ডাচ রাষ্ট্রদূতকে আংকারায় ফেরা থেকে বিরত করার পর তুরস্ক নেদারল্যান্ডসের পক্ষ নেওয়ার দরুণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা করেছে৷ অপরদিকে ম্যার্কেল সন্ত্রাসীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
মূল বিরোধ তুরস্কের ইউরোপে রাজনৈতিক জনসভা করার দাবি নিয়ে৷ ব্রাসেলস আংকারাকে পরিস্থিতি আরো খারাপ করা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে৷ প্রতিক্রিয়া হিসেবে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাত্র বেছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়োগ করছে৷
‘‘ইইউ-এর অদূরদর্শি বিবৃতির আমাদের দেশে কোনো মূল্য নেই'', বলেছে তুরস্ক৷
ইতিপূর্বে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘‘সন্ত্রাসীদের মদত দেওয়ার'' অভিযোগ করেন এবং বলেন যে, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস, উভয় দেশই নাৎসিদের মতো ব্যবহার করছে৷
‘‘মিসেস ম্যার্কেল, আপনি আপনাদের দেশে সন্ত্রাসীদের লুকিয়ে রাখছেন কেন? কেন আপনি কিছু করছেন না?'' একটি সাক্ষাৎকারে বলেন এর্দোয়ান৷ সম্ভাব্য সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আংকারা যে ৪,৫০০ ফাইল পাঠিয়েছে, ম্যার্কেল সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করছেন, বলে এর্দোয়ানের অভিযোগ৷
ইতিমধ্যে ম্যার্কেলের মুখপাত্র স্টেফেন সাইব্যার্ট বলেছেন যে, ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ ‘‘উদ্ভট'': ‘‘চ্যান্সেলরের এই প্ররোচনার খেলায় অংশ নেবার কোনো অভিপ্রায় নেই'', বলে সাইব্যার্ট যোগ করেন৷
নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে তুরস্কের চলতি কূটনৈতিক বিরোধে ম্যার্কেল যে প্রকাশ্যভাবে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটেকে সমর্থন করেছেন, তা নিয়েও ম্যার্কেলের সমালোচনা করেছেন এর্দোয়ান৷
নতুন তুরস্ক গড়ার অঙ্গীকার দিলেন এর্দোয়ান
ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা তিন সপ্তাহ ধরে এর্দোয়ানের পক্ষে ব়্যালির পর, তুরস্কের ৮০টি শহরে গত রবিবার চূড়ান্ত বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ আঙ্কারা থেকে জানাচ্ছেন ডিয়াগো কুপোলো৷
ছবি: DW/D. Cupolo
রাজপথে নামার আহ্বান
গতমাসে সেনা অভ্যুত্থানের সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান তাঁর সমর্থকদের রাজপথে নেমে ক্ষমতাসীনদের রক্ষায় সেনাবাহিনীকে হটাতে সহায়তার আহ্বান জানান৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সত্যিই রাস্তায় নামেন অসংখ্য মানুষ এবং সেনাবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়৷ এরপর এর্দোয়ান প্রতিরাতে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
ছবি: DW/D. Cupolo
লাখো মানুষের উপস্থিতি
রবিবার চূড়ান্ত ব়্যালিতে ইস্তানবুলে হাজির ছিলেন ২০ লাখের মতো মানুষ৷ আঙ্কারায় ছিলেন দশ হাজার৷ তুরস্কের মোট ৮০টি শহরে এ সময় বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়৷ এর্দোয়ানের একেপি হচ্ছে প্রথম দল, যেটি ইসলামিক মনোভাব প্রদর্শন সত্ত্বেও একটি সেনা অভ্যুত্থান ঠেকাতে পেরেছে৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা একে দেশটির ইতিহাসরচনাকারী সেনাবাহিনী এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বিপরীতে বড় জয় মনে করছে৷
ছবি: DW/D. Cupolo
এক নতুন তুরস্ক নিয়ে আশাবাদ
ইস্তানবুল থেকে দেয়া বক্তব্যে এর্দোয়ান নতুন এক তুরস্ক গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন এবং তাঁর সমর্থকরাও এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ আঙ্কারার রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী লালে আলিচি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আয়োজিত প্রতিটি ব়্যালিতে অংশ নিয়েছেন৷ তিনি জানান, অভ্যুত্থানে জড়িতদের শাস্তি দেয়ার পর তুরস্ক দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে, কেননা তখন সরকারকে বাধা দেয়ার আর কেউ থাকবে না৷
ছবি: DW/D. Cupolo
‘‘আমরা বড় শক্তি হবো’’
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার আতালে জানান, তিনি এর্দোয়ানকে সমর্থন দিয়েছেন কেননা তিনি তুরস্ককে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এর্দোয়ান বিশ্বকে জানিয়েছেন, আমরাও আছি এবং শীঘ্রই বড় শক্তিতে পরিণত হবো৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
এইচডিপিকে নেয়া হয়নি
যদিও রবিবারের ব়্যালিতে অংশ নেয়া অনেকে দাবি করেছেন, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে রাস্তায় নেমেছেন তারা, তাসত্ত্বেও বিরোধীরা জানিয়েছেন, সেদেশের তৃতীয়-বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কুর্দিপন্থি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এইচডিপি)-কে ব়্যালিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি৷ এক কুর্দ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘কুর্দ হিসেবে আমি সেখানে যেতে পারি না, কেননা আমি নিরাপদ বোধ করছি না৷’’
ছবি: DW/D. Cupolo
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উত্থান
জাতীয় জরুরি অবস্থায় সাধারণত ব্লক করা থাকলেও ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ এর্দোয়ানের ‘ফেসটাইম’ বক্তব্য থেকে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখানো ‘পেরিসকোপ’ ভিডিও অবধি সবকিছুই অনেক গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, সরকার নিজেদের জন্য লাভজনক মনে করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাধা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেয়নি৷
ছবি: DW/D. Cupolo
6 ছবি1 | 6
তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়েলডিরিম তুরস্ক আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে উদ্বাস্তু চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন৷
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মান নাগরিকদের তুরস্ক যাত্রা সম্পর্কে যে নতুন নির্দেশ প্রকাশ করেছে, তাতে তুরস্কগামী জার্মানদের রাজনৈতিক সমাবেশ ও মানুষের ভিড় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