তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং সিরিয়ার উত্তরে সোমবার ভোরে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প। গত এক দশকের মধ্যে এটিকে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞাপন
ভূকম্পনবিদরা বলছেন, দশকের অন্যতম শক্তিশালী এই ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে আরব ভূখণ্ড পর্যন্ত মাটির গভীরে ১০০ কিলোমিটারের (৬২ মাইল) মতো দীর্ঘ ফাটল তৈরি হয়েছে। মাটির নীচে আসলে কী ঘটেছে এবং এর প্রভাটা কী তা-ও ব্যাখ্যা করেছেন তারা।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্পে দুই দেশে মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৯০০০ ছাড়িয়েছে। ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি কোথায়?
সোমবার ভোরের ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে গাজিয়ান্তেপ প্রদেশের নুরগাদি শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পূর্বে এবং ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে ইস্ট আনাতোলিয়া ফল্টে। ফল্ট বলতে মাটির নীচে পাথর ও অন্যান্য খনিজের বিশালাকৃতির (শত বা হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ) খণ্ডগুলোকে বোঝায়। অনমনীয় এই প্লেটগুলো চলমান অবস্থায় থাকে।
ইস্ট আনাতোলিয়া ফল্টে ফাটলের কারণে সৃষ্ট কম্পনগুলো উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবল ছিল। এর ফলে তুরস্কের মধ্যাঞ্চল ও সিরিয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি ছড়িয়ে গেছে।
ব্রিটিশ জিওলোজিক্যাল সার্ভের অনারারি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট রজার মুসন বলেন, গত শতাব্দিতে ইস্ট আনাতোলিয়া ফল্টের তেমন কোনো গতিবিধি ছিল না। ১৯৭০ সাল থেকে এই ৫২ বছরে এই এলাকায় তিন বার রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু এখন থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে ১৮২২ সালে এই এলাকায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ২০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়।
কত ভয়ঙ্কর ছিল এই ভূমিকম্প?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এক বছরে মোটামুটি ২০টির কম ভূমিকম্প ৭ মাত্রার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়। তবে কী পরিমাণ শক্তি এই ভূমিকম্পের ফলে বিচ্ছুরিত হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
ইউনভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান জোয়ান্না ফাউর ওয়াকার জানান, ২০১৬ সালে ইতালিতে ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৩০০ জেনের প্রাণহানি ঘটে। সেই তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল তুরস্কের এই ভূমিকম্প। গত ১০ বছরে এত শক্তিশালী মাত্র দুটি ভূমিকম্প হয়েছে পৃথিবীতে।
কেন এত প্রবল কম্পন?
ভূপৃষ্ঠের নীচে ইস্ট আনাতোলিয়া ফল্ট দুই অংশে ভাগ হয়ে দুটি খণ্ড আগু-পিছু অবস্থায় সরে গেছে, বলছেন ভূকিম্পনবিদরা। পাথুরে এই খণ্ডগুলো পরস্পরকে ধাক্কা দিতে দিতে একটি ওপরের দিকে ও একটি নীচের দিকে সরতে থাকে। এসময় প্রবল মাত্রার শক্তি নির্গত হয়। দুটি খণ্ডের মাঝখানে দূরত্ব তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থা চলতেই থাকে। এ কারণেই এত শক্তিশালী ভূকম্পন অনুভূত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নীচে দ্য সান অ্যান্ড্রিয়াস ফল্ট একই ধরনের, তবে সবচেয়ে শক্তিশালী স্ট্রাইক স্লিপ ফল্ট বলেও জানান বিজ্ঞানীরা। সেখানে যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প আঘাতের পূর্বাভাস দীর্ঘদিন ধরেই দিয়ে রেখেছেন তারা।
এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ সব ভূমিকম্প
সোমবার ভোরে সিরিয়া ও তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২,৩০০-র বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ ছবিঘরে এই শতাব্দীতে বিশ্বে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সব ভূমিকম্পের তথ্য থাকছে৷
ছবি: AP
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, সিরিয়া ও তুরস্ক
সোমবার ভোরে সিরিয়া ও তুরস্কে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে এখন পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ২,৩০০-র বেশি মানুষ মারা গেছেন৷
ছবি: Ghaith Alsayed/AP Photo/picture alliance
১৪ আগস্ট, ২০২১, হাইতি
হাইতির দক্ষিণাঞ্চলে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে ২,২০০র বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ প্রায় ১৩ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷
ছবি: Reginald Louissant Jr/AFP/ Getty Images
