তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সম্ভাব্য গণভোটে জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিরা জার্মানিতে অবস্থানকালে ভোট দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছে জার্মান সরকার৷ জার্মান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এই অবস্থান নিয়েছে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত গণভোটে জার্মানিতে বসেই অংশ গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিরা৷ কিন্তু মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত এক সম্ভাব্য গণভোটে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না বলে আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছে জার্মান সরকার৷ আঙ্কারা অবশ্য এখনো এমন কোনো গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব জার্মানিকে দেয়নি৷
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ভয়ংকর কিছু উপায়
গিলোটিনে মাথা কাটা, হাতির পায়ে পিষ্ট করা- প্রাচীনকালে এ ধরনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি অনেককে আতঙ্কিত করে৷ কিন্তু এরচেয়েও নৃশংস কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যার কথা হয়ত আপনাদের জানা নেই৷ সেগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: fotolia
শরীরকে দ্বিখণ্ডিত করা
বহু বছর আগে ইংল্যান্ডে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো৷ অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাজা দেয়ার স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো৷ তারপর দুই পা’র মাঝ বরাবর কেটে ফেলা হতো৷
ছবি: picture-alliance/Godong/C. Leblanc
শূলে চড়ানো
রোমান সাম্রাজ্যে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল৷ যীশু খ্রীস্টকেও এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল৷ কাঠের তক্তার সঙ্গে হাত ও পায়ে পেরেক ঠুকে সেই তক্তা দাঁড় করিয়ে দেয়া হতো৷ এভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত ব্যক্তিটি৷
ছবি: Reuters/J. Costa
কলম্বিয়ার টাই
কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশে প্রথমে অপরাধীর মাথা কেটে ফেলা হতো৷ তারপর জিভ টেনে বের করে মাথাটা গাছে বেঁধে রাখা হতো৷
ষাঁড়ের পেটে
সিসিলিতে অ্যাক্রাগাসের শাসনামলে এই ভয়াবহ পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়৷ লোহার ষাঁড় বানানো হতো৷ অপরাধীকে ঐ ষাঁড়ের পেটে ঢুকিয়ে এর নীচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হতো৷ ষাঁড়ের মুখ দিয়ে বের হতো অপরাধীর আর্তনাদ৷ মনে হতো ষাঁড়টিই চিৎকার করছে৷
ছবি: picture alliance/Blickwinkel/W. G. Allgoewer
সেপুকু
জাপানী যোদ্ধা সামুরাই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন৷ নিজের হাতেই অপরাধীর অন্ত্র বের করে আনতেন, আর যখন অপরাধী ছটফট করতো, তখন সামুরাইয়ের কোনো সহযোগী তরবারি দিয়ে অপরাধীর শিরচ্ছেদ করে দিতো৷
ছবি: Museum Kunstpalast, Düsseldorf, Graphische Sammlung
লিং চি
চীনে বিংশ শতাব্দিতে এসে এই পদ্ধতি বাতিল করা হয়৷ এ ধরণের মৃত্যুদণ্ডে অপরাধীর প্রতিটি অঙ্গ একে একে ছিন্ন করা হতো৷ আর চেষ্টা করা হতো, যাতে সে দীর্ঘ সময় এ অবস্থায় জীবিত থাকে৷
ছবি: Fotolia/D. Presti
জীবন্ত পুড়িয়ে মারা
১৯৩৭ সালে জাপানের সৈন্যরা বন্দি চীনাদের এই শান্তি দিয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/U. Ifansasti
স্প্যানিশ থাবা
প্রাচীন কালে স্পেনে লোহা দিয়ে বিড়ালের থাবার মতো ধারালো হাতিয়ার বানানো হতো৷ আর অপরাধীর চামড়া ঐ হাতিয়ার দিয়ে খুবলে নেয়া হতো৷ চামড়ায় সংক্রমণের কারণে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ছিল অবধারিত৷
ছবি: fotolia
ক্যাথরিন হুইল
অপরাধীকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দেয়া হতো৷ আর জল্লাদ ঐ চাকা ঘুরাতে থাকত, পাশাপাশি লাঠি দিয়ে প্রহার করতো৷ ফলে হাড্ডি ভেঙে ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হতো৷
ছবি: Reuters/J. Young
9 ছবি1 | 9
জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন সাইবার্ট শুক্রবার বার্লিনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, তুরস্ক মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত কোনো গণভোটের আয়োজন করলে তাতে জার্মানিতে বসে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না, কেননা, বিষয়টি জার্মানিতে রাজনৈতিকভাবে ধারণাতীত এবং জার্মানির সাধারণ আইন এবং ইউরোপের মূল্যবোধের বিপরীত৷
প্রসঙ্গত, গত মাসে গণভোটে অল্প ব্যবধানে জয় পাওয়ার পর তুরস্কে মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনতে আরেকটি গণভোট আয়োজনের আভাস দেন প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তুরস্কের আইন অনুযায়ী, বিদেশে বসবাসরত তুর্কিরা তুরস্কের যে কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন৷ তবে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জার্মানিতে অন্য কোনো দেশ এ রকম কোনো ভোটের আয়োজন করতে চাইলে আগে জার্মান সরকারের অনুমতি নিতে হবে৷
সাইবার্ট এই বিষয়ে কথা বলার আগেই অবশ্য সেটির বিরোধিতা করেন আসন্ন নির্বাচনে ম্যার্কেলের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্টিন শ্যুলৎস৷ ডেয়ার স্পিগেল পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা এমন কিছুর আয়োজন করতে দিতে পারিনা যা আমাদের মূল্যবোধ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আশায় ২০০৪ সালে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে তুরস্ক৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন দেয় না৷ ফলে তুরস্ক যদি মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনে, তাহলে সে দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে৷
এআই/এসিবি (এপি, ডিপিএ, ইপিডি, এএফপি)
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