গ্রিস জানিয়েছে, তারা প্রায় ১০ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর তুরস্ক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছে৷ এদিকে, তুরস্ক বলছে ৭৬ হাজার অভিবাসী এরই মধ্যে সীমান্ত পেরিয়েছে৷ সীমান্তে ‘হাই অ্যালার্ট' জারি করেছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/AA/O. Coban
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালে ইউরোপমুখী শরণার্থীর ঢল নামার পর তাদের আটকাতে তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ওই চুক্তির আওতায় তুরস্ক প্রায় ৩৬ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷
তারপর থেকে ইউরোপের সঙ্গে যে কোনো দরকষাকষিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান নিয়মিতই ‘শরণার্থীদের ছেড়ে' দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন৷ গত বৃহস্পতিবার রাতে সিরিয়ার ইদলিবে তুরস্কের সেনাঘাঁটিতে বাশার আল-আসাদ বাহিনীর হামলায় ৩৩ তুর্কি সেনা নিহতের পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
গত আট বছর ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে৷ তুরস্কের সেনাঘাঁটিতে হামলার পর শুক্রবার এর্দোয়ানের দলের মুখপাত্র ওমর কেলিক বলেন, ‘‘তুরস্কের পক্ষে শরণার্থীদের ‘আর ধরে রাখা সম্ভব না'৷''
এরপরই তারা সীমান্ত খুলে দেয় এবং শরণার্থীদের ঢল নামে৷ শনিবার এক বিবৃতিতে গ্রিস সরকারের এক মুখপাত্র জানান, ১৩ হাজার শরণার্থী তুরস্ক-গ্রিস সীমান্তে জড়ো হয়েছেন৷
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে গ্রিক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলকিভিয়াদিস স্টেফানিস বলেন, ‘‘শনিবার ভোর ছয়টা থেকে থেকে রোববার ভোর ছয়টা পর্যন্ত এভ্রোস অঞ্চলে ৯ হাজার ৯৭২ জন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে৷''
স্টেফানিসের দাবির সঙ্গে অবশ্য তুরস্কের বক্তব্য মিলছে না৷ তারা দাবি করছে, এরই মধ্যে ছিয়াত্তর হাজার অভিবাসী তুরস্ক থেকে গ্রিসে ঢুকে পড়েছে৷
‘‘সকাল ৯:৫৫টা পর্যন্ত এদিরনে অঞ্চল দিয়ে পার হওয়া অভিবাসীর সংখ্যা ছিয়াত্তর হাজার ৩৫৮,'' তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়লু টুইট করেন৷
তবে শনিবার রাত ও রোববার সকালে অনেক অভিবাসী গ্রিসে প্রবেশ করেছেন৷
ডয়চে ভেলের গ্রিস সংবাদদাতা ফ্লোরিয়ান স্মিৎস বলেন, ‘‘এখানে ২২০ শরণার্থী লেসবস উপকূল দিয়ে ঢুকেছেন এবং তাদের একটি ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে৷'' বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকে কমপক্ষে ৫০০ শরণার্থী গ্রিসে ঢুকে পড়েছেন৷ তবে তুরস্কের সীমান্তের কাছে আরো হাজারো মানুষ অপেক্ষায় আছেন৷
ডয়চে ভেলের তুরস্ক সংবাদদাতা জুলিয়া হানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘প্রথমে খবরে শুনলাম সীমান্ত খুলে দেয়া হয়েছে৷ এখন বুঝতে পারছি, এটি একটি রাজনৈতিক খেলা ছাড়া আর কিছু নয়৷''
অন্যদিকে, বুলগেরিয়া জানিয়েছে, তাদের সীমান্ত দিয়ে তুরস্ক থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি৷
এদিকে, ইইউ সীমান্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা ফ্রনটেক্স জানিয়েছে, তারা তুরস্কের কাছে সীমান্তগুলোতে ‘জরুরি সতর্কতা' জারি করেছে৷
জেডএ/এআই (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
সিরিয়ায় কে, কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে৷ মাঝে আইএস-এর কারণে সেই যুদ্ধে বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়েছে৷ কে আসলে কার বিরুদ্ধে লড়ছে?
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
যুদ্ধ যেন শেষই হচ্ছে না
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কাছে দেশের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারান৷ এরপর সেই যুদ্ধে একসময় বিদেশি শক্তিও ঢুকে পড়ে৷
ছবি: picture alliance/abaca/A. Al-Bushy
আসাদের সমর্থক
সিরিয়ার সেনাবাহিনী ‘সিরিয়ান আরব আর্মি’ বা এসএএ পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ আসাদের কাছে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে৷ এছাড়াও ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’সহ আসাদের সমর্থক কয়েকটি বাহিনী এবং রাশিয়া ও ইরান আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Syrian Presidency
তুরস্কের ভূমিকা
ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী দেশ ছিল তুরস্ক৷ এছাড়া আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দিয়ে আসছে দেশটি৷ তবে কুর্দিদের সহায়তা করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, কারণ সিরিয়ার কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের ‘কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি’ পিকেকে-র সম্পর্ক রয়েছে বলে তুরস্কের অভিযোগ৷ ১৯৮৪ সাল থেকে তুর্কি সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে আছে পিকেক৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
রাশিয়ার ভূমিকা
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে রাশিয়া৷ অবশ্য তারও আগে থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছিল দেশটি৷ রাশিয়ার আকাশ হামলায় সিরিয়ার বহু সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিযোগ রয়েছে৷ রাশিয়ার কারণে যুদ্ধের ঢেউ এখন আসাদের অনুকূলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ
২০১৪ সালের শেষ দিকে আইএস-সব অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনকে লক্ষ্য করে আকাশ হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট৷ জার্মানিসহ প্রায় ৫০টি দেশ রয়েছে সেই জোটে৷ আইএসবিরোধী এই জোটের কারণে সিরিয়ায় আইএস-এর পরাজয় হয়েছে৷ জোটকে সহায়তা করেছে কুর্দি ও আরব মিলিশিয়াদের সমন্বয়ে গঠিত ‘সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস’ এসডিএফ৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/A.Brandon
বিদ্রোহীদের কথা
‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র মতো নন-জিহাদি গোষ্ঠীগুলো আসাদের পদত্যাগ চাইছে৷ এরপর একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনেরও দাবি আছে তাদের৷ তবে বেশ কয়েকটি পরাজয়ের পর এই সংগঠনের অনেক সদস্য কট্টরপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে৷
ছবি: Reuters
ইরানের সমর্থন
গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দামেস্ককে কৌশলগত ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান৷ ইরানের সমর্থনপ্রাপ্ত লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হেজবোল্লাহও আসাদ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে৷