের ভেতরেও স্বল্প সংখ্যক সাংবাদিক নিয়োগ করে থাকে।

ওনদেরোলু বলেন, "ভিওএ তুরস্কের নাগরিক সমাজ আন্দোলন এবং সাংবাদিক সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে এবং বিচ্ছিন্নতার প্রভাব ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।"

বিশেষ করে আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক ইস্যুতে, তুরস্কের দর্শকদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলোর মধ্যে একটি ছিল ভিওএ তুর্কি। ।

ভিওএ এর এক তুর্কি দর্শক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যখনই যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোনো ঘটনা ঘটে যা এর্দোয়ান সরকারকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে, তখন আমি প্রথমে যে ওয়েবসাইটটি দেখতাম, সেটি ছিল ভিওএ।"

সাংবাদিকরা ঝুঁকিতে

ভিওএ এর মূল সংস্থায় ফেডারেল তহবিল থেকে অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর, ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংবাদ পরিষেবার প্রায় ১৩শ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

মার্চের নির্বাহী আদেশে ক্ষতিগ্রস্ত ভিওএ কর্মীদের একটি দল ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নির্বাহী সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মে মাসের শুরুতে একটি ফেডারেল আপিল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনকে ভিওএ কর্মীদের কাজে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়ার একটি রায় স্থগিত করেছে।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে দেয়া আপিল আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর ট্রাম্প প্রশাসন ছাঁটাই বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে।

১৫ মে চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাওয়া প্রায় ৬০০ ঠিকাদারকে ৩০ মে এর মধ্যে তাদের প্রেস শংসাপত্র, ব্যাজ এবং ভিওএ এর অন্যান্য সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জে-ওয়ান ভিসাধারী কিছু ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মী এখন প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাদের মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের মামলার অন্যতম বাদী ভিওএ এর পরিচালক মাইকেল আব্রামোভিৎস বলেছেন, এই সাংবাদিকদের অনেকেই "অ্যামেরিকার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গল্প বলার জন্য তাদের নিজ দেশে অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে এসেছেন।"

'অবাঞ্ছিত কণ্ঠস্বর' বন্ধ

তুরস্ক-ভিত্তিক ভিওএ এর এক কর্মী হঠাৎ করে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার দিনের কথা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "ওয়াশিংটনে আমাদের সহকর্মীদের কর্মঘণ্টার মধ্যে তাদের অফিস খালি করতে বলা হয়েছিল। তাদের ব্যাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তারা দিন শেষ হওয়ার অপেক্ষাও করেনি। সংবাদ কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা যে প্রতিবেদনগুলো নিয়ে কাজ করছিলাম, তাও আমরা সম্পূর্ণ করতে পারিনি।"

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই সাংবাদিক বলেন, "একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার" চাপের মুখে থাকা গণমাধ্যম পরিবেশে ভিওএ আলাদাভাবে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি বলেন, "ক্ষমতাসীন দল এটিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিল। ভিওএ কর্মীরা সরকারপন্থি প্রতিষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা এবং অপপ্রচার দুইয়েরই মুখোমুখি হয়েছিল। সেই অর্থে সম্ভবত (তুরস্কের) সরকার ভিওএ বন্ধকে স্বাগতই জানিয়েছে।"

মার্কিন সরকারের সমালোচনাও একইভাবে প্রকাশ করে এসেছে ভিওএ। বিশেষজ্ঞরা মার্কিন-তুর্কি সম্পর্কের বিশ্লেষণে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলেও সেগুলো কখনও সেন্সর করা হতো না।

সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের 'যুদ্ধ'

আরএসএফ-এর অ্যাডভোকেসি এবং স্ট্র্যাটেজিক লিটিগেশনের পরিচালক আন্টোইন বার্নার্ড মনে করেন, ট্রাম্পের ভিওএ বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে "প্রেসের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ" এর বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করতে হবে।

ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "তিনি (ট্রাম্প) গণমাধ্যমের তহবিলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন। তিনি যে মিডিয়াগুলোকে পছন্দ করেন না, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত শুরু করেছেন এবং হোয়াইট হাউস থেকে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করেছেন। কারণ তিনি ঠিক যে শব্দগুলো ব্যবহার করতে চান তারা তা ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে, তিনি স্বাধীন মিডিয়া পছন্দ করেন না।"

আরএসএফ সম্প্রতি ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে "প্রেস স্বাধীনতার উদ্বেগজনক অবনতির" বিষয়ে সতর্ক করেছে। সংস্থাটি তুলে ধরেছে যে কীভাবে ট্রাম্প ভিওএ এবং রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি (আরএফই/আরএল) এর মতো রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত সম্প্রচারকদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে এরইমধ্যে কঠিন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছেন।

মে মাসের শুরুতে ট্রাম্প মার্কিন পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস বা পিবিএস এবং ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও বা এনপিআর-এর জন্য তহবিল কমানোর জন্য আরেকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। এবিসি নিউজ, সিবিএস নিউজ, পিবিএস এবং এনপিআর সহ প্রধান গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধেও ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের তদন্ত শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

চেনজিগ উজবেক/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