তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্পে মৃত্যু ছাড়াতে পারে ২০ হাজার
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
এখনো ধংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা- যদি একটিও প্রাণ বাঁচানো যায়! কিন্তু তীব্র ঠান্ডার কারণে সে আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে৷ মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে৷ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
তুরস্ক এবং সিরিয়ার স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশ থেকে আসা উদ্ধার ও ত্রাণকর্মীরা৷ দুই দেশের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকাজ শেষ হতে হতেমৃতের সংখ্যা বর্তমানের দ্বিগুণও হয়ে যেতে পারে৷
কেবল তুরস্কেই মৃতের সংখ্যা সাড়ে আট হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ৷
উদ্ধারকর্মীদের সংগঠন হোয়াইট হেলমেট জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় দেড় হাজারের বেশি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ৷
কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, এখনো বিপুল পরিমাণ ধংসস্তুপ সরানো সম্ভব হয়নি৷ ফলে এর নীচে মানুষ চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে৷ যত সময় যাচ্ছে, কাউকে জীবিত উদ্ধার করতে পারার সম্ভাবনাও ফুরিয়ে আসছে৷
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর রাতে প্রথমে ৭.৮ মাত্রার এবং পরে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে৷
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল৷ এখানেই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন৷
সিরিয়ায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে অন্তত তিন লাখ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি হারিয়েছেন৷ রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা সানা জানিয়েছে, বাস্তুচ্যূতদের আশ্রয় দিতে দেশজুড়ে ১৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে৷
তবে এ পরিসংখ্যান কেবল সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশের জন্যই প্রযোজ্য৷ বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের হিসাব দামেস্কের সরকারের কাছে নেই৷
বুধবার জোটের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার ইয়ানেৎস লেনারকিক সাংবাদিকদের জানান, ‘‘আজ সকালে বেসরকারি নাগরিকদের সুরক্ষায় সিরিয়া সরকারের কাছ থেকে সহায়তার আবেদন পেয়েছি আমরা৷''
তিনি জানান, জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে এই আহ্বানে সাড়া দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে৷ তবে একই সঙ্গে এই সহায়তা যাতে দামেস্ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে না যায়, সেটি নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে৷
২০১১ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের পর থেকে সিরিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
সিরিয়ার বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে উদ্ধারকাজ চালানো সংগঠন হোয়াইট হেলমেটও আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে৷ গৃহযুদ্ধ চলাকালে দেশটির বেসামরিক জনগণকে রক্ষায় গড়ে ওঠে এই সংগঠন৷
ধ্বংসস্তূপ সরানোর অসম লড়াইয়ে তুরস্ক-সিরিয়া
চারদিকে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা৷ ঘণ্টায় ঘণ্টায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা৷ অথচ নানা প্রতিকূলতায় দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: Hussein Malla/AP Photo/picture alliance
ভয়ঙ্কর ভোর
ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর সোয়া চারটা৷ বেশিরভাগ মানুষ তখনও ঘুমন্ত৷ এ সময় সাত দশমিক আট মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চল৷ মুহূর্তেই ধসে পড়ে হাজারো ভবন৷
ছবি: Omer Yasin Ergin/AA/picture alliance
শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা
ভূমিকম্পের পাশাপাশি অঞ্চলটিতে বয়ে যাচ্ছে তীব্র হিমেল হাওয়া৷ বেঁচে যাওয়া মানুষেরা বাইরে খোলা আকাশের নীচে আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
