তুরস্কে শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের শাস্তি নিয়ে বিতর্ক
১৭ আগস্ট ২০১৬
তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে পেনাল কোডের ধারাটি বাতিল করার পর শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ মিশর বলছে, সুইডেন ও অস্ট্রিয়ার মতো দেশ আইনের কদর্থ করেছে৷
ছবি: Imago/Imagebroker
বিজ্ঞাপন
সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গট ওয়ালস্ট্রোম তাঁর সরকারি টুইট অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অনুমতি দেওয়ার তুর্কি সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে''৷ অবশ্য বিরোধের সূত্রপাত তার আগেই৷
গত জুলাই মাসে তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত পেনাল কোডের একটি ধারা বাতিল করে, যেখানে শিশুদের সঙ্গে যাবতীয় যৌন কার্যকলাপকে ‘অপব্যবহার' বলে গণ্য করা হয়েছে৷ এক স্থানীয় আদালত যুক্তি দেখিয়েছিল যে, শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের প্রতিটি ঘটনা আলাদা করে বিবেচনা করা উচিৎ, কেননা, একটি চার বছরের শিশুর সঙ্গে যৌনতা আর একটি ১৫ বছরের কিশোরীর সঙ্গে তার অনুমতিক্রমে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের একই শাস্তি হতে পারে না৷
সাংবিধানিক আদালতের বিচারকরা সাত বনাম ছয় ভোটে স্থানীয় আদালতের পিটিশান মঞ্জুর করেন, তবে রুল দেন যে, চলতি আইন আরো ছ'মাস বজায় থাকবে; সেই সময়ের মধ্যে সংসদকে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে৷ তুরস্কে বিবাহযোগ্য বয়স পূর্বাপর ১৮ বছর থেকে যাচ্ছে৷ কাজেই ওয়ালস্ট্রোমের টুইটে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুর ঊষ্মা বোধগম্য৷ তিনি আংকারায় সুইডিশ শার্জ দ্'আফেয়ার-কে তলব করেছেন৷
আইন সত্ত্বেও অনেক দেশে কমবয়সি মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হয়...ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Ponir Hossain
অনুরূপভাবে সপ্তাহান্তে অস্ট্রিয়ান শার্জ দ'আফেয়ারেরও ডাক পড়ে, কেননা, ভিয়েনা বিমানবন্দরের একটি নিউজ টিকারে জার্মান ভাষায় খবর দেওয়া হয়েছিল যে, ‘‘তুরস্ক ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের অনুমতি দিচ্ছে৷'' টিকারটি অস্ট্রিয়ার বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘ক্রোনেন-জাইটুং'-এর৷ চাভুসোগলু অস্ট্রিয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগ করেছেন যে, তুরস্কের বিরুদ্ধে এই ‘কেলেংকারি অভিযান'... ‘জাতিবাদ ও ইসলাম-বিদ্বেষের রাজধানী' অস্ট্রিয়া থেকে সুইডেন অবধি ছড়িয়েছে৷
অপরদিকে তুর্কি আইন মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, ‘যথাশীঘ্র সম্ভব' সংসদে নতুন বিল পেশ করা হবে এবং ‘‘ভবিষ্যতে যাতে কোনো ফাঁক না থেকে যায়, তুর্কি সরকার তার ব্যবস্থা করবেন৷'' অ্যাক্টিভিস্টদের উদ্বেগ অন্যত্র৷ তাঁদের চিন্তা, শিশু বলতে শিশু; নিপীড়িত শিশুর বয়স অনুযায়ী যদি যৌন অপব্যবহারের সাজা বাড়ে কিংবা কমে, তাহলে কি এক হিসেবে অপরাধ ও অপরাধীদের জন্য পথ প্রশস্ত করে দেওয়া হচ্ছে না?
শিশু অধিকার আন্দোলনকারীরা বলছেন যে, আদালতের তরফ থেকে একটা ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি যেসব বিচারক এই রুলিংয়ের বিরোধিতা করেছেন, তাঁরাও জনসাধারণের তরফ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন৷ শিশুদের লবি গ্রুপগুলো মনে করছে, আদালত যেন ১৮ বছরের কম বয়সের সব শিশুকে ‘শিশু' বলে গণ্য করতে রাজি নন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ, এপি)
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?