প্রথমে ইউরোপ, এবার অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে ন্যাটো সদস্য তুরস্কের৷ দুই দেশের দূতাবাস ভিসা পরিষেবা বন্ধ করায় উত্তেজনা নতুন মাত্রা অর্জন করছে৷
বিজ্ঞাপন
কিছুদিন আগেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ানের প্রশংসা করেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরেও বেশ উষ্ণতা দেখা গিয়েছিল৷
কিন্তু সেই সখ্যতার জায়গায় একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়ে চলেছে৷ সিরিয়ায় কুর্দি গোষ্ঠী ওয়াইপিজি-র প্রতি মার্কিন সমর্থন ও সহায়তার তীব্র বিরোধিতা করছে তুরস্ক৷ তার উপর অ্যামেরিকায় নির্বাসিত তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গ্যুলেন-কে প্রত্যর্পণের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না মার্কিন প্রশাসন৷ তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে এর্দোয়ান তাঁর এই শত্রুকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর৷ এক মার্কিন আদালতে তুরস্কের প্রাক্তন অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী জাফের চালায়ানের বিরুদ্ধে ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ পারস্পরিক আস্থার এমন সংকটের মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন এক কূটনৈতিক সংঘাত৷
গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে মার্কিন কনস্যুলেটের এক তুর্কি কর্মীকে গ্যুলেনের সমর্থক হিসেবে গ্রেপ্তারের ফলে মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছে৷ আংকারায় মার্কিন দূতাবাস এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করে অবিলম্বে সাধারণ ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ দূতাবাস জানিয়েছে, মার্কিন কূটনৈতিক মিশনগুলির কর্মীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তুরস্কের ভূমিকার মূল্যায়ন করা হচ্ছে৷ পালটা পদক্ষেপ হিসেবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অ্যামেরিকায় তুরস্কের কূটনৈতিক মিশনগুলিও ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷
সোমবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক মার্কিন কূটনীতিককে তলব করে আবার ভিসা দেবার প্রক্রিয়া চালু করার ডাক দিয়েছে৷ তুরস্কের বিচারমন্ত্রী আবদুলহামিত গুল বলেছেন, তুরস্কের আদালত তুরস্কেরই ভূখণ্ডে এক তুর্কি নাগরিকের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই পারে৷
এমন উত্তেজনার ফলে তুরস্কের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়ছে৷ তুর্কি লিরার বিনিময়মূল্য কিছুটা কমে গেছে৷ পূঁজিবাজারেও এর কুপ্রভাব পড়ছে৷ জার্মানি, তথা ইউরোপের পর এবার অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে তুরস্কের অর্থনীতি৷
ব্যর্থ অভ্যুত্থান দিবসে তুরস্কের দুই চিত্র
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে তুরস্কের সব পথই ছিল প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান সমর্থকদের দখলে৷ তবে ডয়চে ভেলের ডিয়েগো কুপোলো আঙ্কারায় এর্দোয়ান সমালোচকদের সভয় উপস্থিতিও দেখেছেন৷ কুপোলোর তোলা ছবি নিয়েই আজকের ছবিঘর....
