জার্মানির বামপন্থি এমপি আকবুলুতকে বিমানবন্দরে আটক করেছিল তুরস্ক। পরে তিনি বললেন, তুরস্ক অবিচারের দেশ।
বিজ্ঞাপন
ডিডাব্লিউ-র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তুরস্কে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। তিনি সোজাসাপটা বলেছেন, ''তুরস্কে আইনের শাসন নেই, সেখানে আইন, বিচার ও প্রশাসনের মধ্যে ক্ষমতার ভাগও নেই। কোনো প্রগতিশীল গণতন্ত্রে এটা খুবই জরুরি।''
এই বামপন্থি এমপি বলেছেন, ''তুরস্কে খামখেয়ালি শাসন চলছে। সেখানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সমানে বাড়ছে। ডিক্রি জারি করে বা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেখানে বেআইনি শাসন চলছে।''
কেন গ্রেপ্তার?
গত ৩ অগাস্ট এই নারী এমপি-কে তুরস্কের বিমানবন্দরে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে একটা ওয়ারেন্ট জারি করা ছিল। তাতে অভিযোগ ছিল, আকবুলুত সন্ত্রাসবাদীদের হয়ে প্রচার করেন। তিনি ২০১৯ সালে সামাজিক মাধ্যমে কিছু পোস্ট করেছিলেন। যার ভিত্তিতে এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। আকবুলুতের জন্ম হয়েছিল তুরস্কে।
জার্মানিতে তুর্কিদের জীবন
জার্মান-তুর্কি নিয়োগ চুক্তির ৬০ বছর পূর্তিতে জার্মানির রুর জাদুঘরে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে। বিস্তারিত ছবিঘরে...
ইস্তাম্বুলের চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে ১৯৯০ সালে জার্মানির কোলন, হামবুর্গ, ভের্ল, বার্লিন ও ডুইসবুর্গ শহরের তুর্কি বংশোদ্ভূতদের ছবি তোলেন। ওপরের ছবিতে চিত্রগ্রাহক নিজে।
ছবিতে ডুইসবুর্গের ভালসুম খনির দৃশ্য, যেখানে রয়েছে তুরস্ক থেকে আসা দুই খনি শ্রমিক। পঞ্চাশের দশকে জার্মানির কৃষি ও খনিখাতে দেখা যায় শ্রমিক সংকট। জার্মানির তৎকালীন রাজধানী বন ও তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার মধ্যে ১৯৬১ সালে সাক্ষরিত হয় নিয়োগ চুক্তি, যার ফলে ১৯৭৩ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ অতিথি শ্রমিক আসেন এই দেশে।
ছবিতে কোলনে গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের একটি কারখানা। গাড়িসহ নানাখাতে কাজ করতে আসা এই তুর্কিরা বর্তমানে জার্মানির বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। জার্মানিতে রয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ তুর্কি।
চাগাতের তিনমাসব্যাপী এই সফরে জার্মানির পরিবর্তনের চিত্রটি ধরা পড়ে। বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর ধীরে ধীরে একটি বহুমাত্রিক সমাজের দিকে যাচ্ছিল দেশটি, যার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছিল অনেকের জন্যই নতুন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৯০ সালে হামবুর্গ শহরে তৎকালীন একটি আইনের বিরুদ্ধে তুর্কীদের প্রতিবাদ সমাবেশ।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই একটি তুর্কী পরিবারের বাসার দৃশ্য। হামবুর্গের বাসিন্দা হাসান হ্যুসেইন গ্যুল ও তার পরিবারের সাত সদস্য। চাগাতের ছবির এই প্রদর্শনীতে রয়েছে হাসানের পরিবারের মতো আরো বহু পরিবারের কথা, যারা জার্মানিতে বাস করছেন কয়েক প্রজন্ম ধরে।
বর্তমানে, জার্মানিতে জলপাই বা ভেড়ার দুধের ছানা পাওয়া মোটেও কঠিন নয়। তবে একটা সময় তুর্কীদের পছন্দের খাবারের ব্যাপক অভাব থাকায় এই পরিবারেরা দেশ থেকে নিজেদের খাবার নিয়ে আসতেন। আস্তে আস্তে এই অবস্থার পরিবর্তন হয় ও তুরস্কে প্রচলিত খাবারের জোগান দিতে চালু হয় বহু তুর্কি বাজার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলন শহরের এমনই এক বাজার।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলনের একটি পাড়ার দৃশ্য, যেখানে একটি দেয়ালে লেখা তুর্কী নির্বাসিত কবি নাজিম হিকমেটের কয়েকটি পংক্তি, "বাঁচতে হলে গাছের মতো, একা, মুক্ত! যেন জঙ্গলে একা হয়েও সঙ্ঘবদ্ধ থাকা যায়! এটাই আমাদের চাওয়া।"
বার্লিন-ক্রয়েতজবার্গ অঞ্চলের একটি তুর্কী বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন এই চিত্রগ্রাহক। তুরস্কের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানেও নববিবাহিত দম্পতির জন্য সবাই দোয়া করেন, যাতে তারা একসাথে একই বালিশ ভাগাভাগি করে থাকেন। কারণ, তুর্কী সংস্কৃতিতে বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য বরাদ্দ থাকে একটা লম্বা বালিশ।
তুরস্কে প্রচলিত অনেক কিছুই ভুলে যাননি এই অভিবাসীরা। খৎনার অনুষ্ঠান শেষে 'মাশাল্লাহ' লেখা উত্তরীয় পরানোর চল জার্মানিতে আজও প্রচলিত। চাগাতের এই চিত্রপ্রদর্শনীর অর্থায়ন করেছে জার্মান পররাষ্ট্র বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থা। সহযোগিতা করছে তুরস্কে অবস্থিত জার্মান সংস্থা গ্যোটে ইন্সটিটিউটও।
২০১৯ সালে উত্তর সিরিয়ায় কুর্দদের মিলিশিয়া গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ চালিয়েছিল তুরস্ক। আর আকবুলুত তার তীব্র সমালোচন করেছিলেন। তিনি জার্মান সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি(পিকেকে)-র উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
কূটনৈতিক তৎপরতায় মুক্ত
সমাজবাদী বামপন্থি দলের সদস্য আকবুলুত জানিয়েছেন, তার মুক্তির জন্য জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে সচেষ্ট হতে হয়েছিল। তারা তুরস্কের স্বরাষ্ট্র ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কূটনৈতিক সংকট মিটে যায়। সরকারিভাবে জানানো হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে নেয়া হলো।
এমপি-র বক্তব্য
এই বামপন্থি এমপি বলেছেন, আগামী অক্টোবরে তিনি সরকারি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে আবার তুরস্কে যাবেন।
তবে তিনি বলেছেন, যে সব সাংবাদিক তুরস্কের সমালোচনা করেছেন, তারা সেই দেশে যাওয়ার আগে যেন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে যান। খোঁজ নিয়ে যান, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে কি না।