তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প সরকার৷ জবাবে এর্দোয়ান সরকারের মন্তব্য, অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তারাও দেশের দুটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেবে৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ট্রাম্প সরকার৷ জবাবে এর্দোয়ান সরকারের মন্তব্য, অ্যামেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তারাও দেশের দুটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেবে৷
অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে এ বার সরাসরি তোপ দাগলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ জানিয়ে দিলেন, অ্যামেরিকা যদি রাশিয়ার কাছ থেকে মিসাইল কেনার ক্ষেত্রে তুরস্কের বিরোধিতা করে, তাহলে সে দেশে মার্কিন সেনার দুটি ঘাঁটি তাঁরা বন্ধ করে দেবেন৷
সম্প্রতি রাশিয়ার কাছ থেকে মিসাইল সিস্টেম কেনার পরিকল্পনা করেছিল তুরস্ক৷ রাশিয়া তা বিক্রি করতে রাজিও হয়েছিল৷ কিন্তু বাদ সাধে অ্যামেরিকা৷ মার্কিন সরকার তুরস্ককে জানিয়ে দেয়, যে মিসাইল সিস্টেম কেনার পরিকল্পনা করছেন এর্দোয়ান, তা ন্যাটোর নিয়ম অনুযায়ী বৈধ সামরিক অস্ত্র নয়৷ ফলে তুরস্ক যদি ওই অস্ত্র কেনে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে অ্যামেরিকা৷
এতেই ক্ষুব্ধ হন এর্দোয়ান৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, রাশিয়ার সঙ্গে মিসাইলের যে চুক্তি তাঁর হয়েছে, তা থেকে তিনি পিছু হটবেন না৷ তাতে অ্যামেরিকা যদিনিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে তিনিও তুরস্কে অবস্থিত অ্যামেরিকার দুটি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দেবেন৷ মার্কিন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওই দুটি সামরিক ঘাঁটি মার্কিন সেনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, ওই দুটি ঘাঁটি থেকেই ইসলামিক স্টেট, ইরান এবং সিরিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় লড়াই চালায় অ্যামেরিকা৷ শুধু তাই নয়, ওই দুটি ঘাঁটির একটিতে অ্যামেরিকা ৫০টি গ্র্যাভিটি পরমাণু অস্ত্রও রেখেছে৷ ফলে এই দুটি ঘাঁটি এর্দোয়ান বন্ধ করে দিলে ব্যাপক সমস্যায় পড়বে ট্রাম্প প্রশাসন৷ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন সংসদেও আলোচনা হয়েছে৷
সিরিয়ার যুদ্ধে রাশিয়াকে মদত দিচ্ছে তুরস্ক, এ নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে৷ বিষয়টি নিয়ে এর্দোয়ানকে একাধিকবার চাপ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অ্যামেরিকা৷ ফলে বেশ কিছু দিন ধরেই অ্যামেরিকার সঙ্গে চাপা বিরোধ চলছিল তুরস্কের৷ এ বার তা প্রকাশ্যে চলে এল৷
ইস্তানবুলেই শেকড় এর্দোয়ানের
ইস্তানবুলের মেয়র পুনর্নির্বাচনেও জয় পেয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের বিরোধীরা৷ কিন্তু তাই বলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট ইস্তানবুলে প্রভাব হারিয়েছেন মনে করলে ভুল হবে৷ জন্মস্থান কাসিমপাসা এখনও তাঁর পক্ষেই আছে৷
এর্দোয়ানের শহর
বিখ্যাত গালাটা টাওয়ার থেকে হাঁটা দূরত্বে ইস্তানবুলের ইউরোপ অংশে ইসতিকলাল অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত কাসিমপাসা৷ ৬৫ বছর আগে এখানেই জন্মেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ ইস্তানবুলের এই অংশেই তাঁর কট্টর সমর্থকদের বাস৷
ছবি: Demetrios Ioannou
নতুন যুগ
গত গ্রীষ্মেই আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷
ছবি: Demetrios Ioannou
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ এর ফলে একই সঙ্গে সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন এর্দোয়ান৷ ১৯২৩ সালে দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুর্কি রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটিই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন৷
ছবি: Demetrios Ioannou
পরিবারের সদস্য
এর্দোয়ানের মুখ ও একেপির দলীয় পতাকায় ছেয়ে আছে কাসিমপাসা৷ দেয়ালে টানানো পোস্টার বা ব্যালকনিতে ঝুলছে ব্যানার৷ কাসিমপাসার মানুষ কাকে সমর্থন করছে, সেটি স্পষ্ট৷ বিরোধী দলের ও প্রার্থীর পোস্টার প্রায় নেই বললেই চলে, যা আছে, তাও ছেঁড়া৷ কাসিমপাসার মানুষ এর্দোয়ানকে নিজের পরিবারের সদস্য বলেই মনে করেন৷
ছবি: Demetrios Ioannou
সাধাসিধে জীবন
এর্দোয়ান একটি রক্ষণশীল, খেটে খাওয়া পরিবারের অংশ হয়ে বড় হয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকদের অনেকেই এমন জীবনের সঙ্গে পরিচিত৷ জীবনের বেশিরভাগ সময় কাসিমপাসাতেই কাটিয়েছেন তিনি৷ এখানেই শুরু তাঁর রাজনৈতিক জীবন৷ ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম ইস্তানবুলের মেয়র হন, ২০০৩ সালে হন প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট হন ২০১৪ সালে৷