তুরস্কের সংসদের স্পিকার ইসমাইল কাহরামান সম্প্রতি ‘ইসলামি সংবিধান' প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন এবং সেটি শুনে ইউরোপ ভয় পাচ্ছে৷ কিন্তু ডয়চে ভেলের ডানিয়েল হাইনরিশ মনে করেন, আসল সমস্যা অন্য জায়গায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Suna
বিজ্ঞাপন
এই আহ্বানের ঘটনায় পশ্চিমা মধ্যবিত্ত নাগরিকদের চোখে রসবোধহীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের ছবি বারবার ভেসে উঠছে যিনি শরিয়া আইন চালু করতে চান, এবং সেটা এমন এক জায়গায় যেখানে জার্মানি থেকে বিমানে যেতে লাগে মাত্র তিন ঘণ্টা৷
তবে বিষয়টি কখনও ঘটবে না৷ এর্দোয়ানের দল একেপি যদি আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের মতবাদ ভেঙে দিতে চায় তাহলে দেশটির জনগণের একটি বড় অংশ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসবে, এমনকি এর্দোয়ানের দলের সমর্থকরাও৷
তুরস্কে স্পিকারের বক্তব্যের প্রতিবাদছবি: Reuters
একেপি যদি সংবিধানে ধর্মীয় তত্ত্ব ঢোকানোর প্রস্তাব দেয় তাহলে তারা তাদের উদার সমর্থকদের হারিয়ে ফেলবে৷ রক্ষণশীলরা যদি তাদের সীমানা ছাড়িয়ে যায় তাহলে কী হতে পারে সেটা ২০১৩ সালের গেজি পার্ক আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে৷ সেই সময় তুরস্কের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং যারা বিভিন্ন দল ও শ্রেণির, তারা এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল৷ সেই স্মৃতি এর্দোয়ান দ্রুত ভুলে যেতে পারেন না৷ তাছাড়া গত নির্বাচনের ফলাফল থেকে এর্দোয়ান এটি নিশ্চয় বুঝেছেন যে, একেপি কখনও সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ অথচ সংবিধান পরিবর্তনের জন্য এটি প্রয়োজন৷ ফলে এর্দোয়ান আর কাহরামান যতই বলুন না কেন, সেটি কখনও হবে না৷
আসল ধর্মনিরপেক্ষতা কখনোই ছিল না
তুরস্ক প্রজাতন্ত্র সৃষ্টি হওয়ার কদিন পরই ‘প্রেসিডেন্সি অফ রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স' নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়৷ দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরই এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বাজেট সবচেয়ে বেশি৷ বছরে প্রায় একশ কোটি ইউরো৷ এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ইসলামের বিশ্বাস ও রীতিনীতি বাস্তবায়ন করা, মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা৷ তুরস্কে মসজিদের ইমামরা সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী৷ তবে দেশটিতে শুধু সুন্নি মুসলমান গোষ্ঠীকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয় সরকার৷
ডানিয়েল হাইনরিশ, ডয়চে ভেলে
তুরস্কে আসলে মুসলমানরাই সবচেয়ে বিপদে আছে৷ আলাউইট সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের বাস সেখানে৷ অথচ তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে বাধা দেয়া হয় বলে সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে ইউরোপের মানবাধিকার আদালত৷
ভবিষ্যতে তুরস্কের সংবিধানে ‘আল্লাহ' শব্দটি যোগ করা হবে কিনা তার ওপর ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি নির্ভর করছে না৷ সেটি হবেও না৷ আসল সমস্যা হলো, তুরস্কে কখনও আসল ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিলই না৷
আপনি কি ডানিয়েল হাইনরিশের সঙ্গে একমত? আপনারও কি মনে হয় তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা কখনোই ছিল না? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷
ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহ দেখে, আহতদের আর্তনাদ শুনে সেদিন অসহায় বোধ করেছেন অনেকে৷ মৃতদেহ ডিঙ্গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন কেউ কেউ৷ পুলিশ তখনো এগিয়ে আসেনি৷ সাধারণ মানুষদের তখন পুলিশের প্রতি হামলার শিকারদের সহায়তার এগিয়ে আসার আহ্বান জানাতে দেখা যায়৷
ছবি: Reuters/T. Berkin
শান্তির বাণীতে ঢাকা মৃতদেহ
শান্তি সমাবেশে এসে মৃত্যু বরণ করা মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহগুলো ঢাকার মতো কাফনের কাপড় তখন ছিল না৷ তাই ব্যানার-ফেস্টুন দিয়েই ঢেকে দেয়া হয় তাঁদের দেহ৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
স্বজন এবং সমমনাদের কান্না
বোমা হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে শত শত মানুষ৷ কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে চিরবিদায় নেয়া স্বজন এবং সমমনাদের জন্য তখন অবশ্য কেঁদে ভাসানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/AA
তদন্তের তৎপরতা
একটু দেরিতে হলেও শনিবারই ঘটনার তদন্তে সক্রিয় হতে দেখা যায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে৷ ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা সেদিনই ঘটনাস্থলে ব্যস্ত সময় কাটান৷
ছবি: Getty Images/G. Tan
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কিন্তু পুলিশের ভূমিকায় জনমনে দেখা দেয় ক্ষোভ৷ বোমা হামলার পর বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ পুলিশের ওপর হামলা চালায়৷ পুলিশের এই গাড়িটিও জনবিক্ষোভের শিকার৷
ছবি: picture-alliance/AA
বিক্ষোভ চলছে
আত্মঘাতী বোমা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ হামলার জন্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-কে দায়ী করেছে তুরস্কের সরকার৷ তবে হামলার পর তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ হয়েছে৷ আংকারা এবং ইস্তানবুলসহ কিছু শহরে বোমা হামলার বিক্ষোভ জানানোর সময় এর্দোয়ান-বিরোধী স্লোগানেও ফেটে পড়েছেন বিক্ষু্ব্ধরা৷
শনিবারের হামলাটি হয়েছে তুরস্কের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলে৷ নিহত এবং আহতরা মূলত কুর্দি এবং বামপন্থি দলের নেতা-কর্মী৷ তাই সারা বিশ্বের সব কুর্দির মাঝেই দানা বেঁধেছে ক্ষোভ৷ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কুর্দি ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল৷