ছবি: DW/D. Cupolo
এক বছর পর
শনিবার ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে তুরস্ক৷ গত বছরের ১৫ জুলাই সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থানের প্রয়াসকে রুখতে গিয়ে যে ২৫০ জন প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণ করা হয়েছে শ্রদ্ধাভরে৷ দেশের প্রায় সব শহরের রাস্তায়ই নেমে এসেছিল প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের অগনিত সমর্থক৷ সবচেয়ে বড় জমায়েত দেখা গেছে ইস্তান্বুলের বসফরাস ব্রিজ এবং আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
ব্যর্থ অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্বাভাবিকতা
শনিবারের গণজমায়েতে এমন অনেকেই ছিলেন, অভ্যুত্থান চেষ্টা রুখতে যাঁরা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন৷ নির্বাচিত সরকারকে অপসারণের চেষ্টা রুখতে তাঁদের কেউ কেউ সরাসরি সেনা সদস্যদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন৷ সেদিন এর্দোয়ান-বিরোধীরা মূলত ঘরে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করেছেন৷ এক বছর ধরে চলমান জরুরি অবস্থার মধ্যে শনিবারও পরিস্থিতি প্রায় সেরকমই ছিল৷
ছবি: DW/D. Cupolo
গণতন্ত্রের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
আঙ্কারার সমাবেশে একটি ব্যানারে লেখা, ‘‘আমরা গণতন্ত্রের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছি৷’’ এক বছর আগে এর্দোয়ান সমর্থকদের বিশাল জমায়েতের দিকে ইঙ্গিত করেই লেখা হয়েছে বাক্যটি৷ এর্দোয়ান সমর্থকরা মনে করেন, দেশান্তরী ইসলামি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন এখনো অভ্যুত্থানের পাঁয়তারা করছেন৷ এক বছর আগের কথিত অভ্যুত্থান প্রয়াসের জন্য গুলেন এবং তাঁর সমর্থকদেরই দায়ী করে এর্দোয়ান সরকার৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘শুদ্ধি অভিযান’
অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকেই তুরস্কে চলছে ব্যাপক ধরপাকড় এবং গণছাঁটাই৷ গত এক বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাবন্দি এবং দেড় লাখের মতো মানুষকে চাকরিচ্যুত করেছে এর্দোয়ান সরকার৷ ‘গুলেন সমর্থক’ হিসেবে চিহ্নিত করে চালানো হচ্ছে এই গ্রেপ্তার ও ছাঁটাইয়ের অভিযান৷ বলা হচ্ছে, গণতন্ত্রকে দীর্ঘজীবী করার জন্য এই ‘শুদ্ধি অভিযান’ দরকার৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাগাতার জরুরি অবস্থা এবং শঙ্কা
২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের সেই অভ্যুত্থান-চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর থেকেই চলছে জরুরি অবস্থা৷ শনিবারে সমাবেশে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলছিলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন, কেননা, এখন সৈন্যদের যা খুশি তা-ই করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ আমি মনে করি, জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যদি কোনো গণভোট হতো, তাহলে অধিকাংশ নাগরিকই মেয়াদ বাড়ানোর বিপক্ষে ভোট দিতো৷ ’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘জনগণ আপনার সাথে আছে’
সমাবেশে যোগ দেয়া এক এর্দোয়ান সমর্থকের হাতের ব্যানারে লেখা, ‘‘শক্ত থাকুন, জনগণ আপনার সঙ্গে আছে৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘আমরা অনেক অধিকার হারিয়েছি’
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর সিরমাকের মানবাধিকার আইনজীবী সেয়মা উর্পার৷ এর্দোয়ান-বিরোধী এবং সমালোচকদের দুরবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অভ্যুত্থানের পর আমার পৌরসভার প্রায় সব কর্মীকেই ছাঁটাই করা হয়৷মেয়রের জায়গায় কাজ চালাচ্ছে সরকার নিযুক্ত ট্রাস্টি৷ আমরা অনেক অধিকার হারিয়েছি৷ আমার পক্ষে কাজ করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘আমাদের দেশ যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী’
এরল কানমাজ এর্দোয়ান সমর্থক৷ অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে তাঁর এক সন্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হয়৷ এর্দোয়ানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘‘আজ রাতে এখানে এসেছি আমার জন্মভূমিকে রক্ষা করতে৷ গুলেনপন্থি বিশ্বাসঘাতকরা সেনাবাহিনীকে দ্বিধাগ্রস্থ করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু এখন আমাদের দেশ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
‘প্রাণ দিতে বললে প্রাণ দেবো’
সুরেয়া কালায়াচি নামের এক এর্দোয়ান সমর্থকের (বাম দিকে) টি-শার্টে লেখা, ‘‘একটা ডাকই যথেষ্ট৷ ডাকুন আমাদের, আমরা চলে আসবো৷ মৃত্যু বরণ করতে বলুন, আমরা মৃত্যুকে বরণ করে নেবো৷’’
ছবি: DW/Diego Cupolo
‘আমরা অটোমানদের নাতি-নাতনি’
এর্দোয়ানের আরেক ভক্ত তুলে ধরেছেন, ‘আমরা অটোমানদের নাতি-নাতনি’ লেখা ব্যানার৷