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসিতে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে প্রায় দেড় মিটার উঁচু সুনামি হয়েছিল৷ প্রাণ হারান চার হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষ৷
ছবি: Getty Images/C. Court
১ নভেম্বর, ২০১৭, ইরান
পূর্বাঞ্চলীয় কেয়ারমানশাহ রাজ্যে ৭.৩ মাত্রা ভূমিকম্পে চারশর বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pakizeh
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, মেক্সিকো
মধ্য মেক্সিকোতে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৩৬৯ জন প্রাণ হারান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/G.M. Contreras
২৪ আগস্ট, ২০১৬, ইটালি
রোমের পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M.Cavallari
১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ইকুয়েডর
দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় এলাকায় ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে সাড়ে ছয়শর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: Imago/Zumapress
২৬ অক্টোবর, ২০১৫, পাকিস্তান-আফগানিস্তান
৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে দুই দেশ মিলিয়ে প্রায় চারশ জন প্রাণ হারান৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Shah
২৫ এপ্রিল, ২০১৫, কাটমান্ডু, নেপাল
৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প প্রায় নয় হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কাটমান্ডু থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
১১ মার্চ, ২০১১, ফুকুশিমা, জাপান
৯ মাত্রার ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামি ও তারপর পারমাণবিক কেন্দ্রে বিপর্যয়ের ঘটনায় প্রায় ২১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa
১২ ডিসেম্বর, ২০১০, পোর্ট অফ প্রিন্স, হাইতি
৭.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এতে কমপক্ষে তিন লক্ষ ২০ হাজার মানুষ নিহত হয়৷ আহত হয় প্রায় তিন লক্ষ মানুষ৷ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল হাইতির রাজধানী পোর্ট অফ প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে৷
ছবি: AP
১২ মে, ২০০৮, সিচুয়ান, চীন
৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ মারা যায়৷ এতে ৫০ লক্ষেরও বেশি ভবন ধসে পড়ে৷ নিহতদের বেশিরভাগই ধসে যাওয়া ভবনের নীচে পড়ে প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images
২৬ মে, ২০০৬, ইয়োগিয়াকার্টা, ইন্দোনেশিয়া
২০০৬ সালের ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৫,৮০০ মানুষের প্রাণ যায়৷ আহত হয় প্রায় ৩৬ হাজার৷
ছবি: AP
৮ অক্টোবর, ২০০৫, কাশ্মীর, পাকিস্তান
৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৭৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷ এছাড়া ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় ১,৩০০ জন এবং আফগানিস্তানেও বেশ কয়েকজন নিহত হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/E. Feferberg
২৬ ডিসেম্বর,২০০৪, আচে, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উপকূলে সমুদ্রগর্ভে সংঘটিত ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্প যে সুনামির অবতারণা ঘটায়, তাতে ১৪ দেশের প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/Choo Youn Kong
২৬ ডিসেম্বর, ২০০৩, বাম, ইরান
৬.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন৷ আহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০ হাজার৷
ছবি: AP
২৬ জানুয়ারি, ২০০১, গুজরাট, ভারত
গুজরাটে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: SEBASTIAN D'SOUZA/AFP/Getty Images
17 ছবি1 | 17
ব্রিটেনের ওপেন ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ববিদ ডেভিড রটারি বলেন, ফল্টে ফাটল যত গভীর হবে, ভূমিকম্প ততই শক্তিশালী হবে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে তুলনামূলক অগভীর ফাটল থেকে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্প হয়েছে।
কী রকমের আফটারশক হতে পারে?
৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার ১১ মিনিট পর ওই একই এলাকায় ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। দুপুরের দিকে আঘাত করে ৬ মাত্রার কম্পন।
ব্রিটিশ জিওলোজিক্যাল সার্ভের রজার মুসন বলছেন, আনাতোলিয়া ফল্টের আশপাশের ফল্টগুলোর গতিবিধির কারণে এসব আফটার শক হচ্ছে। এই অবস্থা আরো কিছু দিন চলতে পারে।
১৮২২ সালের ভূমিকম্পের পর প্রায় এক বছর পর্যন্ত তুরস্কের ওই এলাকায় প্রায়ই ভূমিকম্প অনুভূত হতো বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।
মৃতের সংখ্যা কত হতে পারে?
জনবহুল এলাকায় একই মাত্রার ভূমিকম্পে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮, অর্থাৎ একই মাত্রার ভূমিকম্পে ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
তুরস্ক ও সিরিয়ার পরিস্থিতি ভালো নয় এবং তীব্র শীতের কারণেও মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসএফ/এসিবি (রয়টার্স)
ধ্বংসস্তূপ সরানোর অসম লড়াইয়ে তুরস্ক-সিরিয়া
চারদিকে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা৷ ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা৷ অথচ নানা প্রতিকূলতায় দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Hussein Malla/AP Photo/picture alliance
ভয়ঙ্কর ভোর
ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর সোয়া চারটা৷ বেশিরভাগ মানুষ তখনও ঘুমন্ত৷ এ সময় সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল৷ মুহূর্তেই ধসে পড়ে হাজারো ভবন৷
ছবি: Omer Yasin Ergin/AA/picture alliance
শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা
ভূমিকম্পের পাশাপাশি অঞ্চলটিতে বয়ে যাচ্ছে তীব্র হিমেল হাওয়া৷ বেঁচে যাওয়া মানুষেরা বাইরে খোলা আকাশের নীচে আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
ধূলিসাৎ হাজারো ভবন
শুধু তুরস্কেই অন্তত দুই হাজার ৮০০ ভবন ধসে পড়েছে, যার একটি কাহরামানমারাসের এই ভবনটি৷
ছবি: IHA/REUTERS
খালি হাতে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে জীবিতদের সন্ধান করতে থাকেন তারা৷ অনেকেই উদ্ধারের যন্ত্রপাতি ছাড়া খালি হাতেই অনুসন্ধান চালান৷
ছবি: DHA
জীবিতের খোঁজে
তুরস্কে ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি কাহরামানমারাস৷ সেখানে ধসে পড়া ভবনের ভিতরে প্রাণের স্পন্দন আছে কিনা তা বোঝার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন একজন৷
ছবি: Cagla Gurdogan/Reuters
অর্ধশত কম্পন
মূল ভূমিকম্পের পর অন্তত অর্ধশত আফটার শক বা পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ এর মধ্যে সোমবার দুপুরে সবচেয়ে ভয়াবহটি ছিল ৭.৫ মাত্রার৷
ছবি: Sertac Kayar/Reuters
বন্দরে আগুন
ভূমিকম্প আঘাত হানা তুর্কি শহর ইস্কেনবেরুনের সমুদ্র বন্দরে মঙ্গলবার আগুন লাগে৷ এতে বহু কন্টেইনার পুড়ে যায়৷ টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়৷ ভূমিকম্পের কারণে একটির উপর আরেকটি কন্টেইনার উঠে আগুন লেগে যায় বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা৷
ছবি: Serdar Ozsoy/Depo Photos via AP/picture alliance
বিধ্বস্ত ইদলিব
ভূমকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ ইদলিব৷ গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়লো দেশটির মানুষ৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ভূমিকম্পের কারণে আরেক দফা চললো ধ্বংসলীলা৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
হতভাগা সিরীয়রা
সিরিয়ার এক স্থানীয় সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় ভয়ে বাড়িঘরেই আশ্রয় নেন ইদলিবেব মানুষ৷ রাশিয়ার বিমান হামলায় আগে থেকেই নাজুক বাড়ি-ঘরগুলো দ্রুতই ধসে পড়ে৷ নতুন ভবনগুলোও রেহাই পায়নি৷ পুরো পরিবারশুদ্ধ মানুষ চাপা পড়েন ভবনের নীচে৷’’
ছবি: Omar Albam
উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকরা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মানুষকে সহায়তার জন্য গঠিত স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন দ্য হোয়াইট হেলমেটস উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করে৷ জারদানায় জীবিত মানুষের খোঁজ করছেন এই দুইজন৷
ছবি: Ahmad al-Atrash/AFP
উদ্ধার হওয়া শিশু
ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়া বাড়িগুলোর ভিতর থেকে অনেক জীবিতদেরও উদ্ধার করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার তুরস্কের হাতায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেন এই কর্মীরা৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
ভেঙে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ভবন
ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও৷ তুরস্কের মাল্টায়া প্রদেশে ১৩ শতকের একটি বিখ্যাত মসজিদ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিকে সোমবার তুষার ঝড়ে কর্মীদের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Volkan Kasik/AA/picture alliance
ইউনেস্কো সাইট
সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত একটি দুর্গের ভিতরে অবস্থিত একটি মসজিদ৷ ভূমিকম্পের আগে ও পরে মিনারের চিত্র দেখুন৷
ছবি: AFP
ন্যাটো ও ইইউর সাহায্য কামনা
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো ও ইইউর কাছে সহায়তা চেয়েছে তুরস্ক৷ তাতে সাড়া দিয়ে ১৭টি দেশ থেকে উদ্ধারকর্মীর ২০টি দল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই এমনকি ইউক্রেনও তুরস্কের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP
২০ হাজার ছাড়াতে পারে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুযায়ী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে৷ কর্তৃপক্ষের মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক-সিরিয়া মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ বিরূপ আবহাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যাচ্ছে না৷