ধূলিসাৎ হাজারো ভবন
শুধু তুরস্কেই অন্তত দুই হাজার ৮০০ ভবন ধসে পড়েছে, যার একটি কাহরামানমারাসের এই ভবনটি৷
ছবি: IHA/REUTERS
খালি হাতে উদ্ধারকাজ
ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষিত কর্মীরা৷ ধ্বংসস্তূপের নীচে জীবিতদের সন্ধান করতে থাকেন তারা৷ অনেকেই উদ্ধারের যন্ত্রপাতি ছাড়া খালি হাতেই অনুসন্ধান চালান৷
ছবি: DHA
জীবিতের খোঁজে
তুরস্কে ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি কাহরামানমারাস৷ সেখানে ধসে পড়া ভবনের ভিতরে প্রাণের স্পন্দন আছে কিনা তা বোঝার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন একজন৷
ছবি: Cagla Gurdogan/Reuters
অর্ধশত কম্পন
মূল ভূমিকম্পের পর অন্তত অর্ধশত আফটার শক বা পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা৷ এর মধ্যে সোমবার দুপুরে সবচেয়ে ভয়াবহটি ছিল ৭.৫ মাত্রার৷
ছবি: Sertac Kayar/Reuters
বন্দরে আগুন
ভূমিকম্প আঘাত হানা তুর্কি শহর ইস্কেনবেরুনের সমুদ্র বন্দরে মঙ্গলবার আগুন লাগে৷ এতে বহু কন্টেইনার পুড়ে যায়৷ টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়৷ ভূমিকম্পের কারণে একটির উপর আরেকটি কন্টেইনার উঠে আগুন লেগে যায় বলে জানান স্থানীয় সাংবাদিকরা৷
ছবি: Serdar Ozsoy/Depo Photos via AP/picture alliance
বিধ্বস্ত ইদলিব
ভূমকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ ইদলিব৷ গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়লো দেশটির মানুষ৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ভূমিকম্পের কারণে আরেক দফা চললো ধ্বংসলীলা৷
ছবি: OMAR HAJ KADOUR/AFP
হতভাগা সিরীয়রা
সিরিয়ার এক স্থানীয় সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের সময় ভয়ে বাড়িঘরেই আশ্রয় নেন ইদলিবেব মানুষ৷ রাশিয়ার বিমান হামলায় আগে থেকেই নাজুক বাড়ি-ঘরগুলো দ্রুতই ধসে পড়ে৷ নতুন ভবনগুলোও রেহাই পায়নি৷ পুরো পরিবারশুদ্ধ মানুষ চাপা পড়েন ভবনের নীচে৷’’
ছবি: Omar Albam
উদ্ধারে স্বেচ্ছাসেবকরা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে মানুষকে সহায়তার জন্য গঠিত স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন দ্য হোয়াইট হেলমেটস উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উদ্ধারকাজ শুরু করে৷ জারদানায় জীবিত মানুষের খোঁজ করছেন এই দুইজন৷
ছবি: Ahmad al-Atrash/AFP
উদ্ধার হওয়া শিশু
ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়া বাড়িগুলোর ভিতর থেকে অনেক জীবিতদেরও উদ্ধার করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার তুরস্কের হাতায় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে পাঁচ বছরের এক শিশুকে উদ্ধার করেন এই কর্মীরা৷
ছবি: Umit Bektas/REUTERS
ভেঙে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ভবন
ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও৷ তুরস্কের মাল্টায়া প্রদেশে ১৩ শতকের একটি বিখ্যাত মসজিদ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এদিকে সোমবার তুষার ঝড়ে কর্মীদের পক্ষে উদ্ধার কাজ চালানো আরো কঠিন হয়ে পড়ে৷
ছবি: Volkan Kasik/AA/picture alliance
ইউনেস্কো সাইট
সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত একটি দুর্গের ভিতরে অবস্থিত একটি মসজিদ৷ ভূমিকম্পের আগে ও পরে মিনারের চিত্র দেখুন৷
ছবি: AFP
ন্যাটো ও ইইউর সাহায্য কামনা
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটো ও ইইউর কাছে সহায়তা চেয়েছে তুরস্ক৷ তাতে সাড়া দিয়ে ১৭টি দেশ থেকে উদ্ধারকর্মীর ২০টি দল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই এমনকি ইউক্রেনও তুরস্কের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP
২০ হাজার ছাড়াতে পারে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা অনুযায়ী ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে৷ কর্তৃপক্ষের মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তুরস্ক-সিরিয়া মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷ বিরূপ আবহাওয়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাবে দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করা যাচ্ছে না৷